ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

কুরআনে উল্লেখিত পৃথিবীর রহস্যময় দুটি মুর্তি ও তাদের ভয়ঙ্কর ইতিহাস

প্রকাশিত: ২০:১৪, ৯ এপ্রিল ২০২৫

কুরআনে উল্লেখিত পৃথিবীর রহস্যময় দুটি মুর্তি ও তাদের ভয়ঙ্কর ইতিহাস

ছবি: সংগৃহীত।

পবিত্র কোরআনে দুটি মূর্তির নাম উল্লেখ রয়েছে—লাত এবং উজ্জা। পৃথিবীর ইতিহাসে এই দুটি মূর্তিকে সবচেয়ে রহস্যময় বলে গণ্য করা হয়। পুরো আরব জাতি এক সময় এদের পূজা করত। কোরআনের সূরা আন-নাজমের ১৯ ও ২০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন: "তোমরা কি ভেবে দেখেছো লাত ও উজ্জা সম্পর্কে? এবং তৃতীয় একটি মূর্তি মানাত সম্পর্কে?"

মক্কা বিজয়ের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) দীর্ঘ ৩০০০ বছর পুরনো এই লাত ও উজ্জা মূর্তিগুলো ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। এজন্য তিনি সাহাবি হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) তা'আলা আনহুকে দায়িত্ব দেন। তবে প্রশ্ন হলো, কেন এই মূর্তি ধ্বংস করতে গিয়ে খালিদ বিন ওয়ালিদকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছিল?

বিশ্বাস করা হয়, লাত ও উজ্জার মূর্তির ভেতরে একটি অদৃশ্য শক্তি (অশারীরিক সত্তা) বসবাস করত, যার মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করা হতো। আরবের মুশরিকদের বিশ্বাস ছিল—লাত সুখ, সমৃদ্ধি, জমির উর্বরতা, ফসল ফলানো এবং সৌন্দর্য দান করে।

অন্যদিকে, উজ্জাকে আল্লাহর কন্যা বলে মনে করা হতো (নাউজুবিল্লাহ)। বিশ্বাস করা হতো, মানুষের গায়ের রঙ হবে সাদা না কালো, দিন-রাত ও ঋতুর পরিবর্তনের ক্ষমতা ছিল উজ্জার হাতে।

ইতিহাসে পাওয়া যায়, উজ্জা ছিলেন এক রূপবতী নারী। একনজর তাকালেই তার রূপে সবাই মোহিত হয়ে যেত। বিশ্বাস করা হতো, কোনো পুরুষ যদি তাকে খারাপ চোখে দেখত, সে নানান রোগে আক্রান্ত হতো। এমনকি কেউ স্পর্শ করতে চাইলে তার ক্ষতি হতো। এই নারী একসময় আরবের মানুষের অন্তরে দেবীর আসনে বসে যায়।

তায়েফের নেতারা একসময় সিদ্ধান্ত নেন—শুধুমাত্র যে পুরুষ জীবনে কখনো কোনো নারীর দিকে খারাপ নজরে তাকায়নি, সেই উজ্জাকে বিয়ে করতে পারবে। সেই সময় একমাত্র এমন পুরুষ ছিলেন লাত। দু’জনের বিয়ে হয়। কিন্তু বাসর রাতের পরদিন তারা ঘর থেকে উধাও হয়ে যান। এরপর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনার পর আরবের নেতা আমর বিন লুহাই লাত ও উজ্জার নামে দুটি বড় মূর্তি নির্মাণ করেন। এরপরে ধীরে ধীরে আরববাসী এদের পূজা করা শুরু করে এবং কোরবানিও উৎসর্গ করতে শুরু করে।

মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) খালিদ (রা.)-কে উজ্জার মূর্তি ধ্বংসের জন্য নাখলার পাহাড়ে প্রেরণ করেন। প্রথমবার গিয়ে একটি গাছ ও ঘর ভেঙে ফিরে এলে রাসূল (সা.) বলেন, “তুমি যা ভেঙে এসেছো, তা আসল নয়। মূর্তি এখনো অক্ষত।”

পুনরায় সেখানে গিয়ে খালিদ (রা.) দেখতে পান—একটি কালো পোশাক পরা উলঙ্গ পেত্নী, যার চুল এলোমেলো। সে ধোঁয়া ছিটিয়ে খালিদ (রা.)-কে ভয় দেখাতে চায়। খালিদ (রা.) দেরি না করে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ পড়ে তরবারি চালিয়ে সেই পেতনিকে হত্যা করেন।

ফিরে এসে রাসূল (সা.) বলেন, “হ্যাঁ, সেই নারীই ছিল উজ্জা, যে বহু বছর ধরে মানুষকে পথভ্রষ্ট করত।”

এইভাবে আরবের দুটি বিখ্যাত মূর্তি—লাত ও উজ্জা চিরতরে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। মক্কার ভূমি মূর্তি থেকে পাক হয়ে যায়।

এই ইতিহাস থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট বোঝা যায়—যুগে যুগে নেককারদের প্রতি অতিরিক্ত ভক্তির কারণে তাদের মৃত্যুর পর মূর্তি বানানোর প্রবণতা শুরু হয়। আল্লাহর রাসূল (সা.) সতর্ক করেছিলেন, “তোমরা কখনো আমার কবরকে পূজার স্থান বানাবে না।”

আজও শয়তান মানুষকে সরাসরি মুশরিক বানাতে না পেরে অলিগলি পথে মাজার, কবর এবং অলিদের পূজা করে ফেলতে প্ররোচিত করে। তাই আমাদের উচিত—শিরকমুক্ত ঈমান বজায় রাখা।
              
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=-iOD4ZuXcyc&ab_channel=FahimRedwan            

নুসরাত

×