ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

ডিপসিক ব্যবহার কতটুকু নিরাপদ?

প্রকাশিত: ০০:৪২, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

ডিপসিক ব্যবহার কতটুকু নিরাপদ?

ছবি: সংগৃহীত

প্রযুক্তি দুনিয়ায় সম্প্রতি সবচেয়ে আলোচিত নাম হয়ে উঠেছে চীনের এআই মডেল ‘ডিপসিক’। বাজারে আসার পর থেকেই এটি চ্যাটজিপিটি, জেমিনি ও ক্লডের মতো এআই মডেলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, ডিপসিক ইতোমধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর হাংজুতে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ডিপসিক। লিয়াং ওয়েনফ্যাং নামের একজন উদ্যোক্তা তার হেজ ফান্ডের বিনিয়োগের মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি ডিপসিকের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উন্মুক্ত হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই এটি চ্যাটজিপিটির তুলনায় অনেক বেশি ডাউনলোড হতে থাকে। এমনকি, অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে এটি সর্বোচ্চ রেটিং প্রাপ্ত ফ্রি অ্যাপ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

তবে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি কিছু ব্যবহারকারী সাইন আপ করতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, এই এআই প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ডিপসিকের সাশ্রয়ী মূল্যের মডেল এবং ওপেন-সোর্স ভিত্তিক হওয়ায় এটি তথ্য নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

ডিপসিক মূলত কম খরচে উন্নত এআই প্রযুক্তি প্রদান করছে। এটি প্রশিক্ষণ ও পরিচালনার জন্য নতুন উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, যার ফলে মেটা ও ওপেনএআই-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ব্যয় অনেক কম হয়েছে। ডেভেলপাররা সহজেই এর ওপেন-সোর্স কোড ব্যবহার করে নিজেদের প্রজেক্টে সংযুক্ত করতে পারছেন। তবে এটিই মূলত একটি বড় উদ্বেগের কারণ। কারণ ওপেন-সোর্স ভিত্তিক মডেলগুলোর ক্ষেত্রে ডেটা সুরক্ষা এবং ব্যবহারকারীর তথ্য গোপনীয়তা বজায় রাখা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

ডিপসিকের উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি বাজারে বড় প্রভাব ফেলেছে। এনভিডিয়া, মাইক্রোসফট এবং মেটার মতো বড় বড় কোম্পানির শেয়ারমূল্য ইতোমধ্যেই নিম্নমুখী হয়েছে। এনভিডিয়ার বাজার মূল্য ৩৫ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২৯ ট্রিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এতে বোঝা যায়, চীনের কম খরচের এআই প্রযুক্তি মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ডিপসিকের উত্থানের পেছনে রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে চীন উন্নতমানের সেমিকন্ডাক্টর আমদানিতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই ডিপসিকের মতো সাশ্রয়ী এআই মডেল তৈরি করা হয়েছে, যা কম খরচে উন্নতমানের পরিষেবা দিতে সক্ষম।

এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডিপসিকের সাফল্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। সম্প্রতি ফ্লোরিডার এক সমাবেশে তিনি বলেছেন, “আমি এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি, কারণ আমাদেরও একই কাজ করতে হবে। আশা করি, আমরা বেশি খরচ না করেও একই ফলাফল পাবো।” তার মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র চীনের এআই প্রযুক্তিকে প্রতিযোগিতার হুমকি হিসেবে দেখলেও এর কিছু সুবিধা গ্রহণের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিপসিকের মতো ওপেন-সোর্স এআই মডেলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখা, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সম্ভাব্য তথ্য ফাঁস ঠেকানোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া এ ধরনের প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

ফলে, ডিপসিকের ব্যবহার কতটুকু নিরাপদ তা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে। এটি স্বল্প খরচে উচ্চমানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি প্রদান করলেও ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।
 

এম.কে.

×