বায়োপ্রিন্টিং হলো থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবন্ত কোষ এবং বায়োম্যাটেরিয়াল দিয়ে টিস্যু ও অঙ্গ তৈরি করার একটি প্রক্রিয়া। এটি অঙ্গ প্রতিস্থাপন, ব্যক্তিগতকৃত স্বাস্থ্যসেবা এবং ড্রাগ টেস্টিংয়ের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে পারে। বায়োইঙ্ক (জীবন্ত কোষ) এবং বিশেষ থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহৃত হয়। প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার, এমনকি হার্টও তৈরি করা সম্ভব হবে এই প্রযুক্তি দ্বারা। এই প্রযুক্তির সর্বশ্রেষ্ঠ সুবিধা হলো, এতে রোগীর নিজস্ব কোষ ব্যবহৃত হলে অঙ্গ প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকি অনেক কমে যাবে এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধক নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আর থাকবে না। বায়োপ্রিন্টেড টিস্যুতে আরও সঠিক ড্রাগ টেস্টিং করা সম্ভব, যার ফলে পশু পরীক্ষা কমিয়ে আনা যায়। এটি বিশ্বব্যাপী প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গের অভাব মোকাবিলা করতে পারে, যেখানে রোগীর নিজস্ব কোষ ব্যবহার করে অঙ্গ তৈরি করা সম্ভব।
এই প্রযুক্তির কিছু বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা যদিও সহজতম টিস্যু যেমন ত্বক এবং কারটিলেজ বা তরুণাস্থি সাফল্যের সঙ্গে বায়োপ্রিন্ট করেছেন তবে জটিল অঙ্গ তৈরি করার চ্যালেঞ্জগুলো বিদ্যমান। বায়োপ্রিন্টিং লাভজনক বা বাণিজ্যিকভাবে কার্যকরী হতে গেলে এগুলোর প্রতিটি ত্রুটি সংস্কারের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। এই প্রযুক্তি কেবল ধনী সমাজের মানুষের জন্য উপলব্ধ হবে না তো? অপরদিকে মানব টিস্যু ল্যাবরেটরিতে তৈরি করার নৈতিকতা বিষয়ক ধোঁয়াশার সমাধান দরকার।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং একটি উন্নত প্রযুক্তির কম্পিউটার, যেটি গণনা করার জন্য কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মূলনীতি ব্যবহার করে। সাধারণ কম্পিউটারগুলো বিট ব্যবহার করে, যা ০ বা ১ এর মধ্যে একটি মান ধারণ করে, কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার কোয়ান্টাম বিট বা ‘কিউবিট’ ব্যবহার করে, যা একাধিক অবস্থায় একসঙ্গে থাকতে পারে। এর ফলে কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো প্রচলিত কম্পিউটারগুলোর তুলনায় আরও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে জটিল সমস্যাগুলো সমাধান করতে সক্ষম। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এর ব্যবহার যোগ্যতা বাড়াতে ত্রুটির হার এবং কিউবিট স্থিতিশীলতার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। কোয়ান্টাম-প্রতিরোধী প্রযুক্তি, যা পোস্ট-কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি হিসেবে পরিচিত, এমন এনক্রিপশন পদ্ধতিকে বোঝায়, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটার দ্বারা সৃষ্ট সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে ডেটা সুরক্ষিত করতে ডিজাইন করা হয়েছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষমতা অনেক পুরনো এনক্রিপশন অ্যালগরিদম, যেমন আরএসএ এবং ইসিসি (এলিপটিক কার্ভ ক্রিপ্টোগ্রাফি) ভাঙার সক্ষমতা রাখে। কোয়ান্টাম-প্রতিরোধী অ্যালগরিদমগুলো এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে তারা কোয়ান্টাম কম্পিউটার দ্বারা ভাঙা না যায়, ফলে ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার সহজলভ্য হলে তথ্যে গোপনীয়তা এবং অখণ্ডতা নিশ্চিত করা যায়। এই প্রযুক্তি ব্যাংকিং, অনলাইন লেনদেন এবং ডেটা সঞ্চয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান ভবিষ্যতের উদ্ভাবনে একটি বড় ভূমিকা রাখবে। ২০২৫-এর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরও উন্নত হবে। এটি এমন একটি সৃজনশীল সহকারী হবে, যা মানুষের পক্ষে সংগীত তৈরি, আর্কিটেকচার ডিজাইন করা এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিষ্কার করতেও সহায়ক হতে পারে।
তবে এআইর ক্ষেত্রে একটি ব্ল্যাক বক্স ধারার সমস্যা বিজ্ঞানীদের যুঝতে হয়। এর মানে হলো ডেভেলপার নিজেই বুঝতেই পারেন না যে, কীভাবে এবং কেন এআই তার সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে। ব্ল্যাক বক্স প্রকৃতি এমন একটি পরিস্থিতিকে বোঝায়, যেখানে একটি এআই মডেলের অন্তর্নিহিত সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া, বিশেষ করে জটিল সিস্টেম যেমন নিউরাল নেটওয়ার্কগুলোর ক্ষেত্রে, সহজে বোঝা যায় না। যদিও ইনপুট এবং আউটপুট দৃশ্যমান, তবে এটি জানাটা কঠিন যে এআই কীভাবে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বা পূর্বাভাসে পৌঁছেছে। যা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সিস্টেমে সম্ভাব্য পক্ষপাতিত্বের বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
ফিউশন এনার্জি
ফিউশন এনার্জি হলো একটি প্রক্রিয়া, যেখানে হাল্কা আণবিক কণাগুলো, যেমন হাইড্রোজেন, একসঙ্গে মিশে একটি ভারী নিউক্লিয়াস তৈরি করে, যার ফলে বিশাল পরিমাণে শক্তি মুক্ত হয় এটি ঠিক সেই শক্তি, যা সূর্য উৎপন্ন করে। এটি অসীম পরিষ্কার শক্তির সম্ভাবনা প্রদান করে, যেখানে তেমন কোনো কার্বন নির্গমন বা বিপুল পরিমাণে রেডিওএকটিভ বর্জ্য নেই। তবে বাস্তবিক ফিউশন শক্তি অর্জন করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং, কারণ এটি একটি রিঅ্যাকশন বজায় রাখতে সূর্যের কেন্দ্রের তুলনায়। অনেক বেশি তাপমাত্রা তৈরি ও রক্ষা করার প্রয়োজন।
কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি
কার্বন ক্যাপচার টেকনোলজি বিশেষভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, কেননা এটি শুধু গ্যাস নিঃসরণ কমায় না, বরং বাতাস থেকে সিও-২ শোষণ করে পরিবেশে পুনঃব্যবহারযোগ্য অথবা সঞ্চয়যোগ্য করতে সাহায্য করবে। এটার ব্যবহার শুধু গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনবে না, বরং আসল গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো আমাদের গ্লোবাল উষ্ণায়নের প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা। প্রযুক্তির প্রয়োগে বিভিন্ন সিস্টেম ব্যবহার করতে হবে, যেমন বায়োমাইক্রো যা সিও-২ পুনঃচক্রণে সহায়ক হতে পারে বা শিল্প পরিসরে বড় পরিমাণ সিও-২ শোষণ ফিল্টার ব্যবহার করা। তবে এর স্কেলিং সমস্যা রয়েছে এবং বিশেষভাবে এটি কার্যকর হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট উৎপাদন ক্ষমতার জন্য আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।
অগমেন্টেড রিয়েলিটি
অগমেন্টেড রিয়েলিটি, যা মূলত গেমিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন আমরা তার আরও বিভিন্ন প্রয়োগ দেখব। ২০২৫ সালের মধ্যে এই প্রযুক্তি মানুষের প্রতিদিনের জীবন ও কাজের বাস্তবতায় ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখবে। যেমন যখন আপনি অগমেন্টেড রিয়েলিটির চশমা পরে রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন তখন আপনি রিয়েল টাইমে পথনির্দেশনা, রেস্টুরেন্ট রিভিউ বা ভাষান্তরের তথ্য দেখতে পাবেন।