ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

জ্বিন, পশু-পাখি ও বাতাস নিয়ন্ত্রণ করতেন যে নবী

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ২৪ মার্চ ২০২৫

জ্বিন, পশু-পাখি ও বাতাস নিয়ন্ত্রণ করতেন যে নবী

ছবি: সংগৃহীত

হযরত সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নবী যিনি দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছেলে। আল্লাহ তাকে নবুয়তের পাশাপাশি এক বিস্ময়কর রাজত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন জ্ঞানী, ন্যায়পরায়ণ এবং অলৌকিক শক্তির অধিকারী। যার মধ্যে ছিল জ্বিন, পশুপাখি ও বাতাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা। কোরআন ও হাদিসে তার জীবন ও কর্মকাণ্ডের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হয়েছে যা আমাদের জন্য এক অনন্য শিক্ষার উৎস।

আল্লাহ হযরত সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবুয়ত দান করেছিলেন এবং তাকে অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেন। কোরআনে বলা হয়, "আমি দাউদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করেছিলাম।" তার জ্ঞান এতটাই বিস্তৃত ছিল যে তিনি মানবজাতি পশুপাখি এমনকি জ্বিনদের ভাষাও বুঝতে পারতেন। এ বিশেষ গুণ সম্পর্কে কোরআনে বলা আছে, "হে মানুষ, আমাকে পাখিদের ভাষা শেখানো হয়েছে এবং আমাকে সবকিছুই দান করা হয়েছে।"

আল্লাহর এক বিশেষ উপহার ছিল যে হযরত সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে জ্বিনেরা কাজ করতো এবং তিনি বাতাসকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, "আমি সুলাইমানের অধীনে বাতাসকে করে দিয়েছিলাম, যা তার নির্দেশেই বইতো।" এছাড়াও জ্বিনেরা তার জন্য বিশাল প্রাসাদ, ভবন, পানির নিচে ডুব দিয়ে মুক্তা আরোহণ এবং অন্যান্য শ্রমসাধ্য কাজ করতো।

সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন এক অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ বিচারক। কোরআনে এমন একটি ঘটনা উল্লেখ রয়েছে যেখানে দুইটি নারী একটি শিশুর দাবি করছিল। তার বিচক্ষণতার মাধ্যমে তিনি সত্য উদ্ঘাটন করেন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেন। এ প্রসঙ্গে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে হযরত সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হযরত দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিচার নীতি ছিল মহান এবং তা অনুসরণযোগ্য।

সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন সম্পর্কে কোরআনে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো শিবার রাণী বিলকিসের ইসলাম গ্রহণ। তিনি শুনেছিলেন যে শিবার রাজ্যের লোকেরা সূর্যপূজা করতো, যা ছিল শিরক। তিনি রাণী বিলকিসের কাছে দূত পাঠিয়ে তাকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানান। সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ক্ষমতা প্রমাণের জন্য এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটান। ইফ্রিত জ্বিনের সাহায্যে তিনি এক মুহূর্তের মধ্যে রাণী বিলকিসের বিশাল সিংহাসন তার দরবারে নিয়ে আসেন। অবশেষে রাণী বিলকিস হযরত সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রজ্ঞা, অলৌকিক ক্ষমতা ও সত্য ধর্মের মহিমা দেখে ইসলাম কবুল করেন।

সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রতি অত্যন্ত অনুগত ছিলেন। তিনি দুনিয়ার ক্ষমতার মোহে পড়েননি বরং সর্বদা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন। কোরআনে তার একটি বিখ্যাত দোয়া এসেছে যেখানে তিনি আল্লাহর কাছে অনুরোধ করেছিলেন, "হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করো এবং আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করো যা আমার পরে অন্য আর কারো জন্য উপযুক্ত হবে না।"

সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু ছিল এক রহস্যময় ঘটনা। তিনি একদিন লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আর তার সামনে জ্বিনেরা কাজ করছিল। যখন তিনি ইন্তেকাল করেন তখন তার দেহ দাঁড়িয়েছিল। অনেকদিন পর একটি পোকা তার লাঠি কেটে ফেলে এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন জ্বিনেরা বুঝতে পারে যে তারা অদৃশ্য জগত সম্পর্কে কিছুই জানতো না। কোরআনে বলা হয়েছে, "তার মৃত্যুর আদেশ জারি হলে কোন কিছুই তাদের মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করেনি। কিন্তু তার লাঠি যখন পোকায় খেয়ে ফেলল, তখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন।"

সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একজন অনন্য নবী ও রাজা যার জীবন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাবহন করে। তিনি শিখিয়েছেন যে জ্ঞান, ন্যায়বিচার ও আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রকৃত সফলতা অর্জন করা যায়।


সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=8jN5KQ4tLAQ

আবীর

×