ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

২০৬০ সালই কী পৃথিবীর ধ্বংসের বছর?

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০০:২৯, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২০৬০ সালই কী পৃথিবীর ধ্বংসের বছর?

ছবি: সংগৃহিত

বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম। গতি ও মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের জনক হিসেবে পরিচিত এই বিজ্ঞানী ১৭০৪ সালে এক চিঠিতে পৃথিবীর সম্ভাব্য শেষ সময় নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। নিউটনের গণনার ভিত্তিতে ২০৬০ সালকে পৃথিবীর ধ্বংসের বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

নিউটন ছিলেন ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেলের গভীর অধ্যয়নে আগ্রহী। তিনি বাইবেলের বই "ড্যানিয়েল" ও "রেভেলেশন" থেকে বিভিন্ন সংখ্যা ও সময়কাল নিয়ে গণিত ব্যবহার করে অনুমান করেছিলেন যে ২০৬০ সালে মানব সভ্যতার সমাপ্তি ঘটতে পারে। এই হিসাব করতে গিয়ে তিনি ১২৬০, ১২৯০, ১৩৩৫ ও ২৩৩০ দিনের গণনা ব্যবহার করেছিলেন।

কানাডার কিংস কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন ডি স্নোবেলেনের মতে, নিউটন তার এই হিসাব করতে জটিল ক্যালকুলাস বা উচ্চতর গণিতের ব্যবহার করেননি; বরং সাধারণ যোগ-বিয়োগ ব্যবহার করেছেন। তবে তিনি কখনো নিশ্চিতভাবে বলেননি যে ২০৬০ সালই পৃথিবীর শেষ সময় হবে, বরং অযথা ভবিষ্যদ্বাণী বন্ধ করতেই তিনি এই সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করেছিলেন।

একজন বিজ্ঞানী হয়েও নিউটন ছিলেন ধর্ম ও বিজ্ঞানের সমন্বয়ের পক্ষে। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতি ও ধর্ম একে অপরের বিপরীত নয়, বরং একসঙ্গে কাজ করে। তার গবেষণার একটি বড় অংশ ছিল ধর্মীয় গ্রন্থের গাণিতিক বিশ্লেষণ।

আধুনিক বিজ্ঞানীরা নিউটনের এই ভবিষ্যদ্বাণীকে নিছক ঐতিহাসিক কৌতূহল বলে মনে করেন। বিজ্ঞানভিত্তিক আবহাওয়া পরিবর্তন, মহাজাগতিক সংঘর্ষ বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক কারণ বিশ্লেষণ করলে ২০৬০ সালে পৃথিবীর ধ্বংসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায় না।

অন্যদিকে, নিউটন নিজেও সরাসরি বলেননি যে ২০৬০ সালেই নিশ্চিতভাবে পৃথিবীর সমাপ্তি ঘটবে। বরং তিনি চেয়েছিলেন অযথা ভীতি ছড়ানো বন্ধ করতে।

নিউটনের ২০৬০ সালের ভবিষ্যদ্বাণী মূলত বাইবেল ও ধর্মীয় ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল, যা আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে এটি বিজ্ঞান ও ধর্মের সংযোগ বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতের রহস্য উন্মোচনের চেয়ে বর্তমানকে রক্ষা করাই মানুষের আসল দায়িত্ব।

ইসরাত জাহান

×