ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১

কেন কোরআন ২৩ বছরে নাজিল হলো?

প্রকাশিত: ০০:৪৫, ৩০ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০০:৪৬, ৩০ মার্চ ২০২৫

কেন কোরআন ২৩ বছরে নাজিল হলো?

ছবি: সংগৃহীত।

অনেক মানুষই ভাবেন, সর্বজ্ঞ আল্লাহ চাইলে মুহূর্তেই সম্পূর্ণ কোরআন নাযিল করতে পারতেন, তাহলে কেন এটি ধাপে ধাপে ২৩ বছরে নাযিল হলো? কোরআন নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে এবং বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এর গভীর তাৎপর্য রয়েছে।

আল্লাহ বলেন, "আর যারা অবিশ্বাস করেছিল, তারা বলেছিল, কেন কোরআন তার উপর একসাথে নাযিল করা হয়নি? এটি এভাবে (অংশবিশেষে) নাযিল করা হয়েছে, যাতে আমি তোমার হৃদয়কে দৃঢ় করি এবং আমি এটি ধীরে ধীরে নাযিল করেছি।" (সূরা আল-ফুরকান: ৩২)

এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোরআন ধাপে ধাপে নাযিলের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর অনুসারীদের মনোবল দৃঢ় করা। চিন্তা করুন, যদি কাউকে ২০ বছরের কর্মপরিকল্পনা একসাথে জানিয়ে দেওয়া হয়, তবে তা গ্রহণ করা কতটা কঠিন হবে! বাস্তবে তা মনে রাখা এবং কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সঠিক পথে থাকার জন্য সময়োপযোগী দিকনির্দেশনার প্রয়োজন হয়, যা আল্লাহ আমাদের জন্য নিশ্চিত করেছেন।

আল্লাহ আরও বলেন, "আমি কোরআনকে খণ্ড খণ্ড করে বিভক্ত করেছি, যাতে তুমি তা ধীরে ধীরে মানুষের কাছে পাঠ করতে পারো এবং আমি এটি ধীরে ধীরে নাযিল করেছি।" (সূরা আল-ইসরা: ১০৬)

বাস্তবিক তাৎপর্য
১. পরিস্থিতি অনুযায়ী নাযিল:
কোরআনের বিভিন্ন আয়াত তখনই নাযিল হতো, যখন কোনো পরিস্থিতির প্রয়োজন দেখা দিত। যেমন, সাইয়েদা খাওলা বিনতে সালাবার অভিযোগের পর সূরা আল-মুজাদিলা নাযিল হয়। উহুদের যুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে নবী (সা.) শহীদ হয়েছেন, তখন সাহাবিদের ধৈর্য ধরার জন্য আয়াত নাযিল হয়— "মুহাম্মাদ কেবল একজন রাসূল, তাঁর পূর্বেও অনেক রাসূল অতীত হয়ে গেছেন। তবে কি তিনি মারা গেলে বা নিহত হলে তোমরা তোমাদের পূর্বের পথে ফিরে যাবে?" (সূরা আলে ইমরান: ১৪৪)

২. ধাপে ধাপে শিক্ষা ও বাস্তবায়ন:
সাহাবিরা যখন কোনো আয়াত শুনতেন, তখন তা মুখস্থ করতেন, বুঝতেন এবং আমল করতেন। একসাথে পুরো কোরআন নাযিল হলে এভাবে শেখা সম্ভব হতো না। রাসূল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সে, যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।"

৩. মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন:
ইসলামের অনেক বিধান পর্যায়ক্রমে এসেছে। যেমন, মদ হারাম করার বিধান একবারে দেওয়া হয়নি। প্রথমে বলা হলো, এতে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি। পরে বলা হলো, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হারাম করা হলো।

৪. পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর ধারাবাহিকতা:
তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিলও একসাথে অবতীর্ণ হয়নি, বরং ধাপে ধাপে বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে এসেছে। কোরআনও সেই ধারাবাহিকতার অংশ। আল্লাহ বলেন, "তিনি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়ন করে।" (সূরা আলে ইমরান: ৩)

কোরআন ২৩ বছরে ধাপে ধাপে নাযিল হয়েছে, যাতে:

  • মানুষের হৃদয়কে দৃঢ় করা যায়।
  • বাস্তব জীবনের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া যায়।
  • শেখা, পালন করা ও মুখস্থ করা সহজ হয়।
  • বিধানসমূহ পর্যায়ক্রমে প্রযোজ্য হয়।
  • পূর্ববর্তী নবীদের শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।

আল্লাহ আমাদের কোরআন বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।          

নুসরাত

×