
ছবি: সংগৃহীত
ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত রাত হলো লাইলাতুল কদর। এটি রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রাতের বিশেষত্ব, ফজিলত এবং নবীজি (সা.)-এর বর্ণিত লক্ষণ নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে এক বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। হাদিসের আলোকে লাইলাতুল কদরের স্পষ্ট লক্ষণগুলো কী, তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত
কুরআনে বলা হয়েছে—
"নিশ্চয়ই আমি কদর রাতে কুরআন অবতীর্ণ করেছি। আর তুমি কি জানো, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল আ.) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব কাজে অবতরণ করেন। এটা শান্তিতে পরিপূর্ণ রাত, যা ফজরের طلوع পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।" (সূরা আল-কদর: ১-৫)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, লাইলাতুল কদর এক বিশেষ রহমতের রাত, যা মুসলমানদের জন্য ক্ষমা ও কল্যাণের দুয়ার খুলে দেয়।
নবীজি (সা.)-এর বর্ণনায় লাইলাতুল কদরের লক্ষণ
হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় লাইলাতুল কদরের কিছু স্পষ্ট লক্ষণের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা দ্বারা মুসলমানরা এই রাতকে চিনতে পারে।
১. আবহাওয়া শান্ত ও মনোরম হয়
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"লাইলাতুল কদর শান্ত, প্রশান্তিময় এবং উজ্জ্বল রাত। সে রাতে গরম বা শীত বেশি হয় না। সকালবেলা সূর্য কোমল ও আলোহীনভাবে উদিত হয়।" (ইবনু খুজাইমাহ: ২১৯২)
অর্থাৎ, লাইলাতুল কদরের রাতে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয় না, বাতাস হয় মৃদুমন্দ, আবহাওয়া থাকে শান্ত।
২. সূর্যোদয়ের সময় সূর্যের তেজ কম থাকে
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"লাইলাতুল কদরের সকালবেলা সূর্য কিরণবিহীন কোমল আলো নিয়ে উদিত হয়, যেন এটি একটি থালার মতো।" (সহিহ মুসলিম: ৭৬২)
সাধারণত সূর্যোদয়ের সময় সূর্যের আলো উজ্জ্বল ও তীব্র থাকে, কিন্তু লাইলাতুল কদরের পরের দিন সূর্যের আলো থাকবে ম্লান এবং সরাসরি চোখে তাকালেও তেমন অস্বস্তি হবে না।
৩. আকাশ থাকবে পরিষ্কার ও শান্তিপূর্ণ
হাদিসে এসেছে, লাইলাতুল কদরের রাতে কোনো মেঘ, ঝড়-বৃষ্টি বা বজ্রপাত দেখা যায় না। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন:
"লাইলাতুল কদর হবে এক শান্তিপূর্ণ রাত, সে রাতে বাতাস থাকবে স্বাভাবিক ও ঠাণ্ডা, আকাশ পরিষ্কার থাকবে এবং কোনো মেঘ থাকবে না।"
৪. ফেরেশতারা দলে দলে অবতরণ করেন
লাইলাতুল কদরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এ রাতে ফেরেশতারা নেমে আসেন এবং মুমিনদের জন্য রহমতের দুয়ার খুলে দেন।
"সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল আ.) তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতরণ করেন।" (সূরা আল-কদর: ৪)
অর্থাৎ, এই রাতে দোয়া কবুল হয়, গুনাহগাররা তওবা করলে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন।
লাইলাতুল কদরের ইবাদত
নবীজি (সা.) লাইলাতুল কদরের রাতে বেশি বেশি ইবাদত করতে উৎসাহিত করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন:
"হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি জানতে পারি যে এটি লাইলাতুল কদর, তাহলে আমি কী দোয়া করব?"
তখন তিনি বলেন:
"اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني"
"হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো, আমাকে ক্ষমা করে দাও।" (তিরমিজি: ৩৫১৩)
আসিফ