ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নারী

আশিক আবরার

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৫ জুলাই ২০২৪

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নারী

প্রযুক্তি বিষয়ক একটি কর্মশালায় ফটোসেশনে অংশ নেন ক’জন নারী

গোলাপি রং কি মেয়েদের বেশি পছন্দের! হয়তো অনেকেই বলবেন বিষয়টা আপেক্ষিক। কিন্তু মেয়েদের বড় একটা অংশই যে এই রং পছন্দ করেন, তা তো সত্যই। এই সত্য আরও উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয় যখন পৃথিবীর বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের মজলিসে হাজির হয় এক গোলাপি রোবট! রংটা তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তারুণ্যে ভরপুর বিজ্ঞানীদের দলে ছিলেন মেয়েদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি। মঙ্গলের বুকে রোবটযানকে কতটা উন্নত করা যায়- এই ছিল প্রতিযোগিতার বিষয়। আমেরিকার ইউটা মরুভূমির দুর্গমতা জয় করে সেদিন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নজর কেড়েছিল অস্ট্রেলিয়ার সেই গোলাপি রোবট।

বছরই আলোর স্পন্দনের সন্ধান দিয়ে পদার্থবিদ্যায় যৌথ মনোনয়নে নোবেল পান তিন দেশের তিন বিজ্ঞানী। এই তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন ফ্রান্সের বিজ্ঞানী অ্যানে এলহুইলার। দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে পদার্থবিজ্ঞানে পঞ্চম নারী হিসেবে তিনি নোবেল পেয়েছেন। সমস্ত পৃথিবীতেই যে সময়ে বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে নারীরা অনেকটাই পিছিয়ে, সেসময় বিজ্ঞানে অ্যানের এই নোবেল প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। এছাড়া গত বছর অর্থশাস্ত্রে প্রথম মহিলা একক নোবলপ্রাপক ছিলেন ক্লডিয়া গোল্ডিন, চিকিৎসাশাস্ত্রে পুরস্কৃত কাতালিন কারিকো। আর শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ইরানের নার্গিস মহম্মদি।

এবার আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে নারী বিজ্ঞানী প্রযুক্তিবিদদের সাফল্য লক্ষণীয়। ফোর্বস পত্রিকার বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী একশো নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন আইআইটির প্রাক্তন বাঙালি ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সোমা -ল। এছাড়া চন্দ্রযান--এর সাফল্যের পেছনেও কল্পনা কলাহাস্তি তার সহকর্মীদের ভূমিকাও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রভূত প্রশংসা পেয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, দেশটিতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে স্নাতক  স্নাতকোত্তরদের মধ্যে মেয়েদের অনুপাত ৪৩ শতাংশ। আমেরিকা, কানাডা ব্রিটেনে এই হার যথাক্রমে ৩৪, ৩১ ৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ভারতীয় মেয়েরা বিজ্ঞান শিক্ষায় এগিয়ে। যদিও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি পেশায় সেদেশে মেয়েদের উপস্থিতি মাত্র ২৮ শতাংশ।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থাটা কেমন? তুলনা না করেও যদি সামগ্রিক চিত্রটি সামনে আনা যায়, তাহলে দেখা যায়- পেশাগত কারিগরি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারী এখনো পিছিয়ে আছে। দেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে পুরুষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫৮ শতাংশ, নারী ৪২ দশমিক শতাংশ। শহরের তুলনায় গ্রামের নারী বেশি পিছিয়ে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির আশানুরূপ উদ্যোগ না থাকায় নারী পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর পিছিয়ে থাকার চিত্র উঠে এসেছে। বিবিএসের তথ্যানুযায়ী দেশে বছরের ঊর্ধ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ২০২৩ সালে ছিল ৪৫. শতাংশ। ২০২২ সালে ছিল ৪১ শতাংশ। ২০২৩ সালে বছরের ঊর্ধ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পুরুষদের মধ্যে ৫১. শতাংশ, নারীদের মধ্যে ৩৯. শতাংশ। বছরের ঊর্ধ্বে গ্রামের নারীদের মধ্যে ৩৫. শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। শহরে এই হার ৫১. শতাংশ। ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫০. শতাংশ। এই বয়সে শহরের নারীদের মধ্যে ইন্টারনেট গ্রহীতা ৫৬ শতাংশ, গ্রামে ৩৮. শতাংশ। বিবিএসের তথ্য আরও বলছে, দেশের প্রায় ৬৩ শতাংশ নারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ২০২০ সালে ছিল ৬৩ দশমিক শতাংশ। অর্থাৎ মোবাইল ব্যবহারকারী

২০২১ সালের জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিতজেনারেশন ইকুইটি ফোরাম’-  বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেটেক স্টার্টআপ -কমার্সসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ ২০২৬ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগশী পাওয়ারপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মাধ্যমে ২১টি জেলায় ১০ হাজার ৫০০ নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। অন্য ৪৩টি জেলায়হার পাওয়ারপ্রকল্পের মাধ্যমে আরও ২৫ হাজারের বেশি স্মার্ট নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে বলে আইসিটি বিভাগ জানিয়েছে। তবে প্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে এসব উদ্যোগ খুব বেশি কার্যকর হচ্ছে না। সরকারি হিসাব বলছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে যারা পড়াশোনা করে তাদের ২৯ শতাংশ নারী। কর্মক্ষেত্রে মাত্র ১২ শতাংশ নারী তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, যাদের অধিকাংশই প্রাথমিক বা মধ্যম পর্যায়ের কর্মী। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অবস্থান শতাংশেরও কম। ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তিতে নারী উদ্যোক্তা শতাংশেরও কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নরীদের দক্ষ করে গড়ে না তোলায় অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির ইতিহাসের সঙ্গে নারীদের নাম জড়িয়ে আছে। নারীরা বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছেন। পোল্যান্ডের ওয়ারশতে জন্ম নেওয়া মেরি কুরি হলেন- তার এক অনবদ্য উদাহরণ।

তিনি রেডিয়াম পোলোনিয়াম আবিষ্কার করেছিলেন। তিনিই প্রথম নারী যিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান এবং রসায়নেও তিনি নোবেল পুরস্কার পাওয়া প্রথম ব্যক্তি। বাংলাদেশের নারীরাও নিরলস কাজ করছেন বিজ্ঞান নিয়ে। আমি মনে করি, সঠিক পরিবেশ পেলে বাংলাদেশের নারীরাও একদিন নোবেল জয়ের মতো যোগ্যতা অর্জন করবেন।

×