ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব প্রযুক্তি জগতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে ডিপসিক এআই। চীনের তৈরি এই ওপেন সোর্স এলএলএম (ল্যাঙ্গুয়েজ লার্জ মডেল) প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বদলে দিয়েছে আগের সব রেকর্ড। কম খরচে এবং সহজলভ্য পদ্ধতিতে বিলিয়ন ডলার এলএলএম মডেলের সমকক্ষ মডেল তৈরির সুযোগ এনে দিয়েছে ডিপসিক। একে অনেকেই "মোমেন্ট অব ট্রুথ" হিসেবে বর্ণনা করছেন।
ডিপসিক মাত্র ৫ মিলিয়ন ডলারে তৈরি করেছে জিপিটি-৪ লেভেলের একটি মডেল, যেখানে ওপেনএআই-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্রেইনিং খরচ প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এত কম খরচে এতো শক্তিশালী মডেল তৈরির পেছনে রয়েছে তাদের নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল।
-
স্মার্ট প্রসেসিং: মডেলের ৬৭১ বিলিয়ন প্যারামিটারের মধ্যে মাত্র ৩৭ বিলিয়ন একসঙ্গে কাজ করে, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং দ্রুতগতির।
-
ডেটা হিসাবের কৌশল: অন্যান্য মডেল যেখানে ৩২ ডেসিমালে কাজ করে, ডিপসিক ৮ ডেসিমালে কাজ করে, যা ক্যালকুলেশনের পরিমাণ ৭০ শতাংশ কমিয়ে দেয়।
ফলে, যেখানে অন্যান্য মডেলের জন্য ১ লক্ষাধিক জিপিইউ লাগে, সেখানে ডিপসিক ব্যবহার করে মাত্র ২ হাজার জিপিইউ।
ডিপসিকের আবির্ভাব বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় বার্তা নিয়ে এসেছে। এখন আর এআই ডেভেলপমেন্টে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। এ কারণেই ওপেনএআই, মেটা, গুগলসহ বড় বড় টেক জায়ান্টগুলোর শেয়ারমূল্য কমতে শুরু করেছে। সবচেয়ে বড় ধাক্কা পেয়েছে এনভিডিয়া, কারণ ডিপসিক দেখিয়েছে যে, তাদের মার্কেটিং কৌশল আর কার্যকর নয়।
ডিপসিকের ওপেন সোর্স হওয়া প্রযুক্তি এআই নির্মাণকে গণতান্ত্রিক করেছে। এখন যে কেউ তাদের নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী এলএলএম তৈরি করতে পারবে। এটি শুধু মার্কিন টেক জায়ান্টদের ওপর নির্ভরশীলতাই কমায়নি, একইসঙ্গে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে।
-
মতামত গঠনের স্বাধীনতা: আগে আমেরিকান এআই মডেলগুলোর পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে প্রভাবিত হতে হতো। এখন স্থানীয় বা আঞ্চলিক ন্যারেটিভ তৈরি করা সহজ হবে।
- নতুন প্রতিযোগিতা: মতামত গঠন ও ন্যারেটিভ তৈরির ক্ষেত্রে প্রযুক্তির আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে।
চীন এই প্রযুক্তি উন্মুক্ত করেছে সম্ভবত আমেরিকার বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য। তবে এর ইমপ্লিকেশন আরও বিস্তৃত। এটি এমন এক গণতন্ত্রায়ণের পথ তৈরি করেছে, যা মার্কিন প্রযুক্তি আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি বড় ধাক্কা।
ডিপসিকের উদ্ভাবন শুধু প্রযুক্তির নয়, বিশ্ব অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সামাজিক কাঠামোর ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এআই জগতে এটি এক নতুন যুগের সূচনা মনে করা হচ্ছে।
তাবিব