ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১

কবরের আজাবের চিৎকার মানুষ কেন শুনতে পায় না? বিজ্ঞান ও ইসলামের ব্যাখ্য

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২২ মার্চ ২০২৫

কবরের আজাবের চিৎকার মানুষ কেন শুনতে পায় না? বিজ্ঞান ও ইসলামের ব্যাখ্য

ছবিঃ সংগৃহীত

মানুষ মারা গেলে তাকে কবরস্থ করা হয়। কবরজীবন শুরু হয় মৃত্যু থেকে এবং চলতে থাকে কেয়ামত পর্যন্ত। ইসলামের দৃষ্টিতে, কবরজীবন কারো জন্য হবে জান্নাতের একটি অংশ, আবার কারো জন্য জাহান্নামের কঠিন শাস্তির স্থান। কবরের শাস্তি সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদিসে বহু দলিল রয়েছে।

তবে অনেকেই প্রশ্ন করেন— যদি কবরের আজাব সত্য হয়, তাহলে মৃতদের চিৎকারের শব্দ আমরা শুনতে পাই না কেন? আজ আমরা এই প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করব ইসলাম ও বিজ্ঞানের আলোকে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে—
“আমি মুনাফিকদের দু’বার শাস্তি দেব, অতঃপর পরকালেও তারা মহাশাস্তির দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা আত-তাওবা: ১০১)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কবর হবে জান্নাতের বাগান অথবা জাহান্নামের গর্ত।” (তিরমিজি: ২৪৬০)

হাদিসের বর্ণনায় কবরের শাস্তির বিভিন্ন ধরন উঠে এসেছে—

✅ কবরের চাপ
✅ লোহার হাতুড়ি দিয়ে আঘাত
✅ বিষাক্ত পোকামাকড়ের দংশন

কবরের আজাবের চিৎকার মানুষ কেন শুনতে পায় না?

হাদিসে বর্ণিত আছে, কাফের বা মুশরিক ব্যক্তি যখন কবরের শাস্তি ভোগ করে, তখন সে বিকট চিৎকার করে ওঠে। কিন্তু মানুষ কেন সেই আওয়াজ শুনতে পায় না?

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“নিশ্চয়ই এই উম্মতকে কবরের শাস্তি শোনানো হলে, তোমরা ভয়ে মৃতদের দাফন করতে পারবে না।” (মুসলিম: ২৮৬৭)

তবে মানুষ ও জিন ছাড়া অন্যান্য প্রাণীরা কবরের আজাব শুনতে পায়। একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) খচ্চরের ওপর চড়ে একটি কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ খচ্চরটি অস্থির হয়ে দৌড়াতে শুরু করল, কারণ সেখানে মৃতদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল।

কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, যদি প্রাণীরা কবরের আজাব শুনতে পায়, তাহলে কবরস্থানে পাখি বা অন্য প্রাণীগুলো কেন স্বাভাবিক আচরণ করে? এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে—

-হাদিসে শুধু বলা হয়েছে যে প্রাণীরা কবরের আজাব অনুভব করতে পারে, কিন্তু কতটুকু অনুভব করতে পারে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।
-কিছু প্রাণী পুরোপুরি বুঝতে পারে, আবার কিছু প্রাণী আংশিক অনুভব করে।

বিজ্ঞান কি বলে?

বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করলে, শব্দ হল এক ধরনের তরঙ্গ (Sound Wave), যা বাতাস বা অন্য কোনো মাধ্যমের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে।

-গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র কিছু বিশেষ ধরনের কম্পন অনুভব করতে পারে।
-মৃত্যুর পরও কিছু সময়ের জন্য মস্তিষ্কে স্নায়বিক কার্যকলাপ চালু থাকে, যা অনুভূতির অংশ হতে পারে।
-তবে, কবরের আজাব বোঝার জন্য মানুষের যে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণক্ষমতা দরকার, তা আমাদের দেহে নেই।

কবরের আজাব সত্য, যা কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। কিন্তু আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য এটি অদৃশ্য রেখেছেন, যেন তারা অন্ধভাবে নয়, বরং গায়েবের ওপর ঈমান আনে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, তাকে এই আজাব দেখতে ও শুনতে দেওয়ার ক্ষমতা দান করতে পারেন। তাই আমাদের উচিত দুনিয়ার জীবনে নেক আমল করা, যেন আমরা কবরের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্ত থাকতে পারি।

সূত্রঃ https://youtu.be/HaEE4RpSae0?si=JaISXimaHIQfptzy

ইমরান

×