
ছবি: সংগৃহীত।
কালো জাদু বা সিহরের উৎপত্তি নিয়ে নানা মত রয়েছে। তবে এর শুরু কোথা থেকে হয়েছিল—তা নিয়ে নিশ্চিত কোনও ঐতিহাসিক বর্ণনা নেই। কিন্তু আল্লাহ কোরআনে এই জাদুর উৎপত্তি ও বিস্তার নিয়ে একটি স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা উঠে এসেছে সূরা বাকারার ১০২ নম্বর আয়াতে।
হযরত সুলাইমান (আ.)-এর সময় জাদুবিদ্যার ব্যাপক বিস্তার ঘটে। অনেক জাদুকর বিভিন্ন বইয়ের সাহায্যে মন্ত্রচর্চা করতো। তখন সুলাইমান (আ.) নির্দেশ দেন—এই সব জাদুবিদ্যার বইগুলো জব্দ করে তার সিংহাসনের নিচে গচ্ছিত রাখতে, যাতে কেউ তা অপব্যবহার না করে।
আল্লাহ তাআলা সুলাইমান (আ.)-কে যে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছিলেন তা ছিল নিছক মোজেজা। তিনি জিন, বাতাস ও পশুপাখিদের উপর রাজত্ব করতেন। তার ইচ্ছামাফিক জিনদের দিয়ে কঠিন কাজ করানো যেত। এমনই এক ঘটনা কোরআনে বর্ণিত—যেখানে ইফরিত জিন চোখের পলকে শেবা রানীর সিংহাসন এনে দেয়।
এই মোজেজাগুলো দেখে কিছু মানুষ বলতে শুরু করে—সুলাইমান (আ.) হয়তো জাদু চর্চা করতেন। তখন আল্লাহ কোরআনে স্পষ্ট করে বলেন, "সুলাইমান কুফরি করেনি, বরং শয়তানরাই কুফরি করেছিল—তারা মানুষকে জাদু শিখাতো।" (সূরা বাকারা ১০২)
এখানে আল্লাহ স্পষ্টভাবে জাদুকে কুফরি বলেছেন। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি জাদু চর্চা করে, সে ঈমান থেকে বিচ্যুত হয়। একই সাথে আল্লাহ তাঁর নবীর সম্মান রক্ষা করেছেন।
এই আয়াতে আল্লাহ উল্লেখ করেন যে, বর্তমান ইরাকের ব্যাবিলন শহরে দুই ফেরেশতা হারুত ও মারুত জাদু শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠে—ফেরেশতা হয়ে তারা কেন এমন ভয়াবহ কিছু শিখালেন?
এ নিয়ে দুইটি গ্রহণযোগ্য মতবাদ আছে:
পরীক্ষার অংশ হিসেবে শিক্ষা: তারা মানুষকে আগে থেকেই সতর্ক করতেন— "আমরা তোমাদের পরীক্ষা করছি, কেউ যেন এ শিক্ষা গ্রহণ করে না।" যারা সত্যিকার ঈমানদার ছিল, তারা বিরত থেকেছে। আর যারা ছিল দুর্বল, তারা সেই শিক্ষা নিয়ে কালো জাদু চর্চা করেছে।
আল্লাহ ফেরেশতাদের মাধ্যমে এই শিক্ষা দেন, যেন মানুষ বুঝতে পারে—একজন নবীর মোজেজা আর শয়তানদের জাদু এক নয়। যেমন: মুসা (আ.) ফেরাউনদের জাদুকরদের সামনে মোজেজা দেখান। তারা বুঝে যায়—এটা জাদু নয়, বরং আল্লাহর কুদরত। তাই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে ও ঈমান আনে।
আয়াতটির একেবারে শেষে একটি বিশেষ ধরনের কালো জাদুর কথা বলা হয়েছে— "এটি এমন এক জাদু, যার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা হয়।"
এটা সবচেয়ে মারাত্মক ও বিপজ্জনক জাদু হিসেবে বিবেচিত। কারণ এটি একটি পরিবারকে, সমাজকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
নুসরাত