ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

মাছি সম্পর্কে যেসব অবাক করা তথ্য রয়েছে পবিত্র কোরআনে

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

মাছি সম্পর্কে যেসব অবাক করা তথ্য রয়েছে পবিত্র কোরআনে

ছবি: সংগৃহীত।

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনকে বলা হয় জ্ঞানের ভাণ্ডার। দেড় হাজার বছর আগে নাজিল হওয়া এই আসমানি কিতাবে এমন সব সূক্ষ্ম জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যা আজকের বিজ্ঞানীরাও দেখে বিস্ময়ে অভিভূত।

আজ আমরা আলোচনা করবো সূরা হজ্জের ৭৩ নম্বর আয়াত নিয়ে, যেখানে মহান আল্লাহ তাআলা মাছির একটি বিস্ময়কর উপমা দিয়েছেন।

আয়াতটি এমন: "হে মানুষ! একটি উপমা পেশ করা হলো, মনোযোগ দিয়ে তা শোনো। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো, তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা একত্রিত হয়। আর যদি মাছি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নেয়, তারা তা ফেরত আনতেও সক্ষম হবে না। প্রার্থনাকারীও দুর্বল, যার কাছে প্রার্থনা করা হয় সেও দুর্বল।" (সূরা হজ্জ, ২২:৭৩)

মুফাসসিরগণ ব্যাখ্যা করেছেন — এই আয়াত মূলত তাদের উদ্দেশ্যে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও বা কিছুর উপাসনা করে। আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, তারা এতটাই দুর্বল যে একটি সামান্য মাছিও সৃষ্টি করতে পারে না। এমনকি একটি মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কিছু নিয়ে যায়, সেটাও তারা উদ্ধার করতে অক্ষম।

আয়াতে বলা হয়েছে, মাছি যদি কিছু ছিনিয়ে নেয়, তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। একসময় অবিশ্বাসীরা প্রশ্ন তুলেছিল — কেন ফিরিয়ে আনা যাবে না? তো, ১৪০০ বছর পর আজকের বিজ্ঞান এই সত্যটা সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, প্রাপ্তবয়স্ক মাছিরা মূলত পচা ফলমূল, সবজি, মৃতদেহ, মানব ও প্রাণী বর্জ্য, মল এবং দুধ, সিরাপ, মধুর মতো মিষ্টিজাতীয় তরল খাদ্য খেয়ে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে — মাছিরা কেবল তরল খাদ্যই গ্রহণ করতে পারে।

মাছিরা শক্ত খাদ্য সরাসরি খেতে পারে না। তারা প্রথমে নিজেদের মুখের বিশেষ এক প্রকার লালা (স্যালাইভা) দিয়ে খাদ্যটিকে রাসায়নিকভাবে ভেঙে তরলে পরিণত করে। এরপর মুখের সামনে থাকা স্পঞ্জের মতো নরম অংশের সাহায্যে সেই তরল খাদ্য শুষে নেয়।

একটি উদাহরণ — আপনি যদি এক ফোঁটা সিরাপ ফেলে রাখেন, মাছি এসে সেখানে বসবে, মুখের লালা মিশিয়ে সিরাপটাকে আরও তরল করে তুলবে এবং তারপর সেই তরল চুষে নেবে।

আবার আসা যাক সূরা হজ্জের সেই আয়াতের ব্যাখ্যায়।

যখন মাছি কোনো খাবার গ্রহণ করে, তখন সেটা তার লালার মাধ্যমে রাসায়নিক পরিবর্তনের শিকার হয়। অর্থাৎ খাদ্যপদার্থের মূল অবস্থা ভেঙে যায়, নতুন রাসায়নিক যৌগে রূপান্তরিত হয় এবং অবিলম্বে তার শরীরের ভেতর হজম হয়ে যায়। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় — Chemical and Biological Transformation। ফলে মাছির ছিনিয়ে নেওয়া বস্তু আর তার আসল অবস্থায় ফেরত পাওয়া কখনো সম্ভব নয়।

আয়াতের শেষ অংশে বলা হয়েছে, "প্রার্থনাকারী দুর্বল, যার কাছে প্রার্থনা করা হয় সেও দুর্বল"। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য যাদের পূজা করা হয়, তারা নিজেরাই দুর্বল। মাছির মত সামান্য প্রাণীর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে না, বরং নিজেদের ভোগের সামগ্রীও রক্ষা করতে অক্ষম। আর যারা তাদের কাছে কিছু চায়, তারাও দুর্বল; কারণ তারাও সেই ছিনিয়ে নেওয়া বস্তু ফিরে আনতে অক্ষম।

সূরা হজ্জের এই একটি আয়াতের মাধ্যমে কুরআন আমাদেরকে গভীর এক সত্য শিখিয়েছে — আল্লাহর শক্তির সামনে সৃষ্টির সবকিছু কতটা সীমাবদ্ধ এবং দুর্বল! আজকের বিজ্ঞানও কুরআনের এই বক্তব্যকে শতভাগ সত্য বলে প্রমাণ করে দিয়েছে।

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=3ZskXFVqtfg

নুসরাত

×