ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১

চাঁদে ৪জি নেটওয়ার্ক স্থাপন, ব্যবহার হবে যেভাবে

প্রকাশিত: ০২:৩৩, ৫ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০২:৪০, ৫ মার্চ ২০২৫

চাঁদে ৪জি নেটওয়ার্ক স্থাপন, ব্যবহার হবে যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত।

চাঁদে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের স্বপ্ন এবার বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। নোকিয়া ও ইনটুইটিভ মেশিনস যৌথভাবে চাঁদের বুকে প্রথমবারের মতো ফোরজি/এলটিই নেটওয়ার্ক স্থাপনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এই প্রকল্পটি ইনটুইটিভ মেশিনসের আইএম-২ মিশনের অংশ, যা ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় রয়েছে।

আইএম-২ মিশনের মূল লক্ষ্য চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অবতরণ করে রোভার ও 'হপার' মোতায়েন করা এবং একটি যোগাযোগ উপগ্রহ স্থাপন করা। নোকিয়ার ‘লুনার সারফেস কমিউনিকেশন সিস্টেম’ অ্যাথেনা নামক ল্যান্ডারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই নেটওয়ার্কটি অ্যাথেনার কার্বন-কোম্পোজিট প্যানেলে সংযোজিত, যা মহাকাশের কঠোর পরিবেশ সহ্য করতে বিশেষ থার্মাল প্রোটেকশন সিস্টেম দ্বারা সুরক্ষিত।

এখন পর্যন্ত মহাকাশযানগুলোর মধ্যে যোগাযোগের জন্য মূলত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও, ভবিষ্যতের আর্টেমিস কর্মসূচির জন্য আরও উন্নত নেটওয়ার্ক প্রয়োজন। নোকিয়া বেল ল্যাবস সলিউশনস রিসার্চের প্রেসিডেন্ট থিয়েরি ক্লেইন জানান, ‘আমরা দেখাতে চাই যে সেলুলার প্রযুক্তি চাঁদ ও মঙ্গলের অভিযানের জন্য নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা দিতে পারে।’

এই মিশনের আওতায় দুটি বিশেষ চন্দ্রযান মোতায়েন করা হবে:

1. মাইক্রো-নোভা হপার (গ্রেস): ইনটুইটিভ মেশিনসের তৈরি এই যান চাঁদের চিরস্থায়ী ছায়াচ্ছন্ন গহ্বর অন্বেষণ করে পানি বরফ শনাক্ত করার চেষ্টা করবে।


2. মোবাইল অটোনোমাস প্রসপেক্টিং প্ল্যাটফর্ম রোভার: লুনার আউটপোস্টের নির্মিত এই রোভার চাঁদের পৃষ্ঠের মানচিত্র তৈরি ও পরিবেশগত তথ্য সংগ্রহ করবে।

অবতরণের পরপরই এই দুটি যান নোকিয়ার ফোরজি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভিডিও স্ট্রিমিং, টেলিমেট্রি পাঠানো এবং পৃথিবীতে তথ্য প্রেরণ করবে।

এই মিশনের কার্যক্ষমতা বেশ স্বল্পস্থায়ী হতে পারে, কারণ চন্দ্ররাত্রির তীব্র ঠাণ্ডার ফলে রোভার ও হপার কয়েকদিনের মধ্যে বিকল হয়ে যেতে পারে। তবে, নোকিয়া ও ইনটুইটিভ মেশিনস একে ভবিষ্যৎ অভিযানের পরীক্ষামূলক ধাপ হিসেবে দেখছে। ভবিষ্যতে নোকিয়া আর্টেমিস বেসের জন্য আরও বিস্তৃত ফোরজি বা ফাইভজি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে।

ফোরজি নেটওয়ার্ক স্থাপনের বিষয়ে কিছু বিজ্ঞানী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এলটিই প্রযুক্তির ফ্রিকোয়েন্সি (৭০০ মেগাহার্জ থেকে ২.৬ গিগাহার্জ) আংশিকভাবে রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য সংরক্ষিত ব্যান্ডের সঙ্গে মিলে যায়, যা মহাজাগতিক পর্যবেক্ষণে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। ন্যাশনাল রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি অবজারভেটরির স্পেকট্রাম ম্যানেজার হার্ভে লিস্টজ জানান, ‘চাঁদে একটি পূর্ণাঙ্গ সেল নেটওয়ার্ক থাকলে তা রাতের আকাশে বাড়তি শব্দ সৃষ্টি করতে পারে, যা টেলিস্কোপের সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে সমস্যা তৈরি করবে।’

এছাড়া, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের নিয়ম অনুসারে চাঁদে ফোরজি নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য নতুন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড নির্ধারণ করতে হবে। আপাতত নোকিয়া আইএম-২ মিশনের জন্য বিশেষ অনুমোদন পেয়েছে, তবে স্থায়ী নেটওয়ার্কের জন্য নতুন ফ্রিকোয়েন্সি অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

আইএম-২ মিশন চাঁদের গহ্বরে পানির অস্তিত্ব শনাক্ত করা, পৃষ্ঠের ছবি ও পরিবেশগত তথ্য সংগ্রহ এবং ভবিষ্যৎ অভিযানের জন্য প্রযুক্তিগত পরীক্ষা চালানোর গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দেবে। সফল হলে এটি চাঁদে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার পথ সুগম করবে। নোকিয়া জানায়, যদি কোনো সাধারণ স্মার্টফোন মহাকাশ ভ্রমণ ও চাঁদের প্রতিকূল পরিবেশ সহ্য করতে পারে, তবে সেটি এই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়ে ব্যবহার করা সম্ভব হবে—তবে এর জন্য বিশেষ ‘লুনার সিম কার্ড’ প্রয়োজন হবে।

নোকিয়া ও ইনটুইটিভ মেশিনস আশা করছে, আইএম-২ মিশনের সফলতা চাঁদে দীর্ঘমেয়াদী মানব উপস্থিতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি একটি চন্দ্র অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপনে ভূমিকা রাখবে।

সায়মা ইসলাম

×