
আজকের যুগে প্রযুক্তি প্রতিদিন নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছে, আর এই পরিবর্তনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)। সম্প্রতি, একটি মার্ডার কেস সমাধানে AI-র ভূমিকা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, যা আমাদের প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। AI এখন একাধিক ক্ষেত্রের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন শিল্পে।
১৯ বছর পর হত্যার রহস্য উন্মোচন
২০০৬ সালে কেরালার কল্যাণ জেলার আঁচাল টাউনে রঞ্জিনী নামে এক যুবতী এবং তার দুই সন্তানকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। তাদের হত্যাকারী ছিলেন ভারতীয় আর্মির দুই অফিসার, দেবিল কুমার এবং রাজেশ। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে এই মার্ডার কেসের তদন্ত চললেও কোনও সুরাহা আসেনি। তবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রযুক্তির মাধ্যমে, অর্থাৎ AI-এর সাহায্যে, তদন্ত নতুন মোড় নেয়।
কেরালা পুলিশের এডিজিপি মনোজ আব্রাহাম যখন এই কেসটি পুনরায় খতিয়ে দেখতে শুরু করেন, তখন তিনি AI প্রযুক্তি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। AI সিস্টেমের মাধ্যমে পুরনো ছবির উপর ভিত্তি করে নতুন ছবি তৈরি করা হয়। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় গভীর স্ক্যানিং শুরু করা হয়, এবং প্রায় চার মাস পর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে মিল পাওয়া যায় খুনিদের। এর ফলে ১৯ বছর পর, AI এর সাহায্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয় এবং দুই খুনিকে গ্রেফতার করা হয়।
এটি একটি উদাহরণ যে কিভাবে AI আজকাল অপরাধের সমাধানে সহায়তা করছে। AI শুধু ভিডিও বা ছবি বিশ্লেষণ করতে পারছে না, তা মানুষের জন্য অপরাধের তদন্তকে আরো দ্রুত ও নির্ভুল করে তুলতে সক্ষম। এই কেসটি প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তি কোনো অপরাধের তদন্তে সহায়ক হতে পারে এবং এর মাধ্যমে বহু পুরনো কেসের সমাধান সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, AI-র সাহায্যে সঠিক প্রমাণ এবং ডেটা বিশ্লেষণ করা সহজ হয়েছে, যা পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য অপরাধ তদন্তে বিশেষ সুবিধা নিয়ে এসেছে। মার্ডার কেসের মতো জটিল পরিস্থিতিতেও, AI-এর ব্যবহারের ফলে তদন্তকারীরা দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছেন।
উদাহরণস্বরূপ, AI এখন ছবি বা ভিডিও বিশ্লেষণ করতে পারে এবং সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অনেক সময় অপরাধের চিহ্ন দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায়, যা মানবিক সীমাবদ্ধতার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
এআই এখন আর শুধু প্রযুক্তি বা বিজ্ঞানী মহলে সীমাবদ্ধ নেই। এআই সিস্টেম বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবহন, কৃষি, এমনকি বিনোদন শিল্পেও AI দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে। যেমন, শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যক্তিগতকৃত পাঠ পরিকল্পনা তৈরিতে AI ব্যবহৃত হচ্ছে, স্বাস্থ্যখাতে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে AI বিশেষ সাহায্য করছে, এবং কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে AI প্রযুক্তি কাজে লাগানো হচ্ছে।
এআই-এর বিস্তারের ফলে মানবসম্পদ কমছে না, বরং নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। যদিও এআই অনেক সময় কঠিন কাজগুলো দ্রুত করতে সক্ষম, তবুও মানুষের মেধা এবং সৃজনশীলতা এখনো অপরিহার্য। তাই প্রযুক্তির এই অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও সচেতন হতে হবে যে, AI আমাদের কাজের সহযোগী, প্রতিপক্ষ নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা কেন্দ্র, ব্যবসা-বাণিজ্য, এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নতি সাধন করা হচ্ছে। যদিও এর কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে এর সম্ভাবনা অগণিত। এমন একটি প্রযুক্তি যা আমাদের জীবনযাত্রা উন্নত করতে, ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত রাখতে এবং সমাজে আরও সুষম উন্নয়ন আনতে সাহায্য করছে।
এভাবেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শক্তি আমাদের জীবনের প্রতিটি খাতে ছড়িয়ে পড়ছে, যা আগামী দিনে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
সূত্র:https://tinyurl.com/ydhn42j4
আফরোজা