
নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে নামাজ পড়া উচিত। হাদিসে এমনভাবে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে যেন আল্লাহ তাআলাকে দেখছেন, নতুবা তিনি নামাজিকে দেখছেন এমন মনোভাব নিয়ে নামাজ পড়া। এরপরও ভুলে যাওয়া মানুষের স্বভাবগত বিষয়। রাকাতসংখ্যা ভুলে যাওয়া তো সচরাচর ঘটনা। নামাজ শেষ হওয়ার পরও রাকাতসংখ্যা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। এ অবস্থায় অনেকে নতুন করে নামাজ পড়ে থাকেন। কিন্তু এর একটি শরয়ি সমাধান রয়েছে। নিচে তার ধরণগুলোসহ আলোচনা করা হলো।
১. নামাজ পড়ার সময় রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে এবং এই সন্দেহ প্রথমবারের মতো হলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ পুনরায় পড়া আবশ্যক। (ইবনে আবি শায়বা: ২/২৮)
২. যদি নামাজ শেষ করার পর সন্দেহ হয়, নামাজ এক রাকাত কম হয়ে গেল কি না—এমন সন্দেহের মূল্য নেই; বরং নামাজ পূর্ণ হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।
৩. আর যদি সঠিকভাবে স্মরণে আসে যে এক রাকাত কম হয়েছে, তাহলে দাঁড়িয়ে আরও এক রাকাত নামাজ পড়ে নিবেন এবং সেজদায়ে সাহু সহকারে নামাজ শেষ করবেন।
৪. নামাজের সালাম ফেরানোর পর স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করে দেয়ার পর যদি রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হয়, তাহলে উক্ত নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। এই নামাজ আবার পড়তে হবে। (ইবনে আবি শায়বা:
৫. কারো যদি নামাজের পর দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, কিছু রাকাত পড়া হয়নি, তাহলে সে নামাজপরিপন্থি কোনো কাজ না করে থাকলে ছুটে যাওয়া রাকাত পড়ে নেবে। এভাবে পড়লে নামাজ সহিহ হবে। কিন্তু যদি নামাজপরিপন্থি কোনো কাজ করে ফেলে, তাহলে ওই নামাজ পুনরায় পড়বে। (ইবনে আবি শায়বা: ২/২৪)
৬. যে ব্যক্তির সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তাহলে যেদিকে তার মন বেশি সায় দেবে, সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রত্যেক রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসলিম: ৮৮৮)
৭. তিন রাকাত পড়া হয়েছে নাকি চার রাকাত—এমন সন্দেহ হলে তিন রাকাত মনে করে বসবে, এরপর চতুর্থ রাকাত পড়বে। শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। (মুসনাদে আহমদ: ১৬৭৭)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নামাজে রাকাতসংখ্যা নিয়ে দ্বিধা বা সংশয় তৈরি হলে প্রথম দায়িত্ব হলো— চিন্তা করতে হবে যে, আসলে কত রাকাত পড়েছেন। তখন প্রবল ধারণা যেটির পক্ষে সায় দেয়, তার ওপর ভিত্তি করে বাকি নামাজ পূর্ণ করবেন। আর যদি নামাজের রাকাতসংখ্যার ব্যাপারে প্রবল ধারণা না হয়, তাহলে কম সংখ্যাটা আদায় করেছেন বলে ধরবেন এবং সেই হিসেবে বাকি নামাজ পূর্ণ করবেন। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রাকাতের পর বৈঠক করে তাশাহুদ পড়তে হবে। আর শেষ বৈঠকে সাহু সেজদা আদায় করতে হবে। (তথ্যসূত্র: আদ্দুররুল মুখতার, খণ্ড: ২/৯৩-৯৪; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৩০; কিতাবুল আছল: ১/১৯৮; বাদায়েউস সানায়ে: ১/৪০৪; আল-বাহরুর রায়েক: ২/১১১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজে একাগ্র হওয়ার তাওফিক দান করুন। রাকাতসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে সহিহ সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সজিব