![মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় মস্তিষ্ক থেকে, না হৃদপিন্ড থেকে? মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় মস্তিষ্ক থেকে, না হৃদপিন্ড থেকে?](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/13-80-2502111630.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
কানাডার মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর জন এন্ড্রিউ আরমার সম্প্রতি হৃদপিণ্ডের মস্তিষ্ক সম্পর্কিত তথ্য আবিষ্কার করেছেন, যা আমাদের ধারণা পরিবর্তন করেছে। তিনি আবিষ্কার করেছেন যে হৃদপিণ্ডের একটি স্বতন্ত্র স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে, যা মস্তিষ্কের মতো তথ্য গ্রহণ ও প্রক্রিয়া করতে পারে। তিনি এটিকে "হৃদপিণ্ডের মস্তিষ্ক" বা "হৃদপিণ্ডের নিউরাল নেটওয়ার্ক" হিসেবে উল্লেখ করেন। হৃদপিণ্ডে প্রায় ৪০,০০০ স্নায়ু কোষ (নিউরন) থাকে, যা মস্তিষ্কের নিউরনের মতোই কাজ করতে সক্ষম। এটি এমন একটি সিস্টেম, যা শারীরিকভাবে একে অপরের সাথে সংযুক্ত এবং বিপদগ্রস্ত বা বিশেষ পরিস্থিতিতে শরীরের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আধুনিক বিজ্ঞানে আমরা জানি, হৃদপিণ্ডের কিছু বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, যেমন এটি আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন করে, তবে কুরআনে হৃদপিণ্ডের আরও গভীরতা এবং সম্পর্ক রয়েছে মানুষের অনুভূতি, চিন্তা, এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে। বিশেষ করে, কুরআনে হৃদপিণ্ডের মস্তিষ্ক এর মতো কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় যা আজকের বিজ্ঞান অনুসারে সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
"আল্লাহ তাদের হৃদয়কে অভিজ্ঞানদানে পূর্ণ করেন, যদি তারা সত্যকে গ্রহণ করে না" (সূরা আল-আনফাল, ৮: ২৪)
"তারা কি পৃথিবীতে চলাফেরা করে না, যাতে তাদের হৃদয় চিন্তা করতে পারে?" (সূরা হজ, ২২: ৪৬)
এই আয়াতগুলি পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত করে যে, মানুষের চিন্তা এবং অনুভূতিগুলি শুধুমাত্র মস্তিষ্কে নয়, বরং হৃদপিণ্ডের সাথে সম্পর্কিত। আল্লাহ এখানে হৃদপিণ্ডের উপর গভীর মনোযোগ দিতে বলেছেন, যা আজকের যুগে গবেষণায় দেখা গেছে যে হৃদপিণ্ডে কিছু মস্তিষ্কের মতো কার্যাবলী ঘটে।
হৃদপিণ্ডে এই স্নায়ুতন্ত্র মানবিক অনুভূতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারে এবং এটি স্নায়ু সিস্টেমের মধ্যে নির্দিষ্ট সংকেত পাঠায়। আমাদের মস্তিষ্কের পাশাপাশি হৃদপিণ্ডের কার্যক্রমও প্রভাবিত হতে পারে এবং কিছু সিদ্ধান্ত হৃদপিণ্ডের অনুভূতির উপর নির্ভরশীল হতে পারে।
যখন আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিই, আমাদের মস্তিষ্ক এবং হৃদপিণ্ড একসাথে কাজ করে। মস্তিষ্ক সচেতন চিন্তা ও বিশ্লেষণ করে, তবে হৃদপিণ্ড আবেগ, অনুভূতি এবং অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা প্রভাবিত হয়। অনেক সময় আমরা এমন সিদ্ধান্ত নি, যা আমাদের "হৃদয়ের অনুভূতি" এর উপর ভিত্তি করে হয়, যা পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় মস্তিষ্কের চিন্তা ও যুক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে, হৃদপিণ্ডের প্রতিক্রিয়া আমাদের মস্তিষ্কের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভয়, আনন্দ বা দুঃখের মতো অনুভূতিগুলি যখন শক্তিশালী হয়, তখন হৃদপিণ্ডের অবস্থাও পরিবর্তিত হয়, যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে।
মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া সাধারণত মস্তিষ্ক থেকে শুরু হয়, তবে হৃদপিণ্ডের অনুভূতি বা আন্তঃঅনুভূতি এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানুষ যখন গভীর অনুভূতির মধ্যে থাকে, তখন হৃদপিণ্ডের প্রতিক্রিয়া মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে অতিরিক্ত প্রভাবিত করতে পারে। এর মানে হলো যে, হৃদপিণ্ড একটি মস্তিষ্কের মতো কাজ করতে পারে, বিশেষত যখন এটি আবেগীয় সিদ্ধান্ত নিতে আসে।
কুরআন ইতিমধ্যেই ১৪০০ বছর আগে হৃদপিণ্ডের গুরুত্ব এবং এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য প্রদান করেছে যা আধুনিক বিজ্ঞানে এখন নিশ্চিত হয়েছে। হৃদপিণ্ডের নিজস্ব স্নায়ুতন্ত্র এবং এর সাথে সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া মানবিক অনুভূতি ও যুক্তির মিলিত কাজের প্রতিফলন। এই বিস্ময়কর তথ্য কুরআনের এক গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত দিক, যা আজকের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে পরিণত হয়েছে।
মুহাম্মদ ওমর ফারুক