ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৯ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

মহাকাশে সোনা ও হীরার ভাণ্ডার, কোন গ্রহে লুকিয়ে আছে মূল্যবান ধাতু?

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ৭ মার্চ ২০২৫

মহাকাশে সোনা ও হীরার ভাণ্ডার, কোন গ্রহে লুকিয়ে আছে মূল্যবান ধাতু?

ছবি: সংগৃহীত

 

মহাকাশে আকর্ষণীয় ও রহস্যময় অনেক কিছু রয়েছে, তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্যগুলোর একটি হলো গ্রহ বা গ্রহাণুর গঠনে মূল্যবান ধাতুর উপস্থিতি। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে মহাকাশে এমন কিছু গ্রহ ও গ্রহাণু রয়েছে যেখানে সোনা, হীরা এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর বিশাল ভাণ্ডার লুকিয়ে থাকতে পারে।

৫৫ ক্যানক্রি ই: হীরক গ্রহ

৫৫ ক্যানক্রি ই হলো একটি সুপার-আর্থ, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই গ্রহটি কার্বন-সমৃদ্ধ এবং বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে এটি মূলত হীরক ও গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এই গ্রহের পৃষ্ঠের একটি বিশাল অংশ বিশুদ্ধ হীরা দিয়ে গঠিত হতে পারে। এই গ্রহটি এতই মূল্যবান যে এর সম্পদের মূল্য পৃথিবীর মোট অর্থনৈতিক মূল্যকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এই গ্রহটি তার নিকটবর্তী নক্ষত্র ৫৫ ক্যানক্রি এ এর চারপাশে এত দ্রুত প্রদক্ষিণ করে যে এখানে এক বছর পৃথিবীর মাত্র ১৮ ঘণ্টার সমান। চরম উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপে থাকা কার্বন ক্রমাগত হীরাতে রূপান্তরিত হতে পারে, যা একে মহাবিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান গ্রহগুলোর একটি করে তুলেছে।

আমাদের সৌরজগতের একটি গ্রহাণু, ১৬ সাইক, বৈজ্ঞানিকদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে। এটি মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যে অবস্থিত এবং প্রায় সম্পূর্ণভাবে লোহা, নিকেল ও সম্ভবত স্বর্ণ দিয়ে গঠিত বলে ধারণা করা হয়। গবেষকরা অনুমান করেন, এই গ্রহাণুর সম্পদের মূল্য ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি হতে পারে।

১৬ সাইক গ্রহাণু নিয়ে নাসা একটি মিশন পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে, যার মাধ্যমে এটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। যদি ভবিষ্যতে মহাকাশ খনন সম্ভব হয়, তবে এই ধরনের গ্রহাণু থেকে মূল্যবান ধাতু সংগ্রহ করা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে।

শনি ও বৃহস্পতির চাঁদেও থাকতে পারে মূল্যবান সম্পদ

বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, শনি ও বৃহস্পতির চাঁদগুলোর বরফের নিচে থাকা উচ্চ চাপের পরিবেশে হীরার অস্তিত্ব থাকতে পারে। বিশেষ করে, বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা এবং শনির উপগ্রহ এনসেলাদাসের ভূগর্ভস্থ সমুদ্র ও ভূত্বকের নিচে কঠিন কার্বন গঠিত হীরার স্তর থাকতে পারে।

মহাকাশ খনন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

এই গ্রহ এবং গ্রহাণুগুলোর অস্তিত্ব মহাকাশ খননের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছে। ভবিষ্যতে যদি মানুষ মহাকাশ খননের প্রযুক্তি উন্নত করতে পারে, তবে পৃথিবীর মূল্যবান সম্পদের ওপর নির্ভরতা কমে যেতে পারে। তবে, এটি বাস্তবে রূপ দিতে গেলে অনেক প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

মহাবিশ্বে মূল্যবান ধাতুর উপস্থিতি আমাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। ৫৫ ক্যানক্রি ই-এর মতো হীরার গ্রহ, ১৬ সাইক-এর মতো ধাতব গ্রহাণু এবং বৃহস্পতি ও শনির চাঁদগুলোর সম্ভাব্য খনিজ সম্পদ ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। একদিন হয়তো মানুষ মহাকাশে খনন করে এই মূল্যবান সম্পদ ব্যবহার করতে পারবে, যা পৃথিবীর অর্থনীতিকে আমূল বদলে দিতে পারে।

কানন

×