সেই প্রাচীনকাল থেকেই রাতের আকাশ মানবজাতিকে মুগ্ধ করে রেখেছে। এমনকি আজও আমরা আকাশ পানে চেয়ে থাকি পৃথিবীর অতীত এবং ভবিষ্যত বুঝতে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আমরা যা দেখি তা বুঝতে আমাদের সহায়তা করছে। আকাশ তাই এখন আর অজানা জগত নয়। এবং এখনো আমরা প্রাচীন সভ্যতার আবিষ্কার দিয়ে প্রভাবিত। যেমন মধ্য আমেরিকার মায়া।
মায়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই রহস্যময় নথি তাদের অনন্য সম্পদ হিসেবে রেখে গেছেন। বর্তমানে এটি আমাদের কী জানাচ্ছে? এই পরিশীলিত হায়রোগ্লিফিকস মায়ার সঞ্চিত জ্ঞান বহন করছে। পরবর্তী সূর্যগ্রহণ কখন হবে? শুক্রগ্রহ কখন আবার শুকতারার রূপে দেখা দেবে? বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা এখনো মায়ার সূক্ষ্ম গণনা সমীহ করে চলেন। হুলিয়েটা বলেন, ‘এটা বিস্ময়কর যে, তারা কয়েক হাজার বছর আগে এরকম হিসেব তৈরি করতে পেরেছিলেন।’ অ্যান্টনি বলেন, ‘তারা পৃথিবীতে এটা কীভাবে করেছিলেন? তাদের যদি কম্পিউটার এবং টেলিস্কোপ না থেকে থাকে, তাহলে তারা এটা কীভাবে করেছেন?’ আন্তিয়ে মনে করেন, ‘তাদের দিনে, মানে ১৪৯২ এর আগ অবধি, মায়া গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যায় ইউরোপীয়দের তুলনায় এগিয়ে ছিল।’
এই নথি ইউরোপে উপনিবেশবাদীরা লুট করে এনেছিল, নাকি উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল তা আজও অজানা। তবে এটি এখনো গবেষণার বিষয়। নথিটি রয়েছে জার্মানির ড্রেসডেনে। স্যাক্সনি স্টেট অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে নথিটি রাখা হয়েছে। এটি আমাদের জানা মতে, পৃথিবীতে থাকা চারটি মায়ান কোডিসিসের একটি। কার্লোস পাজন গাজলের মতো গবেষকরা ‘ড্রেসডেন কোডেক্স’ নামের নথিটি বুঝতে আমাদের সহায়তা করেছেন। এই পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে মায়ান সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের ধারনা বদলে গেছে। কার্লোস বলেন, ‘ড্রেসডেন কোডেক্স মায়ান পুরাণ, ধর্ম, জ্যোতির্বিদ্যা এবং হায়রোগ্লিফিকস সম্পর্কে আমাদেরকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।’
দুই পাশেই লেখা ৩৯ পাতার নথি ড্রেসডেন কোডেক্স। সাড়ে তিন মিটার লম্বা নথিটি ধর্মীয় আচারের ‘পকেট বুক’ ছিল। কার্লোস বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, একলিপ্সের টেবিলগুলো সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে আগাম ধারণা দিত। মানুষ এসব নিয়ে ভীত ছিল।’ অ্যান্টনির মতে, ‘এটা সত্যিই ধর্ম সম্পর্কিত। সৃষ্টিকর্তাদের কাছে কিছু চাওয়ার উপযুক্ত সময় জানা যেতো। সম্ভবত রোগ নিরাময়ের সঙ্গেও সম্পর্কিত ছিল। নিরাপদ সন্তান জন্মদান। ভালো শস্য।’ কোনোকিছু করার জন্য উপযুক্ত সময় হিসেব করতে চাইতো মায়া। তার কোনো একটি ঘটনার সম্ভাব্য তারিখ আগাম ধারণা করতে পারতেন।
আন্তিয়ে বলেন, ‘তাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা যেটা ছিল, তা হচ্ছে, তারা একটি শূন্যর গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন... কারণ, শূন্যটি আমরা এই সংকেতে সুন্দরভাবে দেখতে পাচ্ছি। কোডেক্সে কালো সংখ্যাগুলোর মাঝখানে লাল আমাদের লম্বা সময় গণনায় সক্ষম করেছে।’ খুব লম্বা সময়Ñ এমনকি আমাদের আধুনিক দিন অবধি।
যেমন: ২০২৪ সালের এপ্রিলের পূর্ণ সূর্যগ্রহণের ব্যাপারটিও ড্রেসডেন কোডেক্স দেখে বোঝা সম্ভব। অ্যান্টনি বলেন, ‘তারা অবশ্য কোথা থেকে পূর্ণ গ্রহণ দেখা যাবে বা গ্রহণের জ্যামিতি নিয়ে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না।’
হুলিয়েটা মনে করেন, ‘মেসোআমেরিকান সংস্কৃতির কোনো বৈজ্ঞানিক লক্ষ্য ছিল না। নির্ভরযোগ্য ক্যালেন্ডার পেতে আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন তারা।’
ড্রেসডেন কোডেক্স ক্যালেন্ডার দেখাচ্ছে কীভাবে বিজ্ঞান এবং ধর্ম হাতে হাত রেখে এগিয়েছিল, যা এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না।
তবে আশেপাশে কী ঘটছে, তা বোঝার আগ্রহ আমাদের মতো আগেও ছিল।