ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সব খবর

প্রতি ২৬ সেকেন্ডে একবার হার্টবিট হয় পৃথিবীর!

প্রতি ২৬ সেকেন্ডে একবার হার্টবিট হয় পৃথিবীর!

পৃথিবীর গভীরে, আমাদের অজান্তেই প্রতি ২৬ সেকেন্ডে একবার ঘটে যাচ্ছে এক রহস্যময় কম্পন— যেন পৃথিবীর একটি শান্ত ও স্থির হৃদস্পন্দন। এই আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক ঘটনাটি বিজ্ঞানীদের বহু দশক ধরে চমকে দিচ্ছে, যার প্রকৃত উৎস এখনো অজানা। এই ক্ষীণ কিন্তু নিয়মিত কম্পনকে বলা হয় “২৬-সেকেন্ড মাইক্রোসিসমিক ব্যান্ড”। এটি মূলত মহাসাগরের গভীর থেকে উৎপন্ন হয়ে গোটা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরণের কম্পন অতীতের কোনো বড় ভূমিকম্প নয়, বরং এক ধরণের নীরব সংকেত, যা টেকটোনিক ও মহাসাগরীয় গতিবিধির সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এই ‘হার্টবিট’-এর উৎস খুঁজতে বিভিন্ন তত্ত্বের দিকে ঝুঁকেছেন। একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, বিশাল মহাসাগরীয় ঢেউ যখন উপকূল বা সমুদ্রতলের নির্দিষ্ট অংশে আঘাত হানে, তখন তা নিয়মিত চাপ সৃষ্টি করে, যা এই ছন্দময় কম্পনের কারণ হতে পারে। অন্য এক তত্ত্বে বলা হয়েছে, সমুদ্রতলের নিচে থাকা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত কিংবা টেকটোনিক প্লেটের চলাচল এই কম্পন সৃষ্টি করে। এমনও ধারণা রয়েছে, সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত সেডিমেন্ট বা তলানির স্তরের ক্ষুদ্র ফাটল বা সরে যাওয়া থেকে এই মাইক্রোস্পন্দন উৎপন্ন হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখনো এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা দিতে পারেননি, তবে গবেষণা চলছে পুরোদমে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আশা করা হচ্ছে, একদিন হয়তো এই নীরব হৃদস্পন্দনের প্রকৃত উৎস ও প্রভাব আমরা পুরোপুরি জানতে পারব। ততদিন পর্যন্ত, পৃথিবীর এই ২৬ সেকেন্ড অন্তর হওয়া ‘হার্টবিট’ আমাদের মনে করিয়ে দেয়— এই গ্রহটি শুধু স্থির নয়, বরং তার ভেতরেও চলছে এক ছন্দময় প্রাণচাঞ্চল্য।

উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিতে সমতার বিশ্ব

উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিতে সমতার বিশ্ব

উদ্ভাবন ও যান্ত্রিক কলা-কৌশলে নারীর পিছিয়ে থাকা সমাজ সংস্কারের প্রচলিত বিধি। বর্তমানে নারী সমাজ সমতার আলোকে নিজেদের এগিয়ে নিচ্ছে। সমান সংখ্যক নারীকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে চলতে সবার আগে প্রয়োজন যথার্থ মানুষের কাতারে দাঁড়িয়ে সব ধরনের কার্য ক্ষমতায় নিজেদের শামিল করা। এমনিতেই প্রচলিত সংস্কারে নারী-পুরুষ দুই বিপরীত অবস্থানে। সেখানে উন্নত-অনুনন্নত বিশ্বের ফারাক যেমন বিদ্যমান একইভাবে শহর ও গ্রামের তারতম্য দৃষ্টিকটুভাবে নজর এড়িয়ে যায় না। শিক্ষা থেকে আরম্ভ করে সামাজিকভাবে সব ধরনের অর্জনে নারীদের পশ্চাদগামিতা পুরো সমাজকে বৈষম্যপীড়িত হতে কেমন যেন তাড়া করে। তবে বর্তমান উন্নত বাংলাদেশ থেকে বিশ্বে নারীদের দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে চলা নতুন সময়ের বরমাল্য। নারী শিক্ষা প্রসারিত হচ্ছে। বৈচিত্র্যিক পেশায় সমসংখ্যকের এগিয়ে চলা আধুনিক জগৎকে বরমাল্য দেওয়া। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে আসীন হওয়া নারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ার দিকে। ব্যবসা বাণিজ্যে এতদিন তারা পিছিয়ে ছিল সেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে তাদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া বর্তমান শতকের নবদিগন্ত। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্পবিপ্লব বিশ্বকে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে দিচ্ছে। সেখানে নারীর অংশগ্রহণ খুব বেশি না হলেও এগিয়ে চলেছে। আমরা এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের তথ্য প্রযুক্তির সমৃদ্ধ আঙিনায় বিচরণ করছি। এখানেও প্রশ্ন উঠছে নারীরা আবিষ্কার আর প্রযুক্তিতে এখনো পুরুষের মতো সমান পারদর্শী নয়। কিন্তু সেখানেও এই শতকের সূচনা লগ্ন থেকে অগ্রগামী ভূমিকায় পেছন ফিরে তাকাতে হচ্ছে না। উদ্যোক্তা তৈরিতে নারীদের অংশ নেওয়া বর্তমান সমাজের নতুন সময়ের অনন্য সম্মিলন। আমরা জানি শুধু পরিবার নয়, যুগ ও সময় সব মানুষকেই অগ্রগামী চিন্তা ধারায় অভিষিক্ত করে। সঙ্গত কারণে তাদের বুঝতে খুব বেশি সময় লাগেনি প্রযুক্তির আঙিনায় পিছু হটলে সমতার আলোকিত ধারা দৃশ্যমান হতে আরও সময় ব্যয় করতে হবে। প্রযুক্তি এগিয়ে যায় দ্রুততার সঙ্গে। আর মনন দক্ষতা, চিন্তা শক্তি কিছুটা পশ্চাদবর্তী হয়। সমাজবিজ্ঞানী অগবার্ন তাকে চিহ্নিত করেছেন প্রতীকমূলক সংস্কৃতির অব্যাহত পশ্চাদবর্তিতা। যা নারীদের ক্ষেত্রে অনেকটাই সত্য। আমরা যত সহজে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করি সেভাবে আমাদের চেতনা কিংবা বুদ্ধিবৃত্তি সংস্কৃতি কিছুটা হলেও হোঁচট খায়। সঙ্গত কারণে আমরা প্রত্যক্ষ করি নারী সমাজ তথ্য প্রযুক্তিতে ক্রমান্বয়ে দক্ষ হলেও ভাব-চেতনায় অনেকটা পশ্চাদগামী। যা সামগ্রিক জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে উঠে আসছে গ্রামীণ নারীরা উঠোন বৈঠক করে প্রযুক্তিতে নিজেদের সচেতন অংশগ্রহণকে এগিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি স্বস্তিদায়ক হলেও বিভিন্ন সময়ে এর বিপরীত প্রদাহও বিচলিত করার মতো। উচ্চ শিক্ষিত নারীদের ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা প্রকট নয়। তবে বাংলাদেশ এখনো গ্রামনির্ভর কৃষি সভ্যতার অবারিত সম্ভার। সিংহভাগ মানুষ বাস করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তেমন পল্লিবালার নিভৃত প্রান্তে ধনে ধান্যে পুষ্পে ভরা শ্যামল বাংলা দৃশ্যমান হলেও অনেক স্থানে বিদ্যুৎ যেতেও বহু সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ জরুরিই শুধু নয়, অতি আবশ্যিক উপাদানও। এখন অবশ্য বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল স্বল্প মাত্রায় হলেও বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। পল্লী বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পরিবেশন করা এসব সংযোগে অনেক ত্রুটিবিচ্যুতিও থাকে। সবচেয়ে বেশি করে চেপে বসে লোডশেডিংয়ের চরম দুর্বিপাক। যার কারণে ইন্টারনেট আর মোবাইলের মতো প্রযুক্তিও নানাভাবে বিপন্নতা তৈরি করছে। নিরবচ্ছিন্ন থাকতে পদে পদে হোঁচটও খাচ্ছে। তার পরও তাদের প্রযুক্তিনির্ভরতা ক্রমেই বেড়ে চলছে। গ্রামে গঞ্জে নারীদের যে ব্যবসায়িক কর্মযোগ সেখানে প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে গ্রাহক সেবায় আসবে চরম বিপন্নতা। গ্রামীণ মেয়েরা রন্ধন শিল্প থেকে কারুশিল্পে ক্রমান্বয়ে এাগিয়ে যাচ্ছে নিত্য নতুন আধুনিকতাকে সম্পৃক্ত করে। এসব ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার সঙ্গত না হলেও মোবাইল ছাড়া এমন দূরবর্তী কর্মযোগে সংশ্লিষ্ট মহিলা উদ্যোক্তাদের কিছুটা পিছিয়ে যেতে হয়। ফলে ব্যবসায়িক সাফল্যেও থাকে ধীরগতি। আমরা নিয়তই গণমাধ্যমে দেখি গ্রামীণ সাধারণ মেয়েরা সেলাই মেশিন পেয়ে যাচ্ছে কোনো বড় শিল্প গোষ্ঠী থেকে। বসুন্ধরা শিল্প গোষ্ঠী তো এগিয়েই থাকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে নারীদের এগিয়ে দিতে। কিন্তু গ্রাহক শুধু নির্দিষ্ট অঞ্চল নয় সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন। তাই অনলাইন ব্যাংকিং আর কার্যক্রম গ্রামীণ নারীদের ব্যবসার সঙ্গে অনবচ্ছেদ। সেভাবে তারা সফলতার সিঁড়িও পার করার গল্প এখন গণমাধ্যমের স্বস্তিদায়ক প্রতিবেদন। শুধু কি গণমাধ্যম? উন্নয়ন সংস্থার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সরাসরি জরিপের মাধ্যমেও এমন যথার্থ চিত্র নজর কাড়া হচ্ছে। অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্যে পল্লিবালার কমনীয় নারীরা এখন দ্রুততার সঙ্গে শুধু প্রযুক্তিতেই দক্ষ নয় বরং নিজেদের যোগ্যতম প্রমাণ করে তাদের অদক্ষতাকে ঘোচাতে সচেষ্ট থাকছেন। বাংলার নতুন বছরের আধুনিক সম্ভাবনায় গ্রামীণ নারীরা যেন প্রযুক্তিকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে পারে।