
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস। এই মাসের শেষ দশক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কেননা এসময়ই ইতেকাফের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ তৈরি হয়। সময়ের বিশেষ আয়োজন “হৃদয়ে রমজান” অনুষ্ঠানে মুফতি আব্দুল্লাহ তামিম আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছেন এবং রমজানজুড়ে প্রতিদিন ক্ষমা প্রার্থনার গুরুত্ব তুলে ধরবেন।
ইতেকাফের তাৎপর্য
আরবি শব্দ “ইতিকাফ” অর্থ অবস্থান করা। ইসলামী পরিভাষায় এটি বলতে বোঝায়, পাক-পবিত্র অবস্থায় নিয়তসহ মসজিদে নিরবচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করা। ইতেকাফ পালনকারী ব্যক্তি পার্থিব ব্যস্ততা পরিহার করে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদে সময় অতিবাহিত করেন। তাকে “মুতাকিফ” বলা হয়।
ইতেকাফের প্রকারভেদ
ইতেকাফ তিন প্রকারের হয়ে থাকে:
ওয়াজিব ইতেকাফ – মানত করলে পালন করতে হয়।
সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতেকাফ – রমজানের শেষ দশকের সুন্নত ইতেকাফ।
নফল ইতেকাফ – ইচ্ছাকৃতভাবে যেকোনো সময় পালন করা যায়।
রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফ
রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফ সুন্নতে কিফায়া হিসেবে গণ্য হয়। অর্থাৎ এলাকার অন্তত একজন ব্যক্তি এটি পালন করলে সকলের দায়িত্ব আদায় হবে, নতুবা পুরো এলাকা গুনাহগার হবে।
হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি বছর শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। জীবনের শেষ বছরে তিনি ২০ দিন ইতেকাফ করেছিলেন (বুখারি, মুসলিম)। ইতেকাফরত অবস্থায় মুতাকিফ দুনিয়ার সবকিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে কেবল আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকেন।
ইতেকাফের ফজিলত
হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতেকাফ করে, আল্লাহ তার ও জাহান্নামের মাঝে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন।” (তাবারানি)
এছাড়াও, হাদিসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করে, সে দুই হজ ও দুই ওমরার সমান সওয়াব লাভ করে।” (বায়হাকি)
শবে কদর পাওয়ার সুযোগ
রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য শবে কদর লাভ করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথমে রমজানের মাঝের দশকে ইতেকাফ করতেন, পরে ওহীর মাধ্যমে জানানো হয় যে, শবে কদর শেষ দশকে অবস্থিত। তাই তিনি বলেন, “তোমাদের কেউ যদি ইতেকাফ করতে চায়, তবে যেন শেষ দশকে করে।” (বুখারি)
নারীদের জন্য ইতেকাফ
নারীরা নিজেদের ঘরে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে ইতেকাফ পালন করতে পারেন। এটি তাদের জন্য মুস্তাহাব।
ইতেকাফের শর্ত
শুদ্ধ নিয়ত করা
জামাত অনুষ্ঠিত হয় এমন মসজিদে অবস্থান করা
রোজাদার হওয়া
হায়েজ ও নেফাস থেকে মুক্ত থাকা (নারীদের ক্ষেত্রে)
দুনিয়াবি কাজকর্ম পরিহার করা
ইতেকাফের উদ্দেশ্য
ইতেকাফের মূল লক্ষ্য আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে নিবেদিত করা এবং দুনিয়ার ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে ইবাদত করা। বিশেষত লাইলাতুল কদর পাওয়ার সুযোগ তৈরি করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতি বছর ইতেকাফ করতেন, যা মুসলমানদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা।
সুপ্রিয় দর্শক-শ্রোতা, রমজানের শেষ দশকের এই মহিমান্বিত আমল থেকে আমরা যেন বঞ্চিত না হই। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইতেকাফ পালনের তৌফিক দান করুন।
সূত্র : https://www.youtube.com/watch?v=h2MboJ4O0Bw
রাজু