তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষ তথা উত্তরোত্তর ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তি খাতে এক বিপুল সমৃদ্ধির বছর হতে চলেছে ২০২৫। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে চাকরির বাজারে। অধিকাংশ নিয়োগের কর্মযজ্ঞগুলোতে আধিপত্য থাকবে আইটি বা তথ্য-প্রযুক্তিগত দক্ষতার। এআই থেকে শুরু করে সাইবার নিরাপত্তার ব্যবহারিক জ্ঞান ২০২৫-এর পরেও সর্বোচ্চ চাহিদার স্থানটি ধরে রাখবে। চলুন, নতুন বছরের কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন আইটি দক্ষতাগুলো দেখে নেওয়া যাক।
ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট
ডিজিটালকরণের ধারাবাহিকতায় ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রশাসনের মতো সেক্টরগুলোতে প্রয়োজন হচ্ছে অ্যাপ এবং সফটওয়্যার। বিভিন্ন ধরনের ডেস্কটপ সফটওয়্যারের পাশাপাশি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরির অপরিহার্য দক্ষতা হলো ফ্রন্ট-অ্যান্ড ও ব্যাক- অ্যান্ড সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। সঙ্গত কারণেই চাহিদা বাড়ছে ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপারদের, যা আগামী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
ক্লাউড কম্পিউটিং
বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে অনলাইন বা ক্লাউড অবকাঠামো। এই অনলাইন কাঠামো গঠন ও তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন পড়ছে ক্লাউড আর্কিটেক্ট বা ইঞ্জিনিয়ার। ফলে নিয়োগের সময় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস (এডব্লিউএস), মাইক্রোসফট আজুরে এবং গুগল ক্লাউডের মতো ক্লাউড প্ল্যাটফর্মগুলোতে বাস্তব অভিজ্ঞতাকে। এই দক্ষতাকে কেন্দ্র করে এক অভাবনীয় সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারের রূপরেখা তৈরি হয়েছে, যা নিকট ভবিষ্যতে চাকরির বাজারকে নেতৃত্ব দেবে।
ইউআই/ইউএক্স ডিজাইন
একটি সফটওয়্যার বা অ্যাপের ইন্টারফেস, নকশা এবং অপারেশন সহজবোধ্য এবং সার্বজনীন না হলে তার গ্রহণযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়ে। অপরদিকে, একটি সার্বজনীন নকশার কারণে অ্যাপ বা সফটওয়্যারটিকে ঘিরে ব্যবহারকারীর ইতিবাচক অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয়। আর এখানেই আসে ইউজার ইন্টারফেস এবং ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন শেখার প্রসঙ্গ। এই দক্ষতার মাধ্যমে আউটসোর্সিং প্ল্যাটফর্মে ফুল-টাইম চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জনের পথ সুগম হতে পারে।
সাইবার নিরাপত্তা
বিভিন্ন ছোট-বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইন হ্যাকিংয়ের শিকার হয়। শুধু তাই নয়, একজন ব্যক্তির অ্যাকাউন্টও এই ডিজিটাল বিশ্বে নিরাপদ নয়। ঘনঘন এই সাইবার অপরাধের বৃদ্ধির কারণে, সংস্থা ও মানুষ উভয়েরই অনলাইন ডেটা রক্ষার জন্য দরকার হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। তাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা, ইথিকাল হ্যাকিং এবং ঝুঁকি যাচাইয়ের দক্ষতা ২০২৫-এ কতটা মূল্যবান হতে যাচ্ছে!
ডেটা অ্যানালাইসিস এবং বিগ ডেটা
বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে বিপুল পরিমাণ ডেটার চুলচেরা বিশ্লেষণ জরুরি। এখানে বিশেষত্ব পায় এসকিউএল, পাইথন এবং ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুলগুলোর ব্যবহারিক দক্ষতা। ব্যবসা, বিপণন, ব্যাংকিং, ফিন্যান্স ও একাডেমিক গবেষণাসহ বিভিন্ন খাতে আজকাল নিয়োগ হচ্ছে ডেটা অ্যানালিস্ট এবং ডেটা সায়েন্টিস্ট। নতুন বছরে এই ধারা আরও বেগবান হবে।
পেশাদার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের পাশাপাশি পরিসংখ্যানবিদ, গণিতবিদসহ অন্যান্য সেক্টরের কর্মকর্তারাও এখন ঝুঁকে পড়ছেন এই দক্ষতাগুলো শেখার দিকে।
ডেভঅপ্স এবং অটোমেশন
খাবারের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় কল-কারখানায় কম সময়ে উৎপাদন বাড়াতে অটোমেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রত্যেকটি ইন্ডাস্ট্রির ব্যবহৃত সফটওয়্যারগুলো কাজের ধরণ অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। এগুলোর চালনার ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে হলে ডেভঅপ্স অনুশীলন এবং অটোমেশন সরঞ্জামগুলোতে সিদ্ধহস্ত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ফ্যাক্টরি নির্ভর কর্মসংস্থানগুলোতে ইতোমধ্যে এর এক বিশাল অবস্থান তৈরি হয়েছে, যা সামনের বছরগুলোতে আরও প্রসারিত হবে।
এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি (এআর/ভিআর)
গেমিং, ই-স্পোর্টস এবং বিনোদন ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা এবং ই-কমার্সের মতো বিভিন্ন খাতে বিস্তৃতি পাচ্ছে অগমেন্টেড এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি। তাই গ্রাহকদের সেবা প্রদানে বাস্তব অভিজ্ঞতা তৈরিতে ভিআর প্রযুক্তির দক্ষতা আগামী দিনে ক্রমশ মূল্যবান হয়ে উঠবে।
ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি)
পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত ডিভাইসের মাধ্যমে স্মার্ট অবকাঠামো ও পণ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত আইওটি ডেভেলপমেন্ট ও সেন্সর প্রযুক্তির দক্ষতা। আগামী বছরগুলোতে স্মার্ট শহর, কারখানা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং, স্মার্ট হোমস, স্মার্ট গ্রিড, পরিধানযোগ্য জিনিসপত্র ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্ব বাড়বে আইওটি-দক্ষ পেশাদারদের।
চাহিদাসম্পন্ন প্রযুক্তি দক্ষতা
শীর্ষ সংবাদ: