ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৫ চৈত্র ১৪৩১

পবিত্র কোরআনে যে কুকুরের কথা ৪ বার এসেছে!

প্রকাশিত: ২২:০৭, ২৬ মার্চ ২০২৫

পবিত্র কোরআনে যে কুকুরের কথা ৪ বার এসেছে!

ছবি: সংগৃহীত।

পবিত্র কোরআনে কুকুরের উল্লেখ চারটি আয়াতে করা হয়েছে, যা মূলত সূরা কাহাফের আসহাবে কাহাফের ঘটনা সম্পর্কিত। ইসলামে সাধারণভাবে কুকুর পোষা সম্পর্কে কিছু বিধিনিষেধ থাকলেও, কোরআনে কুকুরটির উল্লেখ কেন গুরুত্বসহকারে করা হয়েছে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

সূরা কাহাফের আসহাবে কাহাফের ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, একদল যুবক এক অত্যাচারী শাসকের হাত থেকে বাঁচতে এবং আল্লাহর ইবাদত করতে একটি গুহায় আশ্রয় নেন। তাদের সাথে ছিল একটি কুকুর, যেটি গুহার মুখে তার পা প্রসারিত করে বসে থাকত। আল্লাহ তাদের বিশেষ সুরক্ষা দিয়েছিলেন, এবং তারা ৩০০ বছর ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। এই ঘটনাটি মানুষের জন্য একটি বিস্ময়কর নিদর্শন হয়ে দাঁড়ায়।

এখানে কুকুরটির ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, "তুমি মনে করবে তারা সজাগ, অথচ তারা ছিল ঘুমন্ত। আমি তাদের ডানে-বামে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম, আর তাদের কুকুরটি গুহার দরজার সামনে তার সামনের পা দুটি প্রসারিত করেছিল।" (সূরা কাহাফ, আয়াত ১৮)। কুকুরটি গুহার মুখে বসে থাকলে তা গুহার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক ছিল। এখানে কুকুরটি যেন একটি পাহারাদার হিসেবে কাজ করেছে, তার উপস্থিতি গুহার বাইরে শত্রুদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত ছিল।

কিছু মুফাসসির (ব্যাখ্যাকারী) এই কুকুরটিকে বাঘও মনে করেছেন, কারণ কোরআনে ব্যবহৃত আরবি শব্দ "কালপ" (কুকুরের পা প্রসারিত করা) বাঘের জন্যও ব্যবহার হয়। তবে, অধিকাংশ মুফাসসিররা একমত যে এটি ছিল একটি কুকুর।

এছাড়া, কুকুরটির উল্লেখ আসহাবে কাহাফের সংখ্যার আলোচনায় আরও তিনবার এসেছে। এখানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, "কিছু লোক বলবে তারা ছিল তিনজন, চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর, আর কিছু লোক বলবে তারা ছিল পাঁচজন, ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর।" (সূরা কাহাফ, আয়াত ২২)। এই আয়াতে কুকুরটির সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বিতর্ক এবং সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা এখানে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর কাছেই সঠিক সংখ্যা রয়েছে এবং মানুষকে এসব বিষয়ে বিতর্ক না করার উপদেশ দিয়েছেন।

এভাবে, কোরআনে কুকুরের উল্লেখের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের বুঝাতে চান যে, প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাণীও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কুকুরটি আসহাবে কাহাফের জন্য আল্লাহর এক বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করেছিল, এবং তার ভূমিকা ইসলামিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করেছে। কুকুরের মাধ্যমেও আল্লাহর মহান পরিকল্পনা এবং সুরক্ষা স্পষ্ট হয়েছে।

এছাড়া, এই ঘটনাটি কুকুরকে শুধুমাত্র একটি সাধারণ প্রাণী হিসেবে না দেখে, একটি মহান উদ্দেশ্যের অংশ হিসেবে দেখার আহ্বান জানায়, যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও সুরক্ষা মানুষের জন্য অবিকল আসে।

নুসরাত

×