
ছবি:সংগৃহীত
বিশ্বের কিছু দেশে রোজা রাখা অনেক কঠিন এবং কখনও কখনও তা অপরাধের শামিল হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে ইসলামবিরোধী নীতির কারণে এসব দেশে রোজা পালনকারীরা বিভিন্ন ধরনের সরকারি বিধিনিষেধ এবং সামাজিক চাপের সম্মুখীন হন।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমরা বসবাস করে, তবে সেখানে ইসলাম ধর্ম পালন অত্যন্ত কঠিন। সরকারি নিয়ন্ত্রণ এতটাই কড়া যে, সরকারি কর্মচারী, শিক্ষার্থী, ও শিক্ষকদের জন্য রোজা রাখা নিষিদ্ধ। এমনকি দোকানের কর্মচারীদের দিনের বেলায় খাবার বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়, যাতে রোজার প্রচলন কমানো যায়। পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তারা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেন, কেউ রোজা রেখেছে কিনা। চীন সরকার এ পদক্ষেপগুলোকে উগ্রপন্থী দমন হিসেবে উপস্থাপন করলেও, এটি আসলে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। উইঘুর মুসলিমদের দাবি, কিছু এলাকায় সরকার সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে রোজা পালন নিয়ন্ত্রণ করে। স্কুলে শিক্ষার্থীদের রোজা না রাখার জন্য খাবার সরবরাহ করা হয়, এবং শিক্ষকদেরও এটি নিশ্চিত করতে হয়।
উত্তর কোরিয়ায় কিম জন উনের শাসন ব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে, রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে হয়। তাই ইসলামসহ অন্য কোনো ধর্মীয় পালনও রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়। রোজা রাখাও সেখানে নিষিদ্ধ। যদি কেউ রোজা রাখে এবং ধরা পড়ে, তবে তাকে কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। ২০১০ সালের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ায় মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ৩০০০। তাই সেখানে রোজা রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
তাজিকিস্তানে, যদিও এটি একটি মুসলিম দেশ, তবে সরকার ধর্ম নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ সালের গৃহযুদ্ধের পর, সরকার ইসলাম ধর্মের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। প্রধানমন্ত্রী হিজাব ও নিকাবকে দেশের বৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হিসেবে মনে করেন এবং সেগুলো নিষিদ্ধ করেন। তাছাড়া, ১৮ বছরের কম বয়সীদের মসজিদে যাওয়া ও রোজা রাখা নিয়ে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
রাশিয়াতেও কিছু মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় রোজা রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। যদিও সরকারি পর্যায়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, তবুও কিছু এলাকায় এ নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এই পরিস্থিতিগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কোথাও রোজা পালন করতে গিয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতার কঠিন সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়তে হয়।
আঁখি