.
চট্টগ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা জয় বড়ুয়া তৈরি করছেন রোবটিক হাত। যাদের হাত নেই, তাদের জন্য স্বস্তি হয়ে উঠতে পারে তার তৈরি এই বিশেষ হাত। রোবটিক এ হাতগুলোর ওপরে সিলিকন গ্লাভস লাগিয়ে দেওয়ার ফলে তা মানুষের হাতের মতোই দেখা যায়। ২০ বছর বয়সী জয় বড়ুয়ার ভাষ্যমতে, ভয়েস কন্ট্রোল, অটো কন্ট্রোল, নার্ভ কন্ট্রোল ও লেগ কন্ট্রোল- এ চার ধরনের রোবটিক হাত তৈরি করেছেন তিনি। এর মধ্যে কোনো হাত মস্তিষ্ক থেকে সংকেত পেয়ে পরিচালিত হয়, কোনোটি আবার কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে চলে। পায়ের সঙ্গে লাগানো ডিভাইসের মাধ্যমেও হাত নাড়াচাড়া করা যায়। অর্থাৎ যে ব্যক্তির যেমন হাত প্রয়োজন, সে অনুযায়ী হাতগুলো তৈরি করে নেওয়া যায়। রোবটিক এ হাত দিয়ে প্রায় এক কেজি ওজনের কোনো বস্তু তোলা সম্ভব। দুর্ঘটনায় হাত হারানো ব্যক্তিরা এই রোবটিক হাত ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি যাদের হাত নেই, তারাও এটা ব্যবহার করতে পারেন।
জয়ের রোবটিকস ল্যাব
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর এই তরুণ নিজের বাসায় গড়ে তুলেছেন ‘রোবটিকস ল্যাব’। জয় বড়ুয়ার কাজ সম্পর্কে অবগত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল। সুযোগ দিতে পারলে তিনি আরও অনেক দূরে যাবেন বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। জয় বড়ুয়া বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছিলেন ২০১৯ সালে। বিভিন্ন জটিলতায় পড়ে আর এর অন্য ধাপগুলোতে অংশ নিতে পারেননি। হোম ক্লিনিং রোবট, উভচর রোবট, রোবটিক থার্ড হ্যান্ড, ওয়্যারলেস হ্যান্ড, হেড মেসেজ ডিভাইস, এলিন ওয়ান ফিউচার কার, রোপ ক্যামেরা, ওয়্যারলেস ক্যামেরা, কথা বলা রোবটসহ আরও নানা কিছু নিয়ে কাজ করছেন এই তরুণ। ২০১৯ সালে নাসা স্পেস অ্যাপ চ্যালেঞ্জে চট্টগ্রাম থেকে প্রথম স্থান অর্জন করেন জয় বড়ুয়া ও তার দল। ‘এসো রোবট বানাই’ টিভি শোতে অ্যাগ্রিকালচার রাউন্ড থেকে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। ইলেকট্রনিকস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘আবিষ্কারের খোঁজে’ নামক প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
যাচ্ছে দেশের বাইরেও
জয় বড়ুয়া যে হাতগুলো তৈরি করেছেন, তা কেউ দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারেন। এর দাম পড়ে ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর দেশের বাইরে থেকে এ ধরনের রোবটিক হাত আনতে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। হাত না থাকা ব্যক্তিদের হাত লাগানোর পর তাদের যে অনুভূতি, তা নিয়ে একাধিক ভিডিও নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন জয় বড়ুয়া। সেই ভিডিও দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। ইউটিউবে আছে তার নিজের চ্যানেল। জয় বড়ুয়া জানিয়েছেন, দেশের বাইরে থেকেও হাত বানিয়ে দেওয়ার ফরমাশও পাচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে তুরস্কে পৌঁছে গেছে তার তৈরি এই রোবটিক হাত। এর জন্য খরচ পড়েছে বাংলাদেশী টাকায় ৮০ হাজার টাকা। অনেকেই তার এই রোবটিক হাতের খোঁজখবর রাখছেন।
কোম্পানি চালুর ইচ্ছা
জয় বড়ুয়া জানালেন, একটি রোবটিক হাত বানাতে খরচ লাগে ২০ হাজার টাকার বেশি। তারপর কোনো উপাদান দিয়ে বানানো হচ্ছে, দেশের বাইরে থেকে সিলিকন গ্লাভস আনাসহ সব মিলিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়। জয় বলেন, নিজের ইচ্ছায় বলতে গেলে একা একা কাজ করে এখন একটা পর্যায়ে আসতে পেরেছেন। এখন নোমান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ তার পাশে এগিয়ে এসেছে। তারা দুটি ল্যাব করে দেওয়ার কথা বলেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় টুকটাক সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। এখন মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন জয় বড়ুয়া। ফলে তার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। তিনি ভবিষ্যতে একটি রোবটিকস কোম্পানি চালু করতে চান। জয় বড়ুয়াকে সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল। তিনি বলেন, জয় বড়ুয়া ভালো করলে তাকে দেখে দেশের ছেলেমেয়েরা উৎসাহী হবে।
তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রগতির জন্য সরকারকে পলিটেকনিক্যালগুলোর দিকে নজর দিতে হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক লাফিফা জামাল। তিনি বলেন, ‘দেশে রোবটিক বিষয়টি নতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ নেই। কম্পিউটার সায়েন্স, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন জায়গার ছেলেমেয়েরা শিখে শিখে কাজ করছে। অলিম্পিয়াডে ঢাকার বাইরের ছেলেমেয়েরা অংশ নিচ্ছে। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভালো ল্যাব সাপোর্ট পাওয়া। সরকারি পর্যায়ে ল্যাব তৈরি করা গেলে ছেলেমেয়েরা আগ্রহী হবে।’