ছবি: সংগৃহীত।
আজকাল আমাদের জীবন থেকে স্মার্টফোন একেবারে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গেছে। এটা শুধু যোগাযোগের একটি মাধ্যম নয়, বরং কাজকর্ম, বিনোদন, শপিং, ছবি তোলা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার—সব কিছুতেই ফোনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই নতুন ফোন কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন, যাতে আপনার বিনিয়োগ সঠিকভাবে কাজে আসে এবং আপনি সন্তুষ্ট থাকতে পারেন।
নতুন ফোন কেনার জন্য বাজারে প্রতিদিন নিত্যনতুন মডেল এবং ব্র্যান্ড আসছে, তবে এইসব ফোনের মধ্যে থেকে সঠিকটি বাছাই করা হতে পারে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই কিছু বিশেষ বিষয় মাথায় রেখে ফোন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কোন কোন বিষয়গুলো আপনাকে সঠিক ফোন বেছে নিতে সাহায্য করবে।
নতুন ফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত:
১. বাজেট
ফোন কেনার আগে প্রথমেই আপনাকে আপনার বাজেট নির্ধারণ করতে হবে। বাজারে বিভিন্ন দামের ফোন রয়েছে, তাই আপনার বাজেট অনুযায়ী সেরা ফোনটি বেছে নিন। খুব বেশি দামি ফোন কিনতে চাইলে নিশ্চিত করুন যে আপনি সেই ফিচারগুলো ব্যবহার করবেন, অন্যথায় বাজেট কম রাখাই ভালো।
২. প্রসেসর ও র্যাম
ফোনের প্রসেসর এবং র্যাম ফোনের কার্যক্ষমতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি আপনি গেম খেলতে পছন্দ করেন বা মাল্টিটাস্কিংয়ের কাজ করতে চান, তবে শক্তিশালী প্রসেসর (যেমন Snapdragon, MediaTek Dimensity) এবং কমপক্ষে ৬জিবি র্যাম বেছে নেওয়া উচিত।
৩. ব্যাটারি লাইফ
ফোনের ব্যাটারি লাইফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন ফোন বেছে নিন যার ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ৪,০০০ mAh বা তার বেশি। এটি আপনার ফোনকে দীর্ঘ সময় চলতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে যদি আপনি দিনের বেশিরভাগ সময় ফোন ব্যবহার করেন।
৪. ক্যামেরা
আজকাল স্মার্টফোনের ক্যামেরা এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। যদি আপনি ফটোগ্রাফি বা সেলফি তোলার শখ রাখেন, তবে ফোনের ক্যামেরার রেজোলিউশন, সেন্সর এবং অ্যাপারচার সম্পর্কে জানুন। রিয়ার ক্যামেরা কমপক্ষে ১২MP হতে পারে এবং সেলফি ক্যামেরার জন্য ৮MP বা তার বেশি ভালো হবে।
৫. স্টোরেজ
ফোনের স্টোরেজের পরিমাণও গুরুত্বপূর্ণ। ৬৪GB বা ১২৮GB স্টোরেজ ফোনে সাধারণত ভালো হবে, তবে যদি আপনি বেশি ভিডিও, ছবি বা অ্যাপ রাখতে চান, তাহলে ২৫৬GB বা তার বেশি স্টোরেজ বেছে নিতে পারেন। যদি ফোনে মাইক্রোSD কার্ড স্লট থাকে, তবে স্টোরেজ বাড়ানো সহজ হবে।
৬. স্ক্রিন সাইজ এবং ডিসপ্লে
ফোনের স্ক্রিন সাইজ এবং ডিসপ্লে কোয়ালিটি (IPS LCD, AMOLED, বা OLED) আপনার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা বাড়াতে সাহায্য করবে। বড় স্ক্রিনের জন্য ৬.৫ ইঞ্চি বা তার বেশি সাইজ বেছে নিন। AMOLED বা OLED ডিসপ্লে, যেখানে কালো রঙ গভীর ও জীবন্ত দেখায়, সেটি ভিডিও দেখার জন্য উপযুক্ত।
৭. অপারেটিং সিস্টেম
ফোনের অপারেটিং সিস্টেমও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অধিকাংশ ফোনেই অ্যান্ড্রয়েড অথবা iOS পাওয়া যায়। আপনার প্রেফারেন্স অনুযায়ী, অ্যান্ড্রয়েড ফোন বা অ্যাপল আইফোন বেছে নিন। যেহেতু অ্যান্ড্রয়েডের বিভিন্ন ভার্সন এবং কাস্টম ইউজার ইন্টারফেস আছে, তাই তারও খোঁজ নিন।
৮. বিল্ড কোয়ালিটি
ফোনের বিল্ড কোয়ালিটি বা ডিজাইন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। এখন অনেক ফোনে গ্লাস বা মেটাল ফিনিশিং থাকে যা ফোনের এক্সটেরিয়র সুন্দর দেখায় এবং দীর্ঘস্থায়ীও হয়।
৯. সফটওয়্যার আপডেট ও সাপোর্ট
ফোনটি কত দিন পর্যন্ত সফটওয়্যার আপডেট পাবে, সেটা জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। এমন ফোন বেছে নিন, যা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সফটওয়্যার আপডেটের সাপোর্ট দেয়, বিশেষ করে নিরাপত্তা আপডেটগুলোর জন্য।
১০. ব্র্যান্ড এবং রিভিউ
অবশ্যই ফোনের ব্র্যান্ড ও ব্যবহারকারীদের রিভিউ দেখুন। ভালো ব্র্যান্ডের ফোনের গুণগত মান সাধারণত উচ্চ থাকে এবং পরবর্তী সময়ে কোনো সমস্যায় পড়লে সাপোর্ট পাওয়া সহজ হয়।
নতুন ফোন কেনার আগে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিলে আপনি সঠিক ফোন বেছে নিতে পারবেন যা আপনার প্রয়োজন ও বাজেটের সাথে মানানসই হবে। স্মার্টফোন একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারযোগ্য গ্যাজেট, তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিন এবং ভবিষ্যতে কোনো রকম অসুবিধার সম্মুখীন হবেন না।
নুসরাত