
ছবি: সংগৃহীত
মৃত সাগর পৃথিবীর সবচেয়ে অনন্য স্থানগুলোর একটি। এটি জর্ডান, ইসরায়েল, পশ্চিম তট এবং ফিলিস্তিনের মাঝে ১,৪১২ ফুট সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে অবস্থিত, এবং এর তট পৃথিবীর সর্বনিম্ন স্থল পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। মৃত সাগরের পানি অত্যন্ত লবণাক্ত, যার ফলে এখানে অধিকাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদ জীবন ধারণ করতে পারে না। তবে, এটি প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটকের কাছে একটি জনপ্রিয় স্পা এবং স্বাস্থ্য থেরাপি কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
মৃত সাগরের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
মৃত সাগর হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্রাম এবং চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইতিহাসে, হেরোড দ্য গ্রেটও এই পানির স্বাস্থ্য উপকারিতা গ্রহণ করেছিলেন। মৃত সাগরের পানি বিশেষ করে সাবান এবং প্রসাধনীর জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এখানে অনেক বিলাসবহুল স্পা তৈরি হয়েছে পর্যটকদের সেবা দিতে।
মৃত সাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থানও। ১৯৪০ এবং ৫০-এর দশকে, মৃত সাগরের উত্তর-পশ্চিম তটের কাছাকাছি গুহায় পাওয়া গিয়েছিল ডেড সি স্ক্রোলস, যা খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থ।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ
ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে, মৃত সাগর হল প্রাচীন শহর সোদোমের স্থান, যা নবী লুতের (লোক) শহর ছিল। কুরআনে সোদোমবাসীদের নৈতিক অবক্ষয় এবং ঈশ্বরের নির্দেশ অগ্রাহ্য করার কথা বর্ণিত হয়েছে। সোদোমবাসীরা ছিল পাপী এবং অশ্লীল কার্যকলাপের সাথে জড়িত। কুরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাদের কঠিন শাস্তি দিয়েছিলেন এবং শহরগুলো উল্টে দিয়ে সেগুলোর ওপর গরম তুষারপাথর বর্ষণ করেছিলেন (কুরআন ১১:৮২–৮৩)। আজ মৃত সাগর এই শাস্তির স্মারক হিসেবে রয়েছে।
মৃত সাগরের প্রতি মুসলিমদের অবজ্ঞা
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর অনুসারীদের এই স্থানে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "তোমরা তাদের স্থানগুলোতে যেও না, যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছিল, যতক্ষণ না তুমি কাঁদছো, নতুবা তোমরা তাদের শাস্তি ভোগ করতে পারো।" (সহীহ মুসলিম)
কুরআনেও উল্লেখ রয়েছে যে, এই শাস্তির স্থান একটি চিহ্ন হিসেবে রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ শিক্ষা নেয় (কুরআন ১৫:৭৫–৭৭)। এজন্য মুসলিমদের জন্য মৃত সাগর এলাকা পরিহার করা সুপারিশ করা হয়। যারা এই স্থান পরিদর্শন করেন, তাদের জন্য লুত নবীর শিক্ষা এবং তাঁর ন্যায়পরায়ণতা স্মরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
সংশ্লিষ্ট কুরআনি আয়াত:
"আর লুতকেও আমরা জ্ঞান ও হিদায়াত দিয়েছিলাম; এবং আমরা তাকে সেই শহর থেকে রক্ষা করেছিলাম, যা অশ্লীল কার্যকলাপের সাথে জড়িত ছিল। নিশ্চয় তারা ছিল পাপী, বিদ্রোহী জাতি।" (কুরআন ২১:৭৪–৭৫)
সূত্র: https://www.learnreligions.com/the-dead-sea-in-islamic-tradition-2004359
আবীর