
ছবি: সংগৃহীত।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের কিছু প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আলেম সমাজের দাবি, এসব প্রস্তাব দেশের ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ (স্বামী-স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক) বিষয়ে আলোচনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে জনপ্রিয় আলেম শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, দেখুন, ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে অনেকটা মুখের কথার উপর ভিত্তি করেই এ ধরনের অনেক আইন বা বিচার প্রক্রিয়া করা হয়ে থাকে। যেগুলো রীতিমতো মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।
দ্বিতীয়ত স্বামী-স্ত্রী তাদের উভয়কার সম্পর্কের মধ্যে যদি স্বামী-স্ত্রী সুলভ জোরাজুরি করে, যেটা জুলুমের পর্যায়ে না যায় এবং উভয়পক্ষ হাসিমুখে তা মেনে নেয়, তবে সেখানে কিছুটা জোরাজুরি হয়- সেখানে গ্রহণযোগ্যতার একটা লেভেল থাকে।
তিনি বলেন, ধরুন একজন স্বামীকে তার স্ত্রী জোরাজুরি করে যে, চলো আজকে ঘুরতে যাই বা পকেট থেকে টাকা নিয়ে নেয় জোরাজুরি করে। তো এটাকে কি আপনি বৈবাহিক ডাকাতি বলবেন? নিশ্চয় বলবেন না। এটুকু কিন্তু গ্রহণযোগ্য।
হ্যাঁ! যদি সীমালঙ্ঘন হয়ে যায় যে, কোনো স্ত্রী সক্ষম নন বা শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ তখন যদি কোনো স্বামী তার প্রতি জুলুম করেন, তাকে রীতিমতো কষ্ট দেন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে। তাহলে সেটা অবশ্যই জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। এর জন্য প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করা।
এটা আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এটা প্রমাণ করা খুবই দুঃসাধ্য একটা ব্যাপার। প্রমাণ তো হবেইনা বরং এই আইনের কারণে ঘরে ঘরে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবে, অশান্তি বৃদ্ধি হবে।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ইতোমধ্যেই দাম্পত্য জীবনে যেই কলহ তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এটার ফলশ্রুতিতে স্বামী-স্ত্রীর সামান্য মনমালিন্য হলেই স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে এ্যলিগেশন আনবেন এবং এর ভিত্তিতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক আরও নষ্ট হবে।
পশ্চিমা দেশগুলোতে যেমন বিবাহ নিরুৎসাহিত রয়ে গেছে সেভাবে আমাদের এখানেও তা বেড়ে যাবে। মানুষ আর এই ঝামেলা নিবে না বা বিবাহ করতে চাইবে না। তখন অবৈধ সম্পর্কের পরিমাণ বাড়বে।
এটাই মূলত তারা চান যারা পশ্চিমা ধ্যান-ধারণাকে পালন করছেন। গোটা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে কিন্তু আমরা দেখি সন্তান জন্মের হার কমতে কমতে এমন লেভেলে চলে গেছে যে সরকার প্রণোদনা দিয়েও সেটিকে কোনো লেভেলে আনতে পারছে না। বাহির থেকে রিফিউজি এনে দেশের প্রয়োজন পূরণ করতে হচ্ছে। এটা কেনো হচ্ছে?
কারণ, বিবাহকে সমাজে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে যখন এপ্রেশিয়েট করা হয়েছে তখন সন্তান জন্মের হার কিন্তু অনেকটাই কমে গেছে এবং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
যেই চীনে আগে সন্তান একটার বেশি নিলে জরিমানা আরোপ করা হতো সেখানে উল্টো সরকার এখন ভর্তুকি দিচ্ছে সন্তান যেন বেশি হয় তার জন্য। এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া প্রমাণ করছে যে, শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার বা বৈবাহিক ধর্ষণ এসব ট্রামগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করলে সমাজ ধ্বংসের দিকে চলে যাবে। ভালো কিছু আসবেনা।
বাংলাদেশের আপামর সাধারণ জনতাকে এই নারী কমিশন রিপ্রেজেন্ট করেনা। তাদের চেহারা-সূরত, অবয়ব, চিন্তাধারা দেখে বুঝা যাচ্ছে যে পশ্চিমা পৃথিবীর ধ্যান-ধারণা তারা এই সমাজের উপর চাপিয়ে দিতে চান। যা এই সমাজের মানুষের ধর্ম, বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক একটি বিষয়।
নুসরাত