
ছবি:সংগৃহীত
অনেক মানুষের মধ্যে একটি ধারণা প্রচলিত যে রমজান মাসে কবরের আযাব মাফ করে দেওয়া হয়। এমনকি কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, যদি কোনো ব্যক্তির দাফন করার পর জুমার দিন বা রমজান মাস আসে, তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত তার কবরের আযাব মাফ হয়ে যায়। কিন্তু ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এই ধারণাগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কোরআন ও হাদিসে এ ধরনের কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
কবরের আযাব হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টি সরাসরি ব্যক্তির ঈমান, আমল ও আল্লাহর রহমতের ওপর নির্ভরশীল। রমজান মাসে কবরের আযাব বন্ধ হয়ে যায় বা মাফ হয়ে যায়—এমন কোনো সহিহ হাদিস বা কোরআনের আয়াত নেই। তাই এই ধারণা ইসলামী শরীয়ত দ্বারা সমর্থিত নয়।
যদিও রমজান মাসে কবরের আযাব মাফ হওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন, তবে রোজা রাখা অবস্থায় ইন্তেকাল করলে তার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখে এবং এই রোজা তার জীবনের শেষ আমল হয় (অর্থাৎ রোজা রাখা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়), তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২৩২৪; আল-আসমা ওয়াস সিফাত, বায়হাকি, হাদিস নং ৬৫১; মাজমাউজ জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৩৫)।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রোজা রাখা অবস্থায় মৃত্যু হলে আল্লাহর বিশেষ রহমতের আশা করা যায়। তবে এটি শুধু রমজানের রোজার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, বরং যে কোনো নফল রোজার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা বিশেষ রহমত ও মাগফিরাতের দরজা খুলে দেন। একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রমজান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান ও দুষ্ট জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকেন, "হে কল্যাণের প্রত্যাশী, অগ্রসর হও! হে অকল্যাণের প্রত্যাশী, ক্ষান্ত হও!" (সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস নং ১৬৪২; সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং ১৮৮৩; মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস নং ১৫৩২)।
এই হাদিস থেকে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে যে, রমজান মাসে কবরের আযাবও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হাদিসে সরাসরি এমন কোনো কথা উল্লেখ নেই। বরং হাদিসটি শুধু জাহান্নামের দরজা বন্ধ হওয়া এবং জান্নাতের দরজা খোলার বিষয়টি বর্ণনা করে।
ইসলামের শিক্ষা হলো, কবরের আযাব থেকে বাঁচতে আমাদের অবশ্যই গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে এবং নেক আমল করতে হবে। রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগি ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। কবরের আযাব থেকে মুক্তি পেতে ঈমানদার জীবনযাপন, নামাজ, রোজা, জাকাত ও অন্যান্য ফরজ ইবাদত পালন করা জরুরি।
রমজান মাসে কবরের আযাব মাফ হয়ে যায়—এ ধারণা ইসলামী শরীয়ত দ্বারা সমর্থিত নয়। কবরের আযাবের সাথে রমজান মাসের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে রমজান মাসে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, তাই এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত ও তাওবা করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। রোজা রাখা অবস্থায় মৃত্যু হলে বিশেষ ফজিলত রয়েছে, কিন্তু এটি শুধু রমজানের রোজার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের উচিত গুনাহ থেকে দূরে থাকা এবং নেক আমলের মাধ্যমে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করা।
আঁখি