
ছবি: সংগৃহীত
সময়ের ধারণা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। আমরা সবাই জানি, সময় একদিকে চলে—যথা, অতীত থেকে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দিকে। কিন্তু কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে এমন একটি ধারণা রয়েছে, যা এই প্রচলিত সময়ের ধারণাকে একেবারে চ্যালেঞ্জ করে। সেটি হলো ‘নেগেটিভ টাইম’, একটি অবিশ্বাস্য এবং রহস্যময় বৈজ্ঞানিক প্যারাডক্স যা প্রথাগত নিয়মের বিপরীতে কাজ করে।
নেগেটিভ টাইম কী?
যদিও আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতায় সময় সবসময় এক দিকেই চলে—অর্থাৎ, ভবিষ্যতের দিকে—কোয়ান্টাম পর্যায়ে একেবারে ভিন্ন নিয়ম কাজ করে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে, বিশেষ করে কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরিতে, এমন কিছু ঘটনা দেখা যায়, যেখানে কণাগুলি সময়ের বিপরীত দিকে, অর্থাৎ অতীতে চলে যেতে পারে। এই ধারণাটি "টাইম রিভার্সাল" নামে পরিচিত, যা কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে একটি পরিচিত তত্ত্ব।
এটি এমন একটি প্যারাডক্স সৃষ্টি করে, যেখানে সময় শুধু একদিকে চলে না, বরং কিছু কণা অতীতের দিকে চলে যেতে পারে। মানে, আমাদের দৃষ্টিকোণে সময়ের গতি যখন ভবিষ্যতের দিকে, তখন সেই একই কণা বা ঘটনার গতি যদি সময়ের বিপরীতে অর্থাৎ অতীতে চলে যায়, তবে কী ঘটবে? এটি হলো নেগেটিভ টাইমের ধারণা।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও টাইম রিভার্সাল
কোয়ান্টাম ফিজিক্সের একটি মৌলিক তত্ত্ব হলো টাইম রিভার্সাল সিমেট্রি। এর মানে হলো, কোয়ান্টাম স্তরে কিছু কণার আচরণ এমনভাবে হতে পারে যে, তাদের গতির পথ এবং সময়ের গতি একে অপরকে বিপরীতভাবে প্রতিস্থাপন করে। সহজ ভাষায়, যদি কোনো কণার গতিপথ বর্তমান সময়ের দিকে চলে, তবে কিছু ক্ষেত্রে সেই কণা উল্টো দিক থেকে, অর্থাৎ অতীতের দিকে চলতে পারে।
এটি এমন একটি বিজ্ঞানী ধারণা, যা পুরোপুরি আমাদের প্রথাগত সময়ের ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যদি সময় অতীতে ফিরে যেতে পারে, তাহলে তা আমাদের মহাবিশ্বের বেশিরভাগ নিয়মকে ভেঙে ফেলবে।
গবেষণা ও প্রমাণ
বিজ্ঞানী ও গবেষকরা কোয়ান্টাম পরীক্ষায় অনেকবার এই টাইম রিভার্সাল তত্ত্ব পরীক্ষা করেছেন। একাধিক পরীক্ষায়, বিশেষত কণার গতিপথ এবং কণার আচরণ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, কিছু কণা এক ধরনের অদ্ভুত গতিপথে চলে, যা সময়ের বিপরীত দিকে চলে যাওয়ার মত মনে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, কোয়ান্টাম কণাগুলোর মধ্যে যেমন ফোটন বা ইলেকট্রন—এগুলো বিশেষ ধরনের কণা, যেগুলোর গতি কখনো কখনো সময়ের বিপরীতেও চলে যেতে পারে। কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, যখন কোনো কণা তার গতিপথ পরিবর্তন করে, তখন সেটি বাস্তবের সময়ের বিপরীতে চলে যায়, যা “নেগেটিভ টাইম” ধারণার বাস্তব প্রমাণ হতে পারে।
বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ:
বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের গবেষণায়, এই তত্ত্বগুলোকে প্রমাণ করার জন্য একাধিক পরীক্ষামূলক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানী রিচার্ড ফেইনম্যান এবং স্টিফেন হকিং এর মতো বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা এই ধরনের কল্পনাপ্রসূত বিষয় নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন। তাদের মতে, যদি ভবিষ্যতে এই নেগেটিভ টাইমের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তা পৃথিবী এবং মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের পুরো ধারণাকে পাল্টে দেবে।
সম্ভাব্য প্রভাব ও ভবিষ্যত
নেগেটিভ টাইমের ধারণা বাস্তবে চলে আসলে, এটি টাইম ট্রাভেল বা সময়ের উল্টো পথে চলা বিষয়ে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। কল্পনা করুন, যদি কোনো দিন মানুষ অতীতে ফিরে যেতে পারে—তবে তা কেমন হতো? আমরা হয়তো নিজের অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করতে পারব, বা অজানা ইতিহাস জানতে পারব।
তবে, নেগেটিভ টাইমের বাস্তবতা শুধুমাত্র কল্পনা নয়; এটি কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব, যা এখনো গবেষণার জন্য খোলা রয়েছে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নেগেটিভ টাইম আমাদের সময়ের ধারণাকে এক নতুন আলোতে দেখতে শেখায়। এটি এক ধরনের বৈজ্ঞানিক রহস্য, যা আমাদের সময়ের বিপরীত দিকে যেতে সক্ষম হতে পারে—অথবা এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, সময় শুধু একদিকে চলে না, বরং এটি বহু দিক দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। বিজ্ঞানী ও গবেষকরা এই বিষয়টি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন, এবং এর ফলস্বরূপ একদিন হয়তো সময়ের নতুন একটি অধ্যায় খুলে যাবে
কানন