ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

রোবটের পরীক্ষা

বিচিত্র কুমার

প্রকাশিত: ২০:২৮, ৪ অক্টোবর ২০২৪

রোবটের পরীক্ষা

.

খুদে রোবটটার নাম ছিল টিকটিক। ছোট্ট রোবটদের গ্রামে সে নতুন এসেছে, কিন্তু খুবই আগ্রহী একটা বিষয়ে- বিজ্ঞান! তার মাথায় সবসময়ই বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার আইডিয়া ঘুরপাক খায়। সে শুনেছে, বড় রোবটরা প্রায়ই কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার করে, আর সেগুলোই তার ইচ্ছের মূল কারণ।
রোবটদের গ্রামে একটা বড় বিজ্ঞান প্রতিযোগিতা হবে শীঘ্রই। সবাই রোবট তৈরি করে, নানা রকম প্রজেক্ট বানায়। টিকটিক অনেক দিন ধরেই অপেক্ষায় ছিল এই প্রতিযোগিতার জন্য। এবার সে সুযোগ পেতে চলেছে। পরীক্ষায় সে এমন কিছু দেখাতে চায় যা আগে কেউ দেখেনি।

পরিকল্পনা

টিকটিক ভাবলো, কী প্রজেক্ট বানানো যায়? সে জানে, রোবটদের শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো শক্তি। গ্রামে অনেক রোবট আছে, যাদের শক্তি কম থাকে, তাই তারা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। টিকটিক সিদ্ধান্ত নিলো, সে এমন একটা শক্তির উৎস আবিষ্কার করবে যেটা সহজে পাওয়া যায়, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী এবং পরিবেশবান্ধব।
এবার শুরু হলো চিন্তা। কিভাবে এমন শক্তির উৎস তৈরি করা যায়? টিকটিক অনেক গবেষণা করল। দিনের পর দিন পরিশ্রম করে সে নতুন তথ্য জোগাড় করে, বই পড়ে, কম্পিউটারে সার্চ করে। একদিন হঠাৎ তার মাথায় এলো- এক গাছে নতুন ধরনের শক্তি পাওয়া যায়। গাছের পাতা সূর্যের আলো থেকে শক্তি শোষণ করে, আর টিকটিক ভাবলো, যদি সে এমন কিছু বানাতে পারে যা গাছের পাতার মতো কাজ করবে!

তৈরি প্রক্রিয়া

টিকটিক ঠিক করল, সে এক ধরনের ‘সোলার পাতা’ তৈরি করবে, যা সূর্যের আলোকে শক্তিতে রূপান্তরিত করবে। সে ল্যাবরেটরিতে ঢুকে নানা যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতে শুরু করলো। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে অনেকবার ব্যর্থতাও এলো। কখনো পাতাগুলো ঠিকমতো কাজ করছিল না, কখনো রোবটের শক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারছিল না। কিন্তু টিকটিক হাল ছাড়ল না।
ধীরে ধীরে তার পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করল। সে একগুচ্ছ পাতার মতো যন্ত্র বানাল, যেগুলো সূর্যের আলো ধরে রাখে এবং তা থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে। এই বিদ্যুৎ থেকে ছোট রোবটগুলো দীর্ঘ সময় কাজ করতে পারবে। শুধু তাই নয়, এই শক্তি কোনো ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন করে না, যা পরিবেশের জন্যও ভালো।

পরীক্ষার দিন

বিজ্ঞান প্রতিযোগিতার দিন এসে গেল। টিকটিক তার সোলার পাতার প্রজেক্ট নিয়ে মঞ্চে উঠল। বিচারকদের সামনে সে তার আবিষ্কার দেখানোর জন্য প্রস্তুত। বিচারকরা তার কাছে জানতে চাইলেন, কিভাবে এই প্রজেক্ট কাজ করে। টিকটিক আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল, ‘এটি একটি পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎস, যা সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে।’
বিচারকরা তার কথা শুনে বেশ অবাক হলেন। তারা চাইল, টিকটিক তার যন্ত্রটি চালিয়ে দেখাক। টিকটিক সূর্যের আলোতে তার সোলার পাতাগুলো লাগিয়ে দিল, আর দেখা গেল, তার বানানো রোবটগুলো বিদ্যুৎ পাচ্ছে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করছে। বিচারকরা একে অপরের দিকে তাকালেন। তারা বললেন, ‘এটা তো সত্যিই অসাধারণ!’ প্রতিযোগিতায় অনেক প্রজেক্ট ছিল, কিন্তু টিকটিকের সোলার পাতাগুলো এমনই একটি নতুন আইডিয়া ছিল, যা আগে কেউ দেখেনি।

নতুন যুগের সূচনা

টিকটিক প্রতিযোগিতায় প্রথম হলো। গ্রামে সবাই তার প্রশংসা করল। তার তৈরি সোলার পাতাগুলো এখন রোবট গ্রামে নিয়মিত ব্যবহার হতে শুরু করল। আর সব রোবটরাই বিদ্যুৎ নিয়ে চিন্তামুক্ত হলো।
টিকটিকও অনেক খুশি। সে জানে, সে শুধু একটি পরীক্ষায় জয়ী হয়নি, বরং একটা বড় সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। এখন তার গ্রামের রোবটগুলো বেশি শক্তিশালী হয়ে কাজ করছে, আর পরিবেশও রক্ষা পাচ্ছে।
এইভাবে টিকটিকের বিজ্ঞান পরীক্ষা নতুন যুগের সূচনা করল, যেখানে শক্তি আর পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি হাত ধরাধরি করে এগিয়ে চলল।

×