
ছবি: সংগৃহীত।
ফিলিস্তিনে চলমান যুদ্ধের পরই নাকি দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে—এমন একটি বক্তব্য অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই দাবির পেছনে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কতটুকু সত্যতা আছে?
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করুন। কেয়ামত ও তার আলামত নিয়ে আজকাল অনেকেই নিজেদের ব্যবসার পণ্য বানিয়ে ফেলেছেন। মুখরোচক কন্টেন্ট বানিয়ে ইউটিউবে চমকপ্রদ উপস্থাপনার মাধ্যমে ভিউ বাড়ানো যেন একধরনের ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমে যেমন কিছু ইউটিউবার দোষী, তেমনি কিছু হুজুরের মতো দেখতে ব্যক্তিও এ কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন।
অনেকেই কোরআন-হাদিসের কোনো ভিত্তি ছাড়াই শুধুমাত্র চমক তৈরি করার জন্য এমন সব কথা বলে থাকেন, যা বিভ্রান্তি ছড়ায়। ফিলিস্তিনের চলমান যুদ্ধ, বিশেষ করে গাজায়, হয়তো এক মাসেই শেষ হয়ে যাবে, কিংবা তারও আগে। কিন্তু এরপরই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে—এমন কথা বলার মতো কোনো ‘ওহী’ তো কারো কাছে আসছে না! যদি কেউ এমন দাবি করে, তবে তা কোরআন-হাদিসের আলোকে ভিত্তিহীন।
কেউ যদি বলেন, ফিলিস্তিন পুরোপুরি মুক্ত হবে, ইহুদিরা পরাজিত হবে, তারপর দাজ্জাল আসবে—তাহলে প্রশ্ন থাকে, সেটা কবে হবে? একমাত্র আল্লাহই তা ভালো জানেন। এবং এমন নির্দিষ্ট কোনো ভবিষ্যদ্বাণী কোরআন বা সহীহ হাদিসে নেই।
হ্যাঁ, আমরা কোরআন-হাদিস থেকে দাজ্জালের আগমনের আগে পৃথিবীর পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু আলামতের কথা জানতে পারি। কেয়ামতের বহু আলামত রয়েছে। অনেক ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন বইয়ে সেগুলো সংকলন করেছেন। যেমন, শায়খ মোহাম্মদ আরেফী তাঁর একটি বইয়ে ১৪১টি আলামতের কথা উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে ১০টি বড় আলামত এবং ১৩১টি ছোট আলামত। বেশিরভাগ ছোট আলামত ইতোমধ্যেই ঘটেছে।
দাজ্জাল ও ইমাম মাহদীর আগমনের আগে পৃথিবী জুলুমে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। ইনসাফ থাকবে না। তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে এই দুই মহাপুরুষের আবির্ভাব হবে। তবে সেই ঘটনার নির্দিষ্ট সময় কেউ বলতে পারে না।
কেউ যদি বলে, অমুক জায়গায় দাজ্জাল এসেছে, অমুক জায়গায় মাহদী আসছেন, বা কোনো ব্যক্তি নিজেকে দাজ্জাল বা মাহদী দাবি করেন—তাহলে বুঝতে হবে, তা বিভ্রান্তিমূলক।
এ ধরনের প্রচার প্রচারণা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এটা দায়িত্বহীন ও অন্যায়। তাই আমাদের সচেতন থাকা জরুরি।
সত্য কথা হলো, কোরআন ও সহীহ হাদিসে দাজ্জালের আগমনের সময় নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তবে এটা ঠিক যে, দাজ্জালের আগমনের আগে তাঁর আলোচনা পুনরায় মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। পৃথিবীর এমন কোনো নবী ছিলেন না, যিনি তাঁর উম্মতকে দাজ্জালের বিষয়ে সতর্ক করেননি। নবী করীম (সা.)-এর অনেক হাদিসে এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে।
তাই কেয়ামতের আলামত নিয়ে আলোচনা করা নিষেধ নয়। বরং কোরআন-হাদিসের ভিত্তিতে সঠিক আলোচনা করা উচিত। চমকপ্রদ ও মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো চলবে না।
দাজ্জাল থেকে আত্মরক্ষার জন্য করণীয় হলো—
-
নামাজের শেষ বৈঠকে দাজ্জাল থেকে পানাহ চাওয়ার দোয়া পড়া,
-
সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করা,
-
সূরা কাহাফ নিয়মিত তিলাওয়াত করা,
-
ঈমানকে মজবুত করা।
এই আমলগুলোই দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়।
নুসরাত