ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

অধ্যাপক আবু জাফর সিদ্দিক

ডিজিটাল গেইমিং হতে পারে দেশের অর্থনীতির নতুন শিল্প খাত

প্রকাশিত: ১৮:২৯, ১৪ আগস্ট ২০২৩; আপডেট: ১৯:০০, ১৪ আগস্ট ২০২৩

ডিজিটাল গেইমিং হতে পারে দেশের অর্থনীতির নতুন শিল্প খাত

মোবাইল গেইমিং

আজকের বিশ্ব ডিজিটাল পরিবর্তন এবং বিবর্তনের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনে মোবাইল গেইমিং বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। বাংলাদেশের মতো খুব কম দেশই আছে যেখানে মোবাইল গেইমিংয়ের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়। কারণ বাংলাদেশের একই সঙ্গে আছে তরুণ জনগোষ্ঠী এবং ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তির সুবিধা। 

শিক্ষাবিদরা এই গেইমিংকে ‘মোবাইল গেইমিং বা ডিজিটাল স্পোর্টস’ বলে আখ্যা দেন যেটি কেবল বিনোদনের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই। এই খাতে এখন সৃষ্টি হচ্ছে- নতুন কর্মসংস্থান এবং ত্বরান্বিত হচ্ছে- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। দেশের অগ্রগতির জন্য এই ক্ষেত্রটি তৈরি করতে পারে নানান সুযোগ।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী। যার মধ্যে তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত প্রবলভাবে। স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট প্রসারের কারনে লাখ লাখ বাংলাদেশি মোবাইল গেইমিংয়ের সুযোগ পাচ্ছে। যা তাদের জন্য হয়ে উঠেছে এক ধরনের বিনোদন। 

সাম্প্রতিক এক তথ্য সূত্রে জানা যায় যে, মোবাইল গেইমিংয়ের গেইমারদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা কিনা গেইমিং থেকে ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা পেতে এখানে যুক্ত হচ্ছে। গেইমিংয়ের এই ধারা শুধুমাত্র অবসর সময় কাটানোর ক্ষেত্রতেই পরিবর্তন নিয়ে আসেনি বরং এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকেও তুলে ধরছে।

মোবাইল গেইমিংয়ের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, দক্ষ পেশাদারদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে যাদের প্রয়োজন গেইমিংয়ের ডিজিটাল দিকগুলো তৈরি, পরিচালনা এবং বাজারজাত করার জন্য। এই চাহিদাটির জায়গা থেকেই নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির শুরু হতে পারে। বিশেষভাবে সৃজনশীলতা এবং প্রযুক্তির কাজে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন বেশি দেখা যায়।

গেইমিংয়ের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা থাকায় সারা পৃথিবীজুড়ে বহু দেশ তাদের গেইমিং শিল্পে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। একইভাবে যদি বাংলাদেশও দূরদর্শিতার সাথে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহন করতে পারে, তাহলে এখানেও গেইম ডেভেলপার, প্রোগ্রামার এবং বিপণনকারীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত তেমন একটি উদাহরণ। মোবাইল গেইমিংয়ের আবির্ভাবকে শিল্প খাতের একটি অংশ হিসেবে গড়ে তুলতে তারা এটিকে প্রাধান্য দিয়েছে। যার ফলে দেশটি এই খাত থেকে এখন লাভবান হচ্ছে।

বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস গেইম ডেভেলপারদের জন্য প্রেরণা। কারন এখান থেকেই তৈরি হতে পারে গেইমিংয়ের প্রেক্ষাপট এবং চরিত্রগুলো। স্থানীয় লোককাহিনী, ঐতিহাসিক ঘটনা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আকর্ষনীয় গেইমিং অভিজ্ঞতার ভিত্তি হিসাবে কাজ করতে পারে। এই সাংস্কৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশ বিনোদনমূলক বিষয়বস্তু তৈরি করতে পারবে। বিশ্ব বাজারে যা রপ্তানি করার সম্ভাবনা রয়েছে।

গেইম নির্মাণে দেশের ঘটনা বা গল্পের অন্তর্ভুক্তি তরুণদের মধ্যে জাতীয় গর্ব এবং পরিচয়ের বোধও জাগিয়ে তুলতে পারে। এতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে, তরুণ বাংলাদেশিরা একটি নিজের চিন্তা-ভাবনাকে তুলে ধরার একটি জায়গা খুঁজে পাবে এবং দেশের সংস্কৃতি ধরে রাখতেও অবদান রাখতে পারবে।এটি তখনই সম্ভবপর হবে যখন তাদের দক্ষতা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে।

মোবাইল গেইমিংকে কোন ট্রেন্ড ভাবলে ভুল হবে; কারন ক্রমশ এটি একটি অর্থনৈতিক খাতে পরিনত হয়েছে যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সংস্কৃতি রক্ষায় ক্ষমতা রাখছে। দেশের তরুণদের কর্মক্ষম করার এটি একটি সুযোগ। যেখানে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সাথে টিকে থাকতে দক্ষ পেশাদার হতে হবে। গেইমিং নিয়ে বিধিনিষেধের পরিবর্তে, কর্তৃপক্ষের উচিত এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যা গেইমিংয়ে উদ্ভাবনী এবং উদ্যোগমূলক কাজ করতে উত্সাহিত করে।

স্থানীয় গেম ডেভেলপার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প বিশেষজ্ঞরা একত্রে কাজ করে গেইমিংয়ের সঠিক কাঠামো এবং নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠা করতে পারে।যা দায়িত্বশীল গেইমিং পরিবেশ গড়তে সহায়ক হবে। এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করবে না বরং একইসাথে গেইমিংয়ের ডিজিটাল জগতে দিবে সুরক্ষার নিশ্চয়তা। 

আন্তঃসংযোগ এবং ডিজিটাল বিশ্বায়নের যুগে, প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে। এই সুযোগকে উপেক্ষা না করে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর অংশীদার হতে হবে। উদ্বুদ্ধ করতে হবে বিদেশী বিনিয়োগ। তবে সেটির আগে তরুণদের প্রতিভা তুলে ধরতে ব্যবহার করতে হবে বিশ্বের গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলো। গেইমিং শিল্পে পৃথিবীর বড় কোম্পানিগুলোর সাথে সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যবহৃত হতে পারে বাংলাদেশের দক্ষতা, সম্পদ এবং জ্ঞান।

সর্বোপরি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, উদ্ভাবন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি প্রবেশদ্বার হয়ে উঠতে পারে মোবাইল গেইমিং বা ডিজিটাল স্পোর্টস। যা বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লবের সূচনারই একটি অংশসরূপ। এই শিল্পের সকল সুযোগ এবং সম্ভাবনাগুলোকে অনুধাবন করতে পারলে বাংলাদেশ একটি গতিশীল এবং ভিন্নধর্মী ডিজিটাল অর্থনীতি গঠন করতে পারবে। 

সহজাত প্রযুক্তিগত দক্ষতা দিয়ে তরুণরা দেশের গেমিং জগতে পরিবর্তন আনতে পারবে যা দেশের উন্নয়ন এবং বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি অর্জনেও ভূমিকা রাখবে।

লেখক: শিক্ষাবিদ এবং অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক

এসআর

×