ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বৃহস্পতিবার ইসরোর বিজ্ঞানীরা মহাকাশে দুই কৃত্রিম উপগ্রহের মধ্যে সফল স্পেস ডকিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। ইসরো সমাজমাধ্যমে এই সাফল্যের কথা শেয়ার করে একে “ঐতিহাসিক মুহূর্ত” বলে উল্লেখ করেছে। এর মাধ্যমে ভারত বিশ্বে চতুর্থ দেশ হিসাবে স্পেস ডকিং প্রক্রিয়ায় সাফল্য অর্জন করল। এই অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইসরোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রথম প্রচেষ্টায় বাধা, দ্বিতীয়বারে সফলতা: গত রবিবার (৩১ ডিসেম্বর), ইসরো প্রথমবার স্পেস ডকিংয়ের চেষ্টা করেছিল। সেদিন দুই উপগ্রহকে প্রথমে ১৫ মিটার, পরে ৩ মিটার দূরত্বে নিয়ে আসা হলেও চূড়ান্ত সংযোগ সম্ভব হয়নি। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে উপগ্রহগুলিকে আলাদা করে ফেলা হয়। ইসরো জানিয়েছিল, চূড়ান্ত প্রচেষ্টা পরবর্তী সময়ে করা হবে। অবশেষে, বৃহস্পতিবার সেই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।
ইসরো লিখেছে, “স্পেস ডকিং সফল। এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। প্রথমে ১৫ মিটার এবং ৩ মিটারের পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। এরপর নির্ভুলভাবে দুই উপগ্রহের সংযোগ সম্পন্ন হয়েছে। এটি ভারতের মহাকাশ গবেষণার এক বড় মাইলফলক।” ইসরো আরও জানায়, স্পেস ডকিংয়ের পরও দুই উপগ্রহ তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ‘আনডকিং’ প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা হবে।
কী এই স্পেস ডকিং?
ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দুই কৃত্রিম উপগ্রহ— স্পেডেক্স ১ (চেজ়ার) এবং স্পেডেক্স ২ (টার্গেট) একই গতি ও দূরত্ব অতিক্রম করে মহাকাশে নির্ধারিত বিন্দুতে (৪৭০ কিলোমিটার উচ্চতায়) একত্রিত হয়। এই জটিল প্রক্রিয়াকে স্পেস ডকিং বলা হয়। এটি সফল করতে নির্ভুল গাণিতিক ও প্রযুক্তিগত সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়।
মিশনের প্রস্তুতি : ইসরো ৩০ ডিসেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে পিএসএলভি-সি৬০ রকেট উৎক্ষেপণ করে। প্রধান পেলোড হিসেবে এতে পাঠানো হয়েছিল স্পেডেক্স ১ এবং ২। এছাড়াও ২৪টি সেকেন্ডারি পেলোড ছিল এই মিশনে। ইসরোর বিজ্ঞানী জয়কুমার জানিয়েছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে একটি নিজস্ব আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্য নিয়েছে ভারত। স্পেস ডকিং সেই লক্ষ্যপূরণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইসরোর এই সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “স্পেস ডকিং সফল হওয়ায় আমি আমাদের বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানাই। এটি মহাকাশ বিজ্ঞানে ভারতের অগ্রগতির পথে এক অনন্য মাইলফলক।”
রাজু