
ছবি: সংগৃহীত।
পৃথিবী কি একমাত্র স্থান যেখানে জীবন রয়েছে, নাকি মহাবিশ্বের অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে—এই প্রশ্ন বহু বছর ধরে মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে মহাগ্রন্থ আল কোরআনে পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের বিভিন্ন সৃষ্টি সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছিল, যা সে সময়ের সাধারণ মানুষ এমনকি কোরআনের ব্যাখ্যাকারকেরাও পুরোপুরি বুঝতে পারেননি।
আধুনিক বিজ্ঞান ও মহাবিশ্বে প্রাণের সন্ধান
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে ১০০ বিলিয়নেরও বেশি গ্যালাক্সি এবং একাধিক এক্সোপ্লানেটের সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলোর অবস্থান পৃথিবীর মতো হতে পারে। কিছু গ্রহে পানির উপস্থিতির প্রমাণও পাওয়া গেছে, যা প্রাণের বিকাশের অন্যতম প্রধান উপাদান।
কোরআনের বক্তব্য ও আধুনিক আবিষ্কার
কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী, যেখানে পানি রয়েছে, সেখানে প্রাণের সম্ভাবনা রয়েছে। সূরা তালাকের ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
❝আল্লাহ, যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ এবং এগুলোর অনুরূপ পৃথিবীও…❞
অনেক মুফাসসির (ব্যাখ্যাকারক) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এর অর্থ পৃথিবীর মতো আরও অনেক গ্রহের অস্তিত্ব রয়েছে।
বিজ্ঞানও এখন মাল্টিভার্স থিওরির মাধ্যমে বলছে, আমাদের মহাবিশ্বের বাইরেও অসংখ্য মহাবিশ্ব থাকতে পারে। এক্সোপ্ল্যানেটগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে, এবং কিছু গ্রহে প্রাণের বিকাশের উপযোগী পরিবেশ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বখ্যাত এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর তালিকা
বিজ্ঞানবিষয়ক ওয়েবসাইট Space.com পৃথিবীর মতো দশটি এক্সোপ্ল্যানেটের নাম প্রকাশ করেছে, যেগুলোতে প্রাণের সম্ভাবনা থাকতে পারে:
- কেপলার 69c – পৃথিবী থেকে ২,৭০৭ আলোকবর্ষ দূরে
- কেপলার 452b – পৃথিবী থেকে ১,৪০২ আলোকবর্ষ দূরে
- কেপলার 62f – পৃথিবী থেকে ১,২০৭ আলোকবর্ষ দূরে
- কেপলার 442b – পৃথিবী থেকে ১,১১৫ আলোকবর্ষ দূরে
- কেপলার 22b – পৃথিবী থেকে ৫৮৭ আলোকবর্ষ দূরে
- কেপলার 186f – পৃথিবী থেকে ৫৭০ আলোকবর্ষ দূরে
- কেপলার 1649c – পৃথিবী থেকে ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে
- ট্রাপিস্ট-১e – পৃথিবী থেকে ৩৯ আলোকবর্ষ দূরে
- গ্লিজ 667Cc – পৃথিবী থেকে ২২ আলোকবর্ষ দূরে
- প্রক্সিমা সেন্টাউরি b – পৃথিবী থেকে ৪.২৪ আলোকবর্ষ দূরে
ইসলামী দৃষ্টিকোণ ও হাদিসের বিশ্লেষণ
ইসলামি ব্যাখ্যায়ও ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সূরা শুরার ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
❝তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তাতে ছড়িয়ে দেওয়া জীবজন্তু…❞
বিখ্যাত তাফসিরকারক আল্লামা আলী আসসাবুনী বলেছেন, ভিনগ্রহে প্রাণ থাকতে পারে, তবে সেখানে মানুষের অস্তিত্ব নেই, বরং অন্য ধরনের প্রাণী থাকতে পারে।
রাসূল (সা.)-এর সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) একবার বলেছিলেন,
❝সাতটি পৃথিবী আছে, প্রতিটিতে তোমাদের মতো নবী আছেন, তাদেরও নূহ আছেন, যেমন তোমাদের ছিল, তাদেরও ঈসা ও ইব্রাহিম আছেন…❞
অনেকে এ হাদিসকে দুর্বল মনে করলেও, এটি কোরআনের আয়াতের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হওয়ায় বহু মুহাদ্দিস এটি গ্রহণ করেছেন।
বিজ্ঞান এখনো পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্বের সরাসরি প্রমাণ পায়নি, তবে গবেষণা চলমান রয়েছে। ইসলামী ব্যাখ্যা এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার একত্রে বিবেচনা করলে বোঝা যায়, ভবিষ্যতে ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধান পাওয়া অসম্ভব নয়। হয়তো খুব শিগগিরই বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে নতুন কোনো চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করবেন।
নুসরাত