
ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তথাকথিত "চিরস্থায়ী রাসায়নিক" বা PFAS মানবদেহের জিনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীরা ১১টি জিন শনাক্ত করেছেন, যেগুলো এই ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে।
পানীয় জল থেকে শুরু করে খাদ্যের প্যাকেজিং পর্যন্ত বিভিন্ন সামগ্রীতে ব্যবহৃত এই রাসায়নিক পদার্থ বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
PFAS, যার পূর্ণরূপ "Per- and Poly-Fluorinated Alkyl Substances," দৈনন্দিন জীবনের বহু পণ্যে ব্যবহৃত হয়। নন-স্টিক প্যান, জল ও দাগ প্রতিরোধী বস্তু, রঙ, কার্পেট এবং পোশাকের মতো জিনিসে এর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো শুধু পরিবেশেই নয়, মানবদেহেও দীর্ঘস্থায়ীভাবে জমতে পারে। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিন, বিশেষত স্নায়ুবিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য দায়ী জিনগুলো PFAS-এর সংস্পর্শে এলে তাদের কার্যক্রম পরিবর্তিত হয়।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ভবিষ্যতে এই জিনগুলো PFAS-জনিত স্নায়ুবিক বিষক্রিয়া নির্ণয়ের জন্য সম্ভাব্য চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, PFAS-এর বিভিন্ন ধরনের যৌগ বিভিন্ন জিনের ওপর ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। যেহেতু এই রাসায়নিক পদার্থ রক্ত-মস্তিষ্ক বাধা (Blood-Brain Barrier) অতিক্রম করতে পারে, এটি মস্তিষ্কে জমে এবং স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণাটি PFAS-এর জটিল প্রভাব সম্পর্কে নতুন তথ্য উন্মোচন করেছে, যা মানুষের জিনগত কার্যক্রমের ওপর এর সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করতে সহায়ক হতে পারে।
PFAS-এর কারণে সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, লিভার ক্যান্সার এবং থাইরয়েডের সমস্যার মতো জটিলতা। এসব ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে অনেক দেশ ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পণ্যে PFAS ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ বা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে।
তবে আশার কথা, বিজ্ঞানীরা এই ক্ষতিকর রাসায়নিক ধ্বংস করার একটি সম্ভাব্য উপায়ের সন্ধান পেয়েছেন। পর্তুগালের এক দূষিত শিল্প এলাকায় পাওয়া ‘এফ-১১’ নামের ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিকভাবে PFAS ধ্বংস করতে সক্ষম বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
এই ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত দূষিত পরিবেশে টিকে থাকতে পারে এবং আশেপাশের রাসায়নিক ও দূষণকারী পদার্থকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আবিষ্কার PFAS দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। তবে এখনই এটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
PFAS-এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এবং এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নতুন সম্ভাবনা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
সূত্র: ন্যাচারাল রিসোর্সেস ডিফেন্স কাউন্সিল
এম.কে.