
ছবি: সংগৃহীত।
মানবদেহের মোট ওজনের সাত থেকে আট শতাংশ রক্ত, যা জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছোটখাট আঘাত থেকে শুরু করে বড় দুর্ঘটনা এবং অস্ত্রোপচারের সময় রক্তক্ষয় ঘটে, যা জীবন সংকট তৈরি করতে পারে। তবে বিশ্বজুড়ে বর্তমানে রক্তের প্রধান উৎস হচ্ছে মানুষ, যার ফলে প্রায়ই রক্তের অভাবে ঘটে দুর্ঘটনা। ভবিষ্যতে এই সংকট কমানোর উদ্দেশ্যেই বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম রক্ত তৈরির গবেষণা চালাচ্ছেন।
রক্ত শরীরের প্রতিটি অংশে অক্সিজেন পৌঁছানো, বর্জ্য পদার্থ অপসারণসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। জরুরি চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার এবং রক্তপাতের ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম রক্ত তৈরির বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই গবেষণা শুধু রক্তের সংকট কমাবে না, চিকিৎসা জগতে নতুন এক মাইলফলকও উন্মোচন করবে।
কিভাবে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম রক্ত?
কৃত্রিম রক্ত বলতে মূলত সিন্থেটিক ও ল্যাবে উৎপাদিত রক্তকে বোঝানো হয়। এই দুই ধরনের মধ্যে রয়েছে বিশাল পার্থক্য।
সিন্থেটিক ব্লাড: এটি সম্পূর্ণ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি, যা মানবদেহের রক্তের বিভিন্ন উপাদানকে অনুকরণ করে কাজ সম্পাদন করে। এটি অক্সিজেন পরিবহন এবং ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাঁধার মতো কাজ করতে পারে। মূলত জরুরি চিকিৎসা এবং সামরিক বাহিনীর জন্য এই ধরনের রক্ত তৈরির কাজ চলছে।
ল্যাবে উৎপাদিত রক্ত: বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মানুষের লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই রক্ত তৈরি করছেন। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের অধ্যাপক সেড্রিক গেবার্ট জানান, গবেষকরা হেমাটোপোয়েটিক স্টেম সেল ব্যবহার করছেন, যা থেকে লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং প্লাটেলেট তৈরি করা সম্ভব।
এই স্টেম সেলগুলো মানবদেহের হাড়ের মজ্জা থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং লাল রক্তকণিকায় রূপান্তরের জন্য নিয়ন্ত্রিত ল্যাবে বিশেষ উপাদানের সংস্পর্শে আনা হয়, যা কোষের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কৃত্রিম রক্তের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে ল্যাবে উৎপাদিত রক্ত প্রথমবারের মতো মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়েছিল, যা অনেকটাই সফল হয়। তবে রক্ত মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হওয়ায় বাজারে আসার আগে এই কৃত্রিম রক্তের আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই গবেষণা সফল হলে ভবিষ্যতে রক্তের অভাবজনিত সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় এটি এক বিপ্লব আনবে।
নুসরাত