আইটি (ইনফরমেশন টেকনোলজি) শব্দটির সঙ্গে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত
আইটি (ইনফরমেশন টেকনোলজি) শব্দটির সঙ্গে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। একইভাবে তথ্যপ্রযুক্তি বা ইনফরমেশন টেকনোলজির সঙ্গে আমরা সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। আইটি সেক্টর কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা সীমাহীন। এজন্য দরকার উদ্যোগ ও সঠিক ধারণা। আমাদের অনেকের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা কাজ করে; যেমন- আইটি সেক্টরে অর্থ উপার্জন বলতে শুধু আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং বা ইউটিউবিং এগুলোই বুঝি। আবার অনেকে ধারণা করি, আইটি সেক্টরে অর্থ উপার্জন করতে সব ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। এক্ষেত্রে অনলাইনের বিভিন্ন রিসোর্স থেকে জ্ঞানার্জন করতে হবে।
দিন যত যাচ্ছে, আইটি খাতের পরিসরও বড় হচ্ছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে, কাজের দক্ষতা না থাকা। তাই এ পেশায় আসার আগে নিজেকে দক্ষ ও উপযুক্ত হিসেবে তৈরি করে নিতে হবে। শুধু একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ, অনেক ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ হলেই ঘরে বসেও আয় করা যায়।
আইটি সেক্টর ব্যবহার করে অনেক মাধ্যমে উপার্জন করা সম্ভব; যেমন- ডেটা এন্ট্রি, নিজের ওয়েবসাইট তৈরি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনুবাদ, ফ্রিল্যান্সিং, ব্লগিং, ইউটিউব, পিটিসি, ওয়েব ডিজাইন, অনলাইন টিউটর, গ্রাফিকস ডিজাইন প্রভৃতি।
অনলাইনে সহজ কাজগুলোর একটি হচ্ছে ডেটা এন্ট্রি। এ ধরনের কাজ যে কেউ করতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে আয় খুব কম। অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সিং সাইটে এ ধরনের কাজ থাকে। তবে দ্রুতগতির টাইপিং দক্ষতা থাকতে হবে; সঙ্গে লাগবে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট। তবে কাজের দক্ষতা বাড়লে দ্রুত আয় বাড়ানো সম্ভব।
বর্তমানে অনলাইনেই ওয়েবসাইট তৈরির জন্য অনেক উপাদান পাওয়া যায়। এসব উপাদান ব্যবহার করে নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। যেমন, ডোমেইন নির্বাচন, টেমপ্লেট ও ওয়েবসাইট তৈরির নকশা প্রভৃতি। পাঠক বা দর্শক ওয়েবসাইটের বিভিন্ন কনটেন্ট চেক করবে। যখন গুগলের বিজ্ঞাপন সাইটে দেখানো শুরু হবে এবং তাতে ক্লিক পড়বে, তখন গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয় আসতে শুরু করবে। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে দর্শক যত বেশি হবে, আয়ের পরিমাণও তত বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশে রাইডভিত্তিক অ্যাপ সহজ, ওভাই, পাঠাও প্রভৃতি বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে আয় করছে।
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ¯œ্যাপচ্যাট এখন আর শুধু যোগাযোগের জন্য নয়। এগুলো ব্যবহার করে আয়ও করা যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড তাদের প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া পরিকল্পকদের প্রচুর অর্থ দেয়। বিভিন্ন পোস্ট তৈরি, ভিডিওর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় তা প্রকাশ করে ভাইরাল করতে পারলে ভালো অর্থ আসে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্যান-ফলোয়ার তৈরিসহ তাদের ধরে রাখতে অনেক ধৈর্য ও সৃজনশীল হওয়া জরুরি।
বেশকিছু ওয়েবসাইট আছে, যেখানে বিভিন্ন ডকুমেন্ট অনুবাদ করে আয় করা যায়। ইংরেজির পাশাপাশি অন্য কোনো ভাষা ভালোভাবে জানা থাকলে এক্ষেত্রে বেশি আয় করা যায়। যেমন স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, আরবি, জার্মানসহ অন্যান্য ভাষা জেনে এবং সেগুলো থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ বা ইংরেজি থেকে এসব ভাষায় অনুবাদ করতে পারলে আয় করা সম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে এ ধরনের কাজ পাওয়া যায়।
অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি ওয়েবসাইট বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সারের কাজের সুযোগ দেয়। এসব কাজের জন্য দক্ষতা অনুযায়ী অ্যাকাউন্ট খুলে আবেদন করতে হয়; একই সঙ্গে দক্ষতার বিবরণ জানাতে হয়। কাজদাতারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সরাসরি ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ দেয়।
এসব সাইটের মধ্যে ফ্রিল্যান্সার ডটকম, আপওয়ার্ক ডটকম, ফাইভার ডটকম ও ওয়ার্কএনহায়ার ডটকমে ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়া যায়। তবে এসব সাইটে কাজ শেষ করার পর কাজদাতার অনুমোদন পেলেই পেমেন্ট পাওয়া যায়। এসব সাইট থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
লেখালেখির সখ অনেকেরই আছে। তবে এই সখের বিষয়টি কাজে লাগিয়ে অনলাইনে আয় করা সম্ভব। অনলাইনে এই লেখালেখির কাজকে ‘ব্লগিং’ বলা হয়। দুই উপায়ে ব্লগ থেকে আয় করা যায়। একটি হচ্ছে নিজের ব্লগ সাইট তৈরি। এক্ষেত্রে ব্লগ চালু করতে গেলে কিছু বিনিয়োগ করতে হবে। অন্যটি ওয়ার্ডপ্রেস বা টাম্বলার প্লাটফর্মে বিনামূল্যে ব্লগ শুরু করা যায়। আবার চাইলে নিজে ডোমেইন হোস্টিং কিনে ব্লগ চালু করতে পারেন। তবে ব্লগিং করে রাতারাতি আয় আসবে না। এ জন্য প্রচুর সময় ও ধৈর্যের প্রয়োজন। অনেক সময় ব্লগ থেকে আয় করতে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যায়। নিয়মিত কনটেন্ট আপডেট এবং তা সক্রিয় রাখতে হয়।
ইউটিউব বিষয়টি অনেকটা ব্লগের মতোই। তবে এ ক্ষেত্রে কনটেন্ট হচ্ছে ভিডিও। যারা ব্লগ লিখে আয় করতে চান না, তাদের ক্যামেরার সাহায্য নিয়ে ভিডিও থেকে আয় করতে ইউটিউব। এজন্য ভালো সম্পাদনা ও সৃজনশীল হতে হবে। নিজেই ইউটিউবে চ্যানেল খুলে তাতে ভিডিও আপলোড করতে হবে। চ্যানেল কোন ক্যাটাগরির এবং তাতে কোন ধরনের ভিডিও রাখা যাবে তা আগেই ঠিক করতে হবে। এক্ষেত্রে ভিডিও না দেখলে আয় হবে না। তাই যে বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি, সে বিষয়ে ভিডিও দিতে হবে। ভিডিও দেখার সময় ও চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বাড়লে আয়ের সম্ভাবনাও বাড়ে। ইউটিউবে ভিডিও ভিউর হিসাবে গুগল থেকে অর্থ প্রেরণ করা হয়।
শুধু বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেও অনলাইনে আয় করা যায়। এমন কিছু ওয়েবসাইট আছে, যা থেকে এ আয় করা সম্ভব। এ ধরনের সাইটকে ‘পিটিসি’ সাইট বলে। এসব সাইটে আগে নিবন্ধন করতে হয়। তবে পিটিসি সাইটগুলো বেশিরভাগই ভুয়া হয়। এজন্য কাজের আগে নিশ্চিত হতে হবে সাইটটি সঠিক কি না।
বর্তমানে অনলাইনের কাজের ক্ষেত্রে ওয়েব ডিজাইনের চাহিদা বেশি। অনেক ব্যবসায়ী নিজেদের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান। এক্ষেত্রে তাদের ওয়েব ডিজাইনারের দরকার পড়ে। যারা ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে চান, তারা ওয়েবসাইট তৈরি করে আয় করতে পারেন। ওয়েবসাইট তৈরিতে এখন কোডিং আর ওয়েব ডিজাইন দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনা ও আপডেটের জন্যও ওয়েব ডিজাইনারের প্রয়োজন হয়। ফলে ওয়েব ডিজাইনারকে বসে থাকতে হয় না। কোনো কোনো প্রজেক্টে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত সহজে আয় করা যায়।
অনলাইন টিউটরদের দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনলাইন টিউশনি করা যায়। কোনো বিষয়ে যদি পারদর্শিতা থাকে, তবে অনলাইনে সে বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যায়। দেশের বাইরেও শিক্ষার্থীদের পড়ানো যায়। সুবিধামতো সময়ে পড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এসব সাইটে নিজের দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হয়। একবার নির্বাচিত হয়ে দক্ষতা বাড়ালে এ ক্ষেত্র থেকে অনেক আয় করার সুযোগ আছে।
গ্রাফিকস ডিজাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে অনলাইনে আয় করা যায়। এ কাজে দক্ষরা বিভিন্ন ডিজাইন অনলাইন মার্কেট প্লেসগুলোয় দিয়ে রাখেন। অনলাইনে এ ধরনের অনেক ওয়েবসাইটে গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজ বিক্রি করা যায়। সেখান থেকে তাদের আয় আসে। একটি ডিজাইন তৈরি করে অনেকবার বিক্রি করা যায়; অর্থাৎ একটি ভালো গ্রাফিকস ডিজাইন থেকেই দীর্ঘদিন পর্যন্ত আয় হতে থাকে।