ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

ইব্রাহিম মোল্লার কোড প্রযুক্তি

ওষুধের খরচ কমাবে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত

আইটি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ওষুধের খরচ কমাবে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত

দেশের সাধারণ জনগণের জন্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য ঔষধ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ জেনেরিক মেডিসিন কোড (বিজিএমসি) এবং সহায়ক নীতিমালার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অফ আইটি-এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইব্রাহিম মোল্লা। প্রস্তাবিত বিজিএমসি ব্যবস্থা ও নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে দেশের ঔষধের খরচ প্রায় ৫০% পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব। ফলে, একটি পরিবার মাসিক ঔষধে যদি ১০,০০০ টাকা খরচ করে, বিজিএমসি প্রয়োগের ফলে সেই খরচ প্রায় ৫,০০০ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। তরুণ উদ্ভাবক ইব্রাহিম মোল্লা তার এই সহায়ক অ্যাপটি সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে চান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

জেনেরিক কোডে ওষুধ ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশ জেনেরিক মেডিসিন কোড (বিজিএমসি) মূলত একটি কোডিং ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে জেনেরিক ঔষধের প্রেসক্রিপশন ও সরবরাহ প্রক্রিয়া সহজতর হবে। জেনেরিক ঔষধের নামগুলো সাধারণত অনেক জটিল ও দুর্বোধ্য হয়, যা রোগী ও ডাক্তারদের জন্য সহজে বুঝে নেওয়া কঠিন। বিজিএমসি এই সমস্যার সমাধান করবে প্রতিটি জেনেরিক ঔষধের জন্য একটি সাধারণ কোড প্রয়োগের মাধ্যমে।
বিজিএমসি কোডের মাধ্যমে, ডাক্তাররা শুধু কোড লিখে প্রেসক্রিপশন দিতে পারবেন, যা রোগীদের জন্য সহজবোধ্য এবং ব্র্যান্ডের প্রতি নির্ভরতা থেকে সরিয়ে আনবে। এই সহজ ব্যবস্থা ডাক্তারদের জন্য যেমন প্রেসক্রিপশন লিখতে সহজ হবে, তেমনি ফার্মাসিস্টদের জন্যও সঠিক ঔষধ সরবরাহ করা সুবিধাজনক হবে। এর ফলে ওষুধ ব্যবস্থাপনা সহজতর ও নির্ভুল হওয়ার পাশাপাশি খরচও সাশ্রয়ী হবে।

খরচ হ্রাসে চার নীতিমালা
বিজিএমসি ও প্রস্তাবিত এই নীতিমালাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো ঔষধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো, যা সাধারণত ডাক্তারদের প্রভাবিত করতে ব্যয় হয়। এই খরচের প্রভাব সরাসরি ভোক্তার উপর পড়ে এবং মূল্য বৃদ্ধির কারণ হয়। বিজিএমসি’র অধীনে প্রস্তাবিত চারটি নীতিমালার মাধ্যমে এই প্রভাবগুলো হ্রাস করা সম্ভব:
হ জেনেরিক কোড দ্বারা প্রেসক্রিপশন: ডাক্তারদের শুধুমাত্র জেনেরিক নাম বা নির্ধারিত কোড ব্যবহার করে ঔষধ প্রেসক্রাইব করতে হবে। এতে করে ব্র্যান্ডের প্রতি নির্দিষ্ট পক্ষপাতিত্ব কমবে এবং কোম্পানিগুলো আর ডাক্তারদের প্রভাবিত করতে পারবে না।
হ নিয়ন্ত্রিত প্যাকেজিং ও তথ্য প্রদর্শন: ঔষধের প্যাকেটে শুধুমাত্র কোম্পানির নাম, জেনেরিক নাম, নির্ধারিত কোড এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) উল্লেখ করতে হবে।
হ সরকার নির্ধারিত ঔষধের মূল্যসীমা: প্রতিটি জেনেরিক ঔষধের জন্য সরকার একটি নির্দিষ্ট সর্বোচ্চ মূল্যসীমা নির্ধারণ করবেন। এতে করে অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হবে এবং কোম্পানিগুলো ফার্মাসিস্টদের প্রভাবিত করার জন্য বিপণন ব্যয় করতে পারবে না।
# অভিন্ন মান ও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ: প্রতিটি অনুমোদিত ঔষধ প্রস্তুতকারককে অভিন্ন মানের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং কোম্পানিগুলো মান নিয়ে অতিরিক্ত লাভ দাবি করতে পারবে না। এতে প্রতিযোগিতামূলক প্রচারণার খরচ কমে যাবে এবং মানসম্পন্ন ঔষধ সাধারণ মানুষের নাগালে আসবে।

বিজিএমসি এবং স্বাস্থ্যসংকেত অ্যাপ
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে মো. ইব্রাহিম মোল্লা একটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর বিজিএমসি ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসংকেত নামে একটি সহায়ক অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করেছেন। অ্যাপটির মাধ্যমে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট এবং জনগণ সহজেই সকল নিবন্ধিত জেনেরিক ঔষধের কোড, নাম এবং সর্বোচ্চ মূল্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। অ্যাপের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
হ বিশদ ঔষধ তালিকা: বিজিএমসি কোড এবং সর্বোচ্চ মূল্যসহ সকল নিবন্ধিত ঔষধ।
হ অফলাইন কার্যকারিতা: ইন্টারনেট ছাড়াই পূর্বে ডাউনলোডকৃত তথ্য ব্যবহার করা যাবে।
হ সরকারি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ প্যানেল: সরকার সহজেই ঔষধের সর্বোচ্চ মূল্য আপডেট করতে পারবেন।
হ সহজ অনুসন্ধান ব্যবস্থা: জেনেরিক নাম বা কোড দ্বারা দ্রুত তথ্য খুঁজে পাওয়া।
ইব্রাহিম মোল্লার প্রস্তাবিত বিজিএমসি এবং স্বাস্থ্যসংকেত অ্যাপটি দেশের স্বাস্থ্য খাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সক্ষম। ঔষধের খরচ কমিয়ে প্রায় ৫০% পর্যন্ত খরচ হ্রাস সম্ভব, যা দেশের সাধারণ জনগণের জন্য মানসম্পন্ন ঔষধ আরও সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করবে। তিনি এই ব্যবস্থা ও অ্যাপটি সরকারের কাছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হস্তান্তর করতে চান, যা দেশের স্বাস্থ্যসেবায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে। দেশের স্বাস্থ্যসেবায় এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রয়োজন।

×