ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

দার্শনিকদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে সত্য হয়েছে কোরআনের বর্ণনা

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ১৬ মার্চ ২০২৫

দার্শনিকদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে সত্য হয়েছে কোরআনের বর্ণনা

ছবি: সংগৃহীত।

মহান আল্লাহ তাআলা যখন আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তখন এক অপূর্ব প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটে। এমন এক প্রক্রিয়া, যা পৃথিবীর প্রতিটি জীবের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এই পানি কিভাবে পৃথিবীতে প্রবাহিত হয় এবং কিভাবে তা জীবনচক্রের অংশ হয়ে থাকে?

প্লেটো আর অ্যারিস্টোটলের মতো প্রাচীনকালের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা যেখানে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ ছিলেন, সেখানে দেড় হাজার বছর আগের কোরআন পানির সাইকেল সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য দিয়ে রেখেছে। আজ আমরা কথা বলব পানির সাইক্লিক প্রক্রিয়া নিয়ে, বিজ্ঞানীরা যাকে 'ওয়াটার সার্কেল' বা পানিচক্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

দর্শক, কোরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে আসুন, জেনে নেই এই প্রক্রিয়া ঠিক কিভাবে কাজ করে। ইতিহাসের প্রাচীন দার্শনিকরা যখন পানি ও তার প্রবাহ সম্পর্কে তাদের ধারণা দিয়েছিলেন, তখন তাদের অধিকাংশই ভুল ধারণা পোষণ করেছিলেন। থ্যালিস অফ মাইলিটাস, প্লেটো এবং অ্যারিস্টোটল সকলেই তাদের সময়ের সবচেয়ে প্রজ্ঞাময় দার্শনিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পৃথিবীতে পানির প্রবাহ সম্পর্কে তারা ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করতেন।

থ্যালিস বলেছিলেন, মহাসাগরের পানি বাতাসের চাপের মাধ্যমে আকাশে ওঠে এবং এরপর তা মাটিতে ফিরে আসে। অন্যদিকে, প্লেটো বিশ্বাস করতেন পানি মহাসাগরে ফিরে যাওয়ার জন্য বিশাল এক ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়। আর অ্যারিস্টোটল ধারণা করেছিলেন, পৃথিবী থেকে ওঠা বাষ্প পাহাড়ের শীতল গর্তে ঘনিভূত হয়ে ভূগর্ভস্থ রদ এবং ঝর্ণার পানি তৈরি করে।

প্রাচীন দার্শনিকদের এমন ধারণাগুলো আজ আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হয়, কারণ আমরা জানি তাদের বিশ্লেষণ সঠিক ছিল না। তবে পানির চিরস্থায়ী চক্র এবং ভূগর্ভস্থ জলরাশির গঠন সম্পর্কে প্রথম সঠিক তথ্য দেন বার্নার্ড প্যালিসি ১৫৮০ সালে। তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি মাটিতে প্রবাহিত হয়ে সেখানেই জমা হয় এবং জমে থাকা পানি জলাশয় সৃষ্টি করে।

এছাড়া, ১৬ শতকের শেষ দিকে আর রেইমানিস, যিনি বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি 'এনসাইক্লোপিডিয়া ইউনিভার্সালিস'-এর পানি সম্পর্কিত তথ্যের লেখক, বলেন, পৃথিবীর প্রাকৃতিক পানি প্রবাহের পুরনো দার্শনিক ধারণাগুলো নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণের জন্য বহুদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। অবশেষে সমস্ত ভ্রান্ত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে ১৪ শতক আগে কোরআন সঠিক তথ্য প্রদান করেছে।

দর্শক, এবার আসুন দেখি পৃথিবীতে পানির প্রবাহ সম্পর্কে কোরআন কি তথ্য দিয়েছে:

এরশাদ হচ্ছে: "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, তুমি কি দেখোনি আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন? অতঃপর সে পানি জমিনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন। তারপর সেই পানি দিয়ে আল্লাহ বিভিন্ন ধরনের গাছপালা উৎপন্ন করেন।"

এই আয়াতে বলা হচ্ছে, বৃষ্টির পানি মাটিতে প্রবাহিত হয়ে মাটির নিচে জমা হয় এবং সেখান থেকেই নিচে চাপ সৃষ্টি করে ঝর্ণা বা পানি নির্গত হয়। এটি এমন একটি যুগান্তকারী তথ্য, যা আজকের বিজ্ঞানের আলোকে সুস্পষ্ট।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা হাইড্রোলজিক্যাল সাইকেল বা ওয়াটার সার্কেল নামে একটি তথ্য আবিষ্কার করেছেন, যেখানে তারা ব্যাখ্যা করেছেন একটি সুষম সাইক্লিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পৃথিবীতে পানির ধারা অব্যাহত থাকে। এই প্রক্রিয়ায় পাঁচটি ধাপ রয়েছে:

১. ইভাপোরেশন (বাষ্পীকরণ): প্রথম ধাপ হলো বাষ্পীকরণ, যেখানে সূর্যের তাপে সমুদ্র, নদী, হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়ের পানি আকাশে উঠে বাষ্পে পরিণত হয়।

২. কন্ডেনসেশন (ঘনত্ব বৃদ্ধি): বাষ্প যখন আকাশে উঠে যায়, তখন ঠান্ডা হতে হতে তা আবার ঘন হয়ে মেঘে পরিণত হয়।

৩. প্রেসিপিটেশন (বৃষ্টিপাত): তৃতীয় ধাপ হলো বৃষ্টিপাত, যখন মেঘে পানি একত্রিত হয়ে বেশি ভারী হয়ে ওঠে, তখন তা আকাশ থেকে বৃষ্টির মাধ্যমে পৃথিবীতে ফিরে আসে।

৪. রান অফ (প্রবাহ): বৃষ্টির পানি যখন পৃথিবীতে প্রবাহিত হয়, তখন এটি বিভিন্ন ঝর্ণা, নদী ও পুকুরে গিয়ে জমা হয় অথবা সমুদ্র, নদী বা রদের দিকে চলে যায়।

৫. ইনফিল্ট্রেশন (শোষণ): ওয়াটার সার্কেলের পঞ্চম ও শেষ ধাপ হলো শোষণ, যেখানে বৃষ্টির পানি মাটির নিচে প্রবাহিত হয় এবং ভূগর্ভস্থ স্তরে শোষিত হয়ে পানির স্তর গঠন করে। সেখান থেকেই ঝর্ণা, কূপ ও বিভিন্ন উপায়ে পানির উৎস হিসেবে কাজ করে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আজকের বিজ্ঞান যতটা সহজভাবে ওয়াটার সার্কেলের এই সূক্ষ প্রক্রিয়াটি বোঝাতে সক্ষম হয়েছে, তার অনেক আগেই কোরআন এ সম্পর্কে আমাদেরকে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের এমন বৈজ্ঞানিক তথ্য আমাদেরকে আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করতে এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে বারবার অনুপ্রাণিত করে।          

নুসরাত

×