
সারাদেশে পালিত হয়েছে পবিত্র জুমাতুল বিদা
যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সারাদেশে পালিত হয়েছে পবিত্র জুমাতুল বিদা। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বড় জামাত অনুষ্ঠান হয়। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত করা হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনবাসীদের জন্যও আল্লাহর দরবারে দোয়া করা হয়। চোখের পানিতে আল্লাহর রহমত চাইলেন মুসল্লিরা। এর মাধ্যমে (জুমাতুল বিদা) কার্যত বিদায় জানানো হয়েছে পবিত্র মাহে রমজানকে।
শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জুমাতুল বিদাকে কেন্দ্র করে প্রখর রোদ উপেক্ষা করে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারাদেশে মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের ঢল নামে। উপচেপড়া ভিড়ের কারণে আজানের আগেই লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায় অধিকাংশ মসজিদ। এমনকি মসজিদে জায়গা না পেয়ে বাইরের সড়ক পর্যন্ত মানুষের উপস্থিতি ছড়িয়ে পড়ে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঢল নেমেছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের। ভেতর ও বাইরে ছড়িয়ে মূল সড়কে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। এ সময় সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নির্ধারিত সময়ের আগেই পরিপূর্ণ হয়ে যায় পুরো মসজিদ। খুতবার আগে নফল নামাজ, তসবি পাঠ, দোয়া এবং কুরআন তেলাওয়াত করে সময় পার করেন মুসল্লিরা।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমাতুল বিদা উপলক্ষে নামাজ-পূর্ব বয়ানে খতিব মুফতি আবদুল মালেক মাহে রমজান, শবে কদর, জুমাতুল বিদার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন। জাকাত ও ফিতরা আদায়ের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে উপস্থিত মুসল্লিদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন তিনি। জুমার নামাজ শেষে খতিব মুফতি আব্দুল মালেক যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনবাসীদের জন্যও আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন।
মোনাজাতে তিনি দেশ-জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করেন। নামাজ শেষে খতিব দেশ-জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে মোনাজাত করেন। এ সময় মুসল্লিদের আমিন-আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে যায় পুরো মসজিদ। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেক মুসল্লি।
এ ছাড়া রাজধানীর মগবাজার, লালবাগ, আজিমপুর, নিউ পল্টন, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, পান্থপথ, কলাবাগান, গ্রিন রোড, গুলশানসহ প্রায় সব এলাকার ছোট-বড় সব মসজিদেই ছিল মুসল্লিদের ভিড়। কোথাও-কোথাও মসজিদের ভেতরে মুসল্লিদের নামাজের জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় বাইরে মূল সড়কে নামাজ পড়তে দেখা গেছে। এতে অনেক স্থানে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, রমজান মাসের শেষ জুমার দিন মুসলিম বিশ্বে ‘জুমাতুল বিদা’ হিসেবে পালন করা হয়। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এই বিশেষ দিন পালিত হলো।
শবে কদরের রাতে ইবাদতে মশগুল মুসল্লিরা ॥ বরকতময় শবে কদরেই নাজিল হয়েছে পবিত্র কুরআন। পবিত্র এই রাতে আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকেন মুসল্লিরা। বিশেষ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হলো মুসলমানদের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ শবে কদর। এই রাত উপলক্ষে রাজধানীর মসজিদে-মসজিদে খতমে তারাবির নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে এশার আজানের পর থেকেই অন্যান্য দিনের তুলনায় মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় বেশি ছিল। অনেক এলাকায় মসজিদে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে উপচেপড়া ভিড় ছিল মুসল্লিদের। অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে নামাজ পড়তে এখানে আসেন।
শবে শব্দটি বাংলা ভাষায় এসেছে ফারসি থেকে। ফারসিতে শাব ও আরবিতে লাইলাতুল অর্থ রাত্রি বা রজনী। অন্যদিকে ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। লাইলাতুল কদরের নানা মহিমা কুরআন এবং হাদিসে বর্ণিত আছে। শবে কদর মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে ভাবমর্যাদাপূর্ণ রাত হিসেবে পালিত হয়।
হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে কেউ ইমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে সালাত আদায় করতে দাঁড়াবেন, তার আগের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
যদিও কুরআন এবং হাদিসে শবে কদরকে নির্দিষ্ট কোনো তারিখে বেঁধে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, রমজানের শেষ দশ দিন যে কোনো বেজোড় রাতই হতে পারে শবে কদর। তবে উপমহাদেশের অনেক আলেমের মতে, ২৭ রমজান রাতকে কদরের রাত বিবেচনা করে আলাদা মর্যাদায় পালন করা হয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশে যেসব মসজিদে খতমে তারাবি পড়ানো হয়, সেখানে সারা মাসে নামাজে পড়া কিরাতের মাধ্যমে কুরআন তেলাওয়াত খতম দেওয়া হয় কদরের রাতে। এতে করে একদিকে কুরআন খতম, অন্যদিকে কদরের রাত-দুই মর্যাদাই মুসলমানরা লাভ করতে পারেন।