ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

অনলাইনে জালিয়াতির শিকার ইউরোপ-আমেরিকার লাখ লাখ মানুষ

প্রকাশিত: ২১:০৫, ৮ মে ২০২৪

অনলাইনে জালিয়াতির শিকার ইউরোপ-আমেরিকার লাখ লাখ মানুষ

অনলাইনে জালিয়াতি

সময় যত গড়াচ্ছে প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন মানুষ। দিনে দিনে অনলাইনে অভ্যস্ততা বাড়ছে বিশ্ববাসীর। একদিকে স্বস্তির খবর এটা হলেও এর বিপরীত দিক রয়েছে। অনলাইনে জালিয়াতির ঘটনাও কম নয়। গত কয়েক বছরে ইউরোপ-আমেরিকার লাখ লাখ মানুষ অনলাইনে জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। 

বুধবার (৮ মে) দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

 প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনলাইনে জালিয়াতির বিষয়ে দ্য গার্ডিয়ান, জার্মানের ডি জায়েট ও স্পেনের লা মন্ডে যৌথভাবে এক অনুসন্ধান চালিয়েছে। এতে দেখা গেছে, অনলাইন ডিজাইনার শপের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আট লাখের বেশি মানুষের ব্যাংক কার্ডের বিপুল পরিমাণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। জালিয়াতি করা এসব ওয়েবসাইট চীন থেকে পরিচালনা করা হয়েছে।

চীনের এ ধরনের জালিয়াতিকে সবচেয়ে বড় জালিয়াতি বলে আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের চার্টার্ড ট্রেডিং স্ট্যান্ডার্ড ইনস্টিটিউট। অনুসন্ধান বলছে, এসব জালিয়াতির জন্য প্রায় ৭৬ হাজার ফেক ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। সাংবাদিক ও আইটি স্পেশালিস্টরা বলছেন, এ ধরনের জালিয়াতি খুবই দক্ষ ও গোছানো উপায়ে করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিকভাবে এমন কার্যক্রম চালাতে চীনা প্রোগ্রামাররা হাজারো ভুয়া অললাইন ওয়েবসাইট তৈরি করেন। এসব সাইটে ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে ডিওর, নাইকি, ল্যাকোস্টে, হিউগো বস এবং ভারস্যাচে অ্যান্ড প্রাডার মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রয় করা হতো। সাইটগুলো পরিচালিত হতো একাধিক ভাষায়। যেখানে লোভনীয় অফার দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হতো ব্যক্তিগত তথ্য।

তদন্তে দেখা গেছে, যেসব চীনা ওয়েবসাইট ব্র্যান্ডের পণ্য ডিসকাউন্টে বিক্রি করত সেগুলোর সঙ্গে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পর্কই ছিল না। এমনকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব সাইটে অর্ডারকারীরা তাদের পণ্য বুঝে পাননি। ২০১৫ সালে প্রথম এ ধরনের ওয়েবসাইট চালু হয়। মাত্র তিন বছরে এসব সাইটে ১০ লাখের বেশি অর্ডার আসে। এসব অর্ডারের মূল্য পরিশোধ করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পণ্য দেওয়া হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ওয়েবসাইটে খুব বেশি দামি পণ্য বিক্রি করা হতো না। বড়জোর ৫০ ইউরোর সমপরিমাণ মূল্যের পণ্য অর্ডার নিত এসব সাইট। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বর্তমানে এসব ভুয়া ওয়েবসাইটের দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ বা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখনো এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় সাড়ে ২২ হাজারের বেশি কার্যকর করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম তিনটির তথ্য বলছে, এসব ওয়েবসাইটে প্রায় আট লাখ ইউরোপ আমেরিকার মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। তাদের প্রায় সবার ব্যক্তিগত মেইল ফাঁস হয়েছে। এছাড়া চার লাখ ৭৬ হাজার মানুষ তাদের ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সাইটগুলোর সঙ্গে শেয়ার করেছেন। এমনকি গোপন পিনও শেয়ার করেছেন তারা। এছাড়া সবাই নিজের নাম, মোবাইল নম্বর এবং পোস্টাল কোডও শেয়ার করেছেন। যুক্তরাজ্যের চার্টার্ড ট্রেডিং স্ট্যান্ডার্ড ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ক্যাথরিন হার্ট বলেন, এ অপারেশন আমার দেখা ভুয়া অনলাইন শপের মাধ্যমে পরিচালিত সবচেয়ে বড় জালিয়াতির ঘটনা। এরা সুসংগঠিত হয়ে তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে।

সফটওয়্যার কোম্পানি ইসেটের গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি উপদেষ্টা জেক মুর বলেন, বর্তমানে তথ্যই হলো নতুন মুদ্রা। এ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য নজরদারির জন্য পরিচালিত বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খুবই মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

 

শহিদ

×