ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

যাবুর কিতাব নাজিল হয়েছিল যে নবীর কাছে

প্রকাশিত: ১৬:১৬, ২৩ মার্চ ২০২৫

যাবুর কিতাব নাজিল হয়েছিল যে নবীর কাছে

ছবি: সংগৃহীত

হযরত দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আল্লাহ তা'আলার একজন প্রিয় বান্দা, নবী এবং ন্যায়পরায়ন শাসক। তাঁর জীবন, নবুয়ত, শাসন এবং আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য কুরআন ও হাদিসে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। তিনি শুধু একজন নবী ছিলেন না, বরং ছিলেন শক্তিশালী রাজা এবং সুবিচারক।

হযরত দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়ত ও রাজত্ব ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার। আল্লাহ তাকে অগণিত জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং শক্তি দান করেছিলেন যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল। কুরআনে আল্লাহ বলেন, "আমি দাউদকে আকাশ ও পৃথিবীর জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং তাকে একটি সুদৃঢ় রাজ্য দান করেছিলাম।" তিনি দাউদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং তাঁর শাসন ছিল ন্যায়বিচার ও আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী। দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন এক আদর্শ শাসক, যিনি তার প্রজাদের প্রতি দয়ালু ছিলেন এবং সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতেন।

হযরত দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ একটি বিশেষ আসমানি গ্রন্থ, যাবুর, দিয়েছিলেন যা তার জাতির জন্য ছিল আলোর দিশারী। কুরআনে আল্লাহ বলেন, "আর আমি দাউদকে যাবুর দান করেছিলাম।" যাবুর ছিল চারটি প্রধান আসমানি কিতাবের মধ্যে একটি। তিনি অত্যন্ত সুন্দর কন্ঠে যাবুর তিলাওয়াত করতেন, যার ফলে মানুষ, পশুপাখি এবং পাহাড়ও তার তিলাওয়াতে মুগ্ধ হত।

আল্লাহ তাকে অলৌকিক ক্ষমতা দান করেছিলেন, এর মধ্যে অন্যতম ছিল লোহার নমনীয়তা। কুরআনে উল্লেখ আছে, "আর আমি লোহাকে দাউদের জন্য নমনীয় করে দিয়েছিলাম।" এই ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি নিজে যুদ্ধের সরঞ্জাম তৈরি করতেন এবং অন্যদেরও এই কাজ শেখাতেন। তার বিচারের সুনাম এতটাই ব্যাপক ছিল যে, মানুষ ন্যায়বিচারের জন্য তার কাছে আসত। একবার দুটি ব্যক্তি তার কাছে একটি বিতর্ক নিয়ে আসলে, আল্লাহ তাকে বিশেষ প্রজ্ঞা দান করেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি সঠিক বিচার প্রদান করেছিলেন।

হযরত দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আল্লাহর একজন নিবেদিত উপাসক। তিনি সারাদিন আল্লাহর ইবাদত করতেন এবং বিশেষভাবে রোজা রাখতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোজা হলো দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লামের রোজা। তিনি একদিন রোজা রাখতেন এবং একদিন বিরতি দিতেন।" তার এই আত্মসংযম এবং ইবাদত ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

হযরত দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিশোর বয়সে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। রাজা তালুতের নেতৃত্বে বনী ইসরাইলের সেনা জালুতের বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়। জালুত ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী, তবে আল্লাহর অনুগ্রহে তরুণ দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাই তাকে পরাজিত করেন। তিনি একটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করে জালুতকে হত্যা করেন এবং এভাবে বনী ইসরাইলের মুক্তির পথ সুগম করেন।

হযরত দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ছিল সত্য, ন্যায় এবং আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্যের এক অনন্য উদাহরণ। তার চরিত্র এবং কর্ম আজও আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হিসেবে রয়েছে।


সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=5A3LbvmFcGc

আবীর

×