.
বর্তমানে সবাই-ই ঝুঁকছেন প্রযুক্তির দিকে। আর প্রযুক্তিও আমাদের জীবনের নানান সমস্যার সহজ সমাধান নিয়ে হাতছানি দিচ্ছে। এই আহবান উপেক্ষা করার উপায় নেই। আবার সবাই-ই যে এর ভালো ব্যবহার করতে পারেন বা এই খাতে সফল হতে পারেন এমনও নয়। তবে সহজে কিছু উপায় বলে দেওয়া যায়, যেগুলো সাফল্যের পথে কাজে লাগতে পারে। শুধু প্রযুক্তিতেই নয়, যে কোনো পেশা বা ব্যবসায় সফল হতে প্রয়োজন কিছু মৌলিক পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মনোবিদ ক্যারোল ডোয়েক মানুষের আচরণ ও পারফরম্যান্স নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। তার গবেষণা অনুযায়ী, সফল হওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের বুদ্ধিমত্তার চেয়ে তার আচরণ ভালো পূর্বাভাস দিতে পারে। ডোয়েকের মতে, মানুষের মূল আচরণকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে স্থায়ী মানসিকতা (ফিক্সড মাইন্ডসেট) ও আরেকটি হচ্ছে বিকাশমান মানসিকতা (গ্রোথ মাইন্ডসেট)। আপনার মানসিকতা কোনো ধরনের? মানসিকতা যে ধরনের হোক না কেন, আপনি চাইলে তা পরিবর্তন করে বিকাশমান মানসিকতা উন্নত করতে পারেন। এ জন্য কিছু পরিকল্পনা করে এগোতে পারেন। জেনে নিন পরিকল্পনাগুলো-
অসহায় ভাববেন না
সবার জীবনেই কঠিন সময় আসতে পারে। তাই বলে নিজেকে পুরোপুরি অসহায় ভাববেন না। অসহায়ত্বের অনুভূতিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সেটাই আসল পরীক্ষা। এটা থেকে কিছু শিখতে পারেন এবং সামনে এগিয়ে যেতে পারেন। তা না হলে আরও করুণ অবস্থায় পড়ে যাবেন। অনেকেই অসহায় অবস্থা থেকে নিজেকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে গেছেন।
আবেগপ্রবণ হোন
একজন সফল মানুষ নিরলসভাবে তার অনুভূতি অনুসরণ করে থাকেন। প্রাকৃতিকভাবে কেউ হয়তো আপনার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হতে পারে। কিন্তু বুদ্ধিতে আপনার ঘাটতি থাকলে তা আবেগ দিয়ে পূরণ করতে পারেন। যারা সফল হয়েছেন, তারা আবেগের কঠোর সাধনা করে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসেছেন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেটের পরামর্শ হচ্ছে আপনার সত্যিকারের আবেগের বিষয়টি ৫/২৫ পদ্ধতিতে খুঁজে বের করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে আপনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন- এমন ২৫টি বিষয় লিখে ফেলুন। এরপর নিচের ২০টি বিষয় বাদ দিন। যে ৫টিকে আপনি গুরুত্ব দেন তাই আপনার প্রকৃত আবেগ। বাকিগুলো আপনার চিত্তবিক্ষেপ।
ব্যবস্থা নিন
বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তিরা কেবল ভয়কে জয় করেন না, তাদের সাহস অন্যদের চেয়ে বেশি। এর কারণ, তারা জানেন ভয় ও উদ্বেগ আবেগকে নষ্ট করে দেয়। এ থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে ভয় ও উদ্বেগের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তিরা নিজেদের নিজের মনের সক্ষমতা বাড়াতে জানেন। তারা জানেন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সঠিক মুহূর্ত বলে কিছু নেই। তাই অপেক্ষা কিসের? যেকোনো বিপত্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা উদ্বেগ দূর করে ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলতে হবে। ইতিবাচক শক্তি অর্জন করতে হবে।
বাড়তি পথ পাড়ি
সফল ব্যক্তিরা কখনো হতোদ্যম হন না। তাদের বাজে দিনেও সবকিছু দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। নিজেকে সামনে এগিয়ে নিতে বাড়তি পথ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালান। ব্রুস লির এক ছাত্র প্রতিদিন তার সঙ্গে তিন মাইল দৌড়াতেন। একদিন তিন মাইল পথ ছোঁয়ার পথে ব্রুস লি বললেন, চলো আরও দুই মাইল দৌড়াই।
তার ছাত্র ক্লান্ত হয়ে পড়ে বললেন, আরও দুই মাইল দৌড়াতে গেলে আমি মারা যাব। ব্রুসলি বললেন, তবে দৌড়াও। তার ছাত্র রেগে গিয়ে আরও পাঁচ মাইলের সীমা অতিক্রম করে ফেলল। খেপে গিয়ে ওই মন্তব্য নিয়ে ব্রুস লির কাছে জবাব চাইলেন ওই ছাত্র। ব্রুস লি তাকে বোঝালেন, ‘থেমে যেতে বা মরে যেতে পারতে। কিন্তু যদি তুমি যা পার, সেখানেই তোমার সীমা নির্ধারণ করে ফেল, তবে তা সারা জীবনে তোমার ওপর প্রভাব ফেলবে। এটা তোমার কাজে, নৈতিকতাসহ সবকিছুতে ছড়িয়ে যাবে। সীমা বলে কিছু নেই। স্থিরতা আছে, কিন্তু সেখানে থেমে গেলে চলবে না। তা ছাড়িয়ে যেতে হবে।
ফলের প্রত্যাশা
বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তিরা জানেন, তারা সময়-সময় ব্যর্থ হতে পারেন। তবে তারা ফলের আশা করতে ছাড়েন না। ফলের প্রত্যাশা থাকার অর্থ নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখা এবং সফলতার চক্রে জ্বালানি জোগানো। যদি ভালো ফলের আশা না থাকে তবে কেন এত কিছু করার তাড়া থাকবে?