
ছবি: সংগৃহীত
হযরত জাকারিয়া আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আল্লাহর একজন সম্মানিত নবী, যিনি বনী ইসরাইলদের জন্য আল্লাহর পথ প্রদর্শক ছিলেন। তিনি এক মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী, যিনি মানুষের মধ্যে একত্ববাদ ও সৎপথে চলার আহ্বান জানিয়ে গেছেন। আল্লাহ তাকে নবুয়তের পাশাপাশি বাইতুল মুকাদ্দাসের খাদেমের দায়িত্বও দিয়েছিলেন। কোরআন ও হাদিসে তাঁর জীবন ও নবুয়তের নানা দিক উঠে এসেছে, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুসরণীয়।
হযরত জাকারিয়া আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়ত ছিল মূলত বনী ইসরাইলদের হেদায়েতের জন্য। তিনি ছিলেন এক সৎ, খোদাভীরু এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা একজন ব্যক্তি। কোরআনে আল্লাহ বলেন, "আর জাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা ও ইলিয়াস তারা সবাই সৎকর্ম পরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত।" (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৩৩)
তিনি ছিলেন বিনয়ী ও ধৈর্যশীল। একবার, তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলেন, "হে আমার রব! আমাকে একা রেখে দিয়েন না, আর আপনি তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।" (সুরা আল আম্বিয়া, আয়াত ৮৯)
অলৌকিক দোয়া এবং ইয়াহিয়া আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম
হযরত জাকারিয়া আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ সময় ধরে নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি ও তার স্ত্রী উভয়ই ছিলেন বৃদ্ধ এবং সন্তান জন্মদান করতে অক্ষম। তবে তিনি কখনো আল্লাহর অনুগ্রহের আশা ছাড়েননি এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন যে, তিনি তাকে একটি সৎ ও নেক সন্তান দান করেন, যে নবুয়তের দায়িত্ব পালন করবে। কোরআনে তার দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে: "হে আমার রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে এক পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।" (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৩৮)
আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন এবং তাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দেন, যার নাম হবে ইয়াহিয়া। কোরআনে আল্লাহ বলেন, "হে জাকারিয়া, আমি তোমাকে এক পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, যার নাম হবে ইয়াহিয়া। আমি ইতিপূর্বে এ নামে কারো নাম রাখিনি।" (সুরা মারিয়াম, আয়াত 7)
এ ঘটনার পর, হযরত জাকারিয়া আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিস্মিত হন কারণ তিনি এবং তার স্ত্রী উভয়ই বৃদ্ধ ছিলেন। তবে আল্লাহ তাকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, আল্লাহর জন্য কিছুই অসম্ভব নয়। আল্লাহ তাকে একটি অলৌকিক নিদর্শন দেন: "তুমি তিন রাত ধরে মানুষের সাথে কথা বলতে সক্ষম হবে না, যদিও তুমি সুস্থ থাকবে।" এ সময় হযরত জাকারিয়া আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকেন এবং ইশারার মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।
ধৈর্য এবং আল্লাহর উপর আস্থা
হযরত জাকারিয়া আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ছিল কঠিন পরীক্ষা ও ধৈর্যের একটি উদাহরণ। তাঁর জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি যে, আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা ও ধৈর্য ধারণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বনী ইসরাইলের একদল পথভ্রষ্ট লোক তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, যা তাদের সীমাহীন অবাধ্যতার প্রমাণ ছিল।
হযরত জাকারিয়া আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়া কবুল হওয়ার ঘটনা আমাদের শেখায় যে, আল্লাহ তার বান্দার ডাক শোনেন এবং সঠিক সময়ে প্রার্থনার উত্তর দেন। তাঁর জীবন আমাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা, যে আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস ও ধৈর্যই সাফল্যের চাবিকাঠি।
হযরত জাকারিয়া আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ছিল এক মহান শিক্ষা। তার উদাহরণ আমাদেরকে শেখায় যে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ধৈর্য ধারণ করা, এবং আল্লাহর পথে অবিচল থাকা আমাদের জীবনের সফলতা ও শান্তির পথ।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=8bL1Dez2sDQ
আবীর