নিরাপত্তা
যে কোনও দেশে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধানদের নিরাপত্তার কড়াকড়ি সবচেয়ে বেশি। তেমনই বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তি সংস্থাগুলির প্রধান কর্তাব্যক্তিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রচুর বিনিয়োগ করে থাকে। সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে ফরচুন পত্রিকা বিশ্বের প্রথম সারির টেক জায়ান্টগুলির সিইওর নিরাপত্তা সংক্রান্ত খরচের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
অপহরণ এবং প্রাণনাশের হুমকি থেকে রক্ষা করতে বিশ্বের তাবড় প্রযুক্তি সংস্থার সিইওদের কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রাখা হয়। উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে সংস্থাগুলি।
বেতন ছাড়াও সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্তাদের অন্য যে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় তার মধ্যে এই নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টির জন্য সংস্থার ব্যয় সবচেয়ে বেশি হয় বলে ফরচুন জানিয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার খরচের বহর আলাদা।
প্রথমেই আসা যাক মেটার কথায়। মেটার সর্বেসর্বা মার্ক জ়াকারবার্গের নিরাপত্তার খরচের পরিমাণ শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। ফরচুনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে জ়াকারবার্গের সুরক্ষাখাতে মেটা ব্যয় করেছিল ১৯৮ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে ৮০ কোটি টাকা সিইও-র নিরাপত্তার জন্য খরচ হয়। বাকি ১১৮ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে জ়াকারবার্গ এবং তাঁর পরিবারের সকলের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সম্পর্কিত অতিরিক্ত খরচের জন্য। সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)-এর তথ্য অনুসারে, ২০২১ এবং ২০২২ সালে মেটা-কর্তাকে সুরক্ষা দিতে যথাক্রমে ২০৩ কোটি এবং ২১১ কোটি টাকার বেশি খরচ করেছিল মেটা।
খরচের নিরিখে মেটার ধারেকাছে না এলেও মোটা টাকা খরচ হয় গুগ্লের সিইও সুন্দর পিচাইয়ের জন্য। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই প্রযুক্তিবিদের পুরো নাম সুন্দরাজন পিচাই। ২০১৫ সালের গুগ্ল ও অ্যালফাবেটের সিইও পদে অভিষিক্ত হন সুন্দর। তার পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। প্রায় ৭৫ কোটি টাকা বেতন পান তিনি। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে বার বার সরব হয়েছেন সুন্দর। অ্যালফাবেট কর্তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য খরচ হয় কয়েক কোটি টাকা। ভারতীয় মুদ্রায় হিসাব করলে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ অ্যালফাবেটের সিইওর নিরাপত্তা খাতে।
টেসলা কর্তা ইলন মাস্ক প্রায় সব সময়ই প্রচারের আলোয় থাকতে ভালবাসেন। নিজের মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সেও সক্রিয় তিনি। টেসলা-সহ আরও কয়েকটি সংস্থার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। তার মধ্যে নবতম সংযোজন আমেরিকার একটি মন্ত্রকের যৌথ দায়িত্বভার। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ধনকুবেরের নিরাপত্তা যে আঁটসাঁট হবে তা বলাই বাহুল্য।
কয়েক মাস আগে মাস্ক তাঁর এক্স হ্যান্ডল থেকে একটি পোস্টে বলেছিলেন যে, গত আট মাসে দু’বার তাঁর ওপর হামলা করা হয়। দু’জন আততায়ী তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল বলে দাবি টেসলার কর্ণধারের। এ হেন ভিভিআইপির জন্য টেসলা, মাস্কেরই অধীনস্থ একটি নিরাপত্তা সংস্থাকে তাঁর সুরক্ষার দায়িত্ব সঁপেছে।
সেই সংস্থাকে ২০২৩ সালে ইলনের নিরাপত্তা বাবদ ২০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আরও চার কোটি টাকা দেওয়া হয় বলে ফরচুনে প্রকাশিত হয়েছে। জুলাইয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর, মাস্ক তাঁর নিরাপত্তা নিজের হাতে রাখার কথা চিন্তা করছেন বলেও শোনা গিয়েছে।
এই মুহূর্তে তারকা সিইওদের অন্যতম এনভিডিয়া সিইও জেনসেন হুয়াং। চলতি বছরের জুনে বৃহত্তম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসাবে এনভিডিয়া আত্মপ্রকাশ করেছিল। বর্তমানে ইকমার্স সংস্থা ‘অ্যামাজ়ন’ এবং বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা ‘মেটা’র মোট বাজারি মূলধনের চেয়ে বেশি সম্পত্তি রয়েছে এনভিডিয়ার কাছে। মূলধনের পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিশাল সম্পত্তির মালিকানা হাতে থাকলেও মেটা বা গুগ্লের তুলনায় সিইও-র নিরাপত্তা খাতে কম খরচ করে এনভিডিয়া। সিকিউরিটিজ় এক্সচেঞ্জ কমিশনকে দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের অর্থ বছরে, সংস্থাটি হুয়াংয়ের নিরাপত্তা বাবদ প্রায় ১৯ কোটি টাকা খরচ করেছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ, গাড়ি ও চালকের জন্য কয়েক হাজার ডলার খরচ করে বলে জানা গিয়েছে।
অ্যাপ্ল আর স্টিভ জোবসের নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হলেও বর্তমান সিইও টিম কুক নিজের পারদর্শিতায় ব্যবসাকে দ্বিগুণ করেছেন বলে দাবি বহু সংবাদমাধ্যমেরই। ইউএস সিকিউরিটিজ় এক্সচেঞ্জ কমিশনকে অ্যাপলের তরফে জানানো হয়েছে যে, ২০২৩ সালে টিম প্রায় ৫২৪ কোটি টাকা আয় করেছেন।
অ্যাপ্ল সিইওর নিরাপত্তার জন্য প্রায় ছ’কোটি টাকা খরচ করা হয় বলে ফরচুন জানিয়েছে। এই টাকা তাঁর ব্যক্তিগত বিমানের খরচের চেয়ে কম। সেটির জন্য অ্যাপ্ল ১৪ কোটি টাকা খরচ করেছে।
অন্য দিকে, আর এক প্রযুক্তি সংস্থা ওরাকলের সিইও ল্যারি এলিসনের নিরাপত্তা দেখভালের জন্য তাঁর সংস্থা ১৫ কোটি টাকা খরচ করে, যা অ্যাপলের তুলনায় বেশি।
শহীদ