ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১

চীনে পাওয়া গেল প্রাচীন মানবের জীবাশ্ম: মানব ইতিহাসের নতুন অধ্যায়?

প্রকাশিত: ১৩:২১, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৩:২৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

চীনে পাওয়া গেল প্রাচীন মানবের জীবাশ্ম: মানব ইতিহাসের নতুন অধ্যায়?

সংগৃহীত

চীনে আবিষ্কৃত মানবাকৃতির জীবাশ্মগুলো বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিন ধরে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে। এসব জীবাশ্মের সঠিক ব্যাখ্যা কিংবা শ্রেণিবদ্ধকরণ করা এখনও সম্ভব হয়নি। গবেষণা থেকে জানা যায়, জীবাশ্মগুলো প্রাচীন মানব প্রজাতির এবং এদের বয়স আনুমানিক ৩ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ বছর আগের। 

তবে এ জীবাশ্মগুলো কোন নির্দিষ্ট মানব প্রজাতির অন্তর্গত তা নিয়ে এখনো মতবিরোধ চলছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই জীবাশ্মগুলো আমাদের বিবর্তনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপের ইঙ্গিত দিতে পারে, যা মানবজাতির অজানা অধ্যায় উন্মোচনে সহায়তা করবে। তবুও, এই জটিল ধাঁধার সমাধান খুঁজতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ক্রিস্টোফার বেই এবং বেইজিংয়ের ভার্টিব্রেট প্যালিওন্টোলজি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র প্রফেসর উ সিওজির নেতৃত্বে একদল গবেষক এই জীবাশ্মগুলো নিয়ে নতুন করে গবেষণা করছেন। তারা নতুন প্রজাতি হিসেবে একটি প্রাচীন মানব প্রজাতি, হোমো জুলুয়েনসিস নামে একটি নাম প্রস্তাব করেছেন। "হোমো" হলো মানব প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম এবং "জুলুয়েনসিস" শব্দটি চীনা ভাষার "জু লু" থেকে এসেছে, যার মানে হলো "বড় মাথা"।

এই নতুন প্রজাতির জীবাশ্মগুলোর সবচেয়ে অবাক করা বৈশিষ্ট্য হলো তাদের অত্যন্ত বড় মস্তিষ্ক, যা আমাদের বর্তমান মানব প্রজাতি, হোমো সেপিয়েন্স এর মস্তিষ্ক থেকেও বড়। বেই এবং সিওজির গবেষণার মতে, এই জীবাশ্মগুলোর মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা ১৭০০ থেকে ১৮০০ কিউবিক সেন্টিমিটার, যা আমাদের মানব প্রজাতির মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বড়।

এই নতুন প্রজাতির প্রস্তাবিত নামের সাথে কিছু বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। কিছু বিজ্ঞানী মনে করছেন, এই প্রস্তাবটি এখনও পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয় এবং তারা মনে করেন যে এই প্রজাতির নতুন নামের প্রয়োজন নেই। তবে, যদি বেই এবং সিওজির বিশ্লেষণ সঠিক হয়, তবে এই জীবাশ্মগুলি মানব বিবর্তনের সবচেয়ে বড় রহস্যের সমাধান দিতে পারে।

এই গবেষণায় বেই এবং সিওজি এমন কিছু তথ্য খুঁজে পেয়েছেন যা প্রাচীন ডেনিসোভান মানব প্রজাতির সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, যাদের অস্তিত্ব সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা গুহায় একটি ছোট আঙুলের হাড়ের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়েছিল। বর্তমানে, ডেনিসোভানদের জীবাশ্ম খুবই কম, তবে তাদের জেনেটিক তথ্য এখনো আমাদের মধ্যে কিছু মানুষের ডিএনএ-তে বিদ্যমান।

চীনের ঝু ঝিয়ায়াও স্থান থেকে ১৯৭০-এর দশকে পাওয়া জীবাশ্মগুলোর মধ্যে ২১টি জীবাশ্ম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ২ লাখ থেকে ১.৬ লাখ বছর পুরনো বলে মনে করা হয়। এসব জীবাশ্মের মধ্যে একটি নতুন ধরনের মাথার খুলি রয়েছে, যা আগে পাওয়া নিয়ানডারথাল বা হোমো ইরেকটাস প্রজাতির মানুষের খুলি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের মাথার আকার এবং আকৃতি বর্তমানে পরিচিত অন্য কোন প্রজাতির সাথে মেলানো সম্ভব হচ্ছে না।

তবে, ড্রাগন ম্যান বা হোমো লংগি নামের এক প্রাচীন মানবের খুলি নিয়ে অন্য একটি তত্ত্বও রয়েছে। এটি ১৯৩৩ সালে চীনের হারবিন শহরের কাছে পাওয়া গিয়েছিল, তবে এটি অনেক বছর ধরে একটি কুয়োর নিচে ছিল। বিজ্ঞানী ক্রিস স্ট্রিংগার এবং এক্সিজুন নিই এই জীবাশ্মটিকে ডেনিসোভান মানবের প্রাথমিক রূপ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

চীনের এই প্রাচীন মানবের জীবাশ্মের প্রস্তাবিত নতুন নাম হোমো জুলুয়েনসিস এখনও বিজ্ঞানী মহলে আলোচনার সৃষ্টি করেছে এবং এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে, এই জীবাশ্মগুলোর সঠিক শ্রেণিবদ্ধকরণ এবং প্রজাতি নামকরণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নানা মতপার্থক্যে বিভক্ত।

এটা স্পষ্ট যে, আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবাশ্ম অনুসন্ধানে আরও অনেক বড় সুরাহা রয়েছে, যা মানব ইতিহাসের অজানা অধ্যায়গুলো উন্মোচিত করতে সহায়ক হবে।


সূত্র:https://tinyurl.com/y8nf56tj

আফরোজা

×