ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

পৃথিবীর যে ৪ নদীর উৎস বেহেশতে!

প্রকাশিত: ১২:২৬, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

পৃথিবীর যে ৪ নদীর উৎস বেহেশতে!

সংগৃহীত

মহান আল্লাহপাক তাঁর অতুলনীয় সৃষ্টিকুশলতায় এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীতে এমন কিছু বিস্ময়কর সৃষ্টি রয়েছে, যা মানুষের চিন্তা ও কল্পনাকেও হার মানায়। পবিত্র কোরআনের বর্ণনায় বারবার এসেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার ও বৈচিত্র্যের কথা। মহান রাব্বুল আলামীনের এই অপূর্ব সৃষ্টিসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো নদী। তবে এমনও কিছু নদী রয়েছে, যাদের উৎপত্তি স্বয়ং জান্নাতে এবং তা পৃথিবীতে প্রবাহিত হচ্ছে,এমনটাই উঠে এসেছে ইসলামী বর্ণনায়।

ইসলামের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও হাদিসে এমন চারটি নদীর কথা বলা হয়েছে, যাদের সঙ্গে জান্নাতের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এসব নদী শুধুই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক তাৎপর্যেও অনন্য। সহি মুসলিম শরিফে বর্ণিত রয়েছে, পৃথিবীর চারটি নদী জান্নাত থেকে উৎসারিত বলে বিবেচিত—যা শুধু ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, ইসলামের ঐতিহ্যকেও করেছে সমৃদ্ধ।

 

ফোরাত নদী
ফোরাত নদী বা ইউফ্রেটিস রিভার প্রায় ২৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। হাদিস শরিফ অনুযায়ী, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেয়ামতের পূর্বে ফোরাত নদী শুকিয়ে যাবে।”

ইতোমধ্যে এই নদী শুকানো শুরু হয়েছে বলে বহু পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ফোরাত নদী শুকিয়ে যায় এবং তার মাঝ থেকে একটি স্বর্ণের পাহাড় উন্মোচিত হয়। মানুষ সে স্বর্ণের জন্য যুদ্ধ করবে এবং প্রতি একশ’ জনের মধ্যে ৯৯ জনই মারা যাবে। প্রত্যেকেই ভাববে, হয়তো আমি সেই একজন, যে বেঁচে যাব।”

 

নীলনদ
মিশরের বিখ্যাত নীলনদ ইতিহাস ও ধর্মীয় বিশ্বাসে এক বিস্ময়কর উপাদান। এই নদী সম্পর্কেও হাদিসে রয়েছে জান্নাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নীল ও ফোরাত জান্নাতের নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে।”

এই নদীর সঙ্গে হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম)–এর জীবনের এক অবিস্মরণীয় ঘটনা জড়িয়ে আছে। তাঁর মা নবজাতক মুসাকে ফেরাউনের হত্যার হুমকি থেকে বাঁচাতে একটি ঝুঁড়িতে রেখে নীলনদে ভাসিয়ে দেন। পরবর্তীতে সেই ঝুঁড়ি পৌঁছে যায় ফেরাউনের প্রাসাদে, এবং সেখান থেকেই শুরু হয় হযরত মুসা (আ.)–এর নবুয়তের যাত্রা।

মেরাজের রাতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের চারটি নদী প্রত্যক্ষ করেন—দুটি বাহ্যিক, অর্থাৎ দুনিয়ার প্রবাহমান নদী (নীল ও ফোরাত) এবং দুটি অভ্যন্তরীণ।

 

তুরস্কের জয়হান নদী
সহি মুসলিম শরিফে উল্লেখ আছে, জয়হান নদী জান্নাতের নদীগুলোর অন্তর্ভুক্ত। পূর্ব তারাস পর্বতমালার নূরহাক পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী প্রায় ৫০০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে গিয়ে মিশেছে। এটি প্রাচীনকাল থেকেই একটি প্রাকৃতিক সীমানা ও সভ্যতার জন্য মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত।

 

তুরস্কের সিহান নদী
তুরস্কের সিহান নদী, যেটি সেরাস নামেও পরিচিত, সিলিসিয়া অঞ্চলের দীর্ঘতম নদী। এটি প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ভূমধ্যসাগরে পতিত হয়েছে। প্রাচীন লেখকদের বিবরণ অনুযায়ী, সিহান নদী ঐ অঞ্চলের সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

এই নদীটি কৃষিকাজ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনেও কার্যকরী। এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সাইহান, জায়হান, ফোরাত ও নীল—এই চার নদী জান্নাতের নদ-নদীগুলোর অন্যতম।”

 

এছাড়া, জান্নাতের নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো কাউসার, যা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশেষভাবে দান করা হয়েছে। কেয়ামতের দিন মহানবী তাঁর উম্মতকে এই কাউসার নদী থেকে পানি পান করাবেন।

এই পানীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, “এটি দুধের চেয়েও সাদা, বরফের চেয়েও শীতল, মধুর চেয়েও মিষ্টি এবং মিশকের চেয়েও সুগন্ধময়। যে একবার এই পানি পান করবে, তাকে আর কখনো পিপাসা স্পর্শ করবে না।”

ফোরাত, নীল, জয়হান ও সিহান-এই চারটি নদীকে শুধু ইতিহাস, ভূগোল কিংবা জ্ঞানবিজ্ঞানের আলোচনায় সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। ইসলাম ধর্মের আলোকে এগুলোর রয়েছে এক অতিপ্রাকৃত, পবিত্র তাৎপর্য। এসব নদী আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই দুনিয়ার অনেক সৌন্দর্য ও রহস্যের গভীরে লুকিয়ে আছে আখিরাতের আলোকচ্ছটা।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/bdzz2ymf

আফরোজা

×