
শহুরে শৌখিনতা কিংবা ঘর সাজানোর সংস্কৃতিতে বনসাই নামক ক্ষুদ্র আকৃতির গাছ এখন অনেকেরই প্রিয়। তবে এই বনসাই প্রক্রিয়া ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে কতটা গ্রহণযোগ্য? এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ শায়খ আহমাদুল্লাহ।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে শোপিসের একটি সংস্কৃতি প্রচলিত আছে, যেটাকে ‘বনসাই’ বলা হয়। বনসাই সম্পর্কে উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, এটি মূলত চীনা শব্দ ‘পেনজাই’ থেকে উদ্ভূত, যা পরে জাপানি ভাষায় ‘বনসাই’ রূপে পরিচিত হয়। এরপর এটি পৃথিবীর সর্বত্র বনসাই নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।
এই প্রক্রিয়ায় শক্ত কান্ডযুক্ত বৃক্ষকে ট্রেতে বা টবে বিশেষ পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র আকৃতির করে রাখা হয়। যেমন, বটগাছ সাধারণত বিশাল আকার ধারণ করে, কিন্তু বনসাই পদ্ধতিতে একে ছোট আকৃতিতে এনে ঘরে বা অফিসে রাখা যায়। প্রশ্ন হলো, এই পদ্ধতি শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ কিনা?
শায়খ আহমাদুল্লাহ ব্যাখ্যা দেন, “ইসলামী ফিকাহর একটি মৌলিক নীতি হলো ‘আল আসল ফিল আশিয়া-ল-ইবাহা’। অর্থাৎ, জাগতিক বিষয়ে মূলত সব কিছুই হালাল, যতক্ষণ পর্যন্ত শরিয়তের নির্দিষ্ট কোনো নিষেধাজ্ঞা সেখানে প্রযোজ্য না হয়।”
তিনি কোরআনের সূরা জাসিয়া’র ১৩ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভূমণ্ডলে যত কিছু আছে, সবকিছুকে মানুষের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন, যেন মানুষ সেগুলোকে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে।”
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, “মৌলিকভাবে বনসাই জায়েজ। যতক্ষণ শরিয়তের কোনো স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এতে আরোপ না হয়, ততক্ষণ এই প্রক্রিয়ায় গাছ রাখা নিষিদ্ধ নয়।”
তিনি আরও বলেন, “গ্রামাঞ্চলে যেখানে বৃক্ষরোপণের সুযোগ থাকে, সেখানে হয়তো বনসাইয়ের প্রয়োজন নেই। কিন্তু শহরে, বিশেষ করে ফ্ল্যাট বা অফিসের মতো জায়গায় মানুষ যদি গাছ ক্ষুদ্র করে রাখেন, শৌখিনতায়, অক্সিজেন পাওয়ার আশায় বা বৃক্ষরোপণের ফজিলত অর্জনের জন্য,তাহলে এটি গুনাহের কাজ নয়।”
বিশ্বব্যাপী বনসাই সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা নিয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকের মনেই প্রশ্ন ছিল। শায়খ আহমাদুল্লাহর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শরিয়তের দৃষ্টিতে বনসাই করা মৌলিকভাবে বৈধ,যতক্ষণ না তা কোনো হারাম কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়। তাই বনসাইকে শুধুমাত্র একটি শৌখিন গৃহসজ্জার উপায় হিসেবেই নয়, বরং পরিবেশবান্ধব ও ধর্মসম্মত এক উদ্যোগ হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে।
সূত্র:https://tinyurl.com/4apk8ncc
আফরোজা