
ছবি: সংগৃহীত
সামুদ জাতি শিল্প ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পৃথিবীতে অনন্য ছিল। আদ জাতির পর, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধি দিয়েছিলেন। কিন্তু যতটা তারা প্রযুক্তি ও জীবনযাত্রার মানে উন্নত হয়েছিল, মানবিকতা এবং নৈতিকতা ততটাই অধঃপতিত হয়েছিল। সমাজে পাপাচার, অবিচার এবং নৈতিক অবক্ষয়ের প্রবণতা ছিল। সমাজে ন্যায় বিচার ছিল না, এবং চরিত্রহীন লোকদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
হজরত সালেহ (আ.) যখন তাদের নৈতিক অবক্ষয় দূর করার জন্য দাওয়াত দিয়েছিলেন, তখন সাধারণ মানুষ সাড়া দিয়েছিল। কিন্তু সমাজে শক্তিশালী এবং অবিচারী নেতৃত্বের কারণে সামুদ জাতি আল্লাহর আজাবের শিকার হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা হজরত সালেহ (আ.) এবং তাঁর সঙ্গী ইমানদারদের রক্ষা করেছিলেন, কিন্তু বাকিরা গগনবিদারী আওয়াজ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে যায়। এক ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প এবং বজ্রপাতের শব্দে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং শেষপর্যন্ত তাদের মৃত্যু ঘটে।
সামুদ জাতির আবাসস্থল ছিল হিজর, যা বর্তমানে মদিনার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। এটি আল উলা শহরের কাছাকাছি এবং মদিনা থেকে তাবুক যাওয়ার পথে প্রধান সড়কের ওপর ছিল। রাসুল (সা.)-এর নির্দেশে এখানে কেউ অবস্থান করতেন না।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত সামুদ জাতি এবং তাদের ধ্বংসের সাথে পেট্রা শহরের সম্পর্ক নিয়ে বর্তমান গবেষণায় নতুন দৃষ্টিকোণ উন্মোচিত হচ্ছে। পেট্রা শহর, যা আধুনিক জর্ডানে অবস্থিত, তার স্থাপত্য এবং ধ্বংসের ধরন সামুদ জাতির কোরআনে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল পাচ্ছে। পেট্রা শহরটি প্রাচীন নাবাতীয় সভ্যতার অংশ ছিল এবং এটি লাল পাথরের মধ্যে খোদাই করা ছিল। ১৮১২ সালে ইউরোপীয় প্রত্নতাত্ত্বিকরা এটি পুনরায় আবিষ্কার করেন।
গবেষকরা মনে করেন যে, পেট্রা শহরের স্থাপত্য সামুদ জাতির কোরআনে বর্ণিত পদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে, কিছু বিতর্কও রয়েছে, যেমন সামুদ জাতির সময়কাল এবং পেট্রা শহরের ধ্বংসের কারণ সম্পর্কে। কোরআনে সামুদ জাতির ধ্বংসের কারণ আল্লাহর শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে পেট্রা শহরের ধ্বংসের কারণ হিসেবে ভূমিকম্প এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পেট্রা এবং সামুদ জাতির সম্পর্ক নিশ্চিত করার জন্য আরও প্রত্নতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় প্রমাণ সংগ্রহ করা প্রয়োজন। তবে কোরআনে ১৪০০ বছর আগে যে ধ্বংসের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তার সাথে সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলো মিল পাচ্ছে, যা কোরআনের সত্যতার প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শিহাব