ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

রমজানের সুফল পেতে ৩ শ্রেণির মানুষকে এড়িয়ে চলুন

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ১৬ মার্চ ২০২৫

রমজানের সুফল পেতে ৩ শ্রেণির মানুষকে এড়িয়ে চলুন

মহান আল্লাহ রমজান মাসকে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানে মহিমান্বিত করেছেন। এই মাসেই কোরআন নাজিল হয়েছে। রমজানের কথা কোরআনে উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন- شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। (সুরা বাকারা: ১৮৫)

রমজানের রোজা ও ইবাদতে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। আল্লাহ ‍গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (সহিহ বুখারি: ১৯০১) হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আদমসন্তানের প্রতিটি আমল তার জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। কেননা তা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব।' (সহিহ বুখারি: ১৯০৪)

তাই রমজান মাসকে অবহেলায় কাটানো অনুচিত এবং যথসম্ভব খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়। অন্তত তিন শ্রেণির মানুষের ব্যাপারে একটু বেশি সতর্কতা কাম্য। তাদের পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো।

১. গিবতকারী 
যারা মানুষের গিবত চর্চা করে তাদের থেকে দূরে থাকুন। পারলে তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্পূর্ণ কমিয়ে দিন। এতে মুখের পাশাপাশি কানের গুনাহও কমে যাবে। ফলে আপনার রমজান মাসটা সুন্দর হবে। গিবত করা ও শোনা দুটোই গুনাহের কাজ। দুটোতেই রমজানের ফজিলত নষ্ট হয়। রমজানে গিবত ও মিথ্যাচারের ভয়াবহতা সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন—‘রোজা হলো (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার) ঢাল, যে পর্যন্ত না তাকে বিদীর্ণ করা হয়। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ, কিভাবে রোজা বিদীর্ণ হয়ে যায়? নবী করিম (স.) বললেন, মিথ্যা বলার দ্বারা অথবা গিবত করার দ্বারা।’ (আলমুজামুল আওসাত, তাবারানি: ৭৮১০; নাসায়ি: ২২৩৫)

২. দুনিয়াবি ব্যস্ততা যাদের বেশি
যাদের চিন্তা-ভাবনা সবসময় দুনিয়াকেন্দ্রিক এবং দুনিয়া নিয়েই যারা ব্যস্ত থাকে, তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ করবেন না। এতে মন শক্ত হয়ে যেতে পারে। ফলে আল্লাহ ও পরকালের স্মরণ কমে যাবে। যা সবসময় ক্ষতিকর হলেও রমজান মাসে তার পরিমাণ বেশি। কারণ রহমত ও ক্ষমা লাভের মাসে আল্লাহর স্মরণবিমুখ হওয়া খুবই দুঃখজনক। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে— ‘যে ব্যক্তি তার সব চিন্তাকে একই চিন্তায় অর্থাৎ আখেরাতের চিন্তায় কেন্দ্রীভূত করেছে, আল্লাহ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অন্যদিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে, সে যেকোনো উন্মুক্ত মাঠে ধ্বংস হোক, তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না।’ (ইবনে মাজাহ: ২৫৭)

৩. যারা অযথা কথা বলে
অযথা কথা ও কাজ ইসলামি শিষ্টাচারের বিপরীত। মুমিন ব্যক্তি কখনও অযথা কথা ও কাজে সময় নষ্ট করতে পারে না। এই রমজানে কথা বলতে হলে কোরআনের সঙ্গে বলুন। কোরআন নাজিলের মাসে যত পারেন কোরআনকে সঙ্গী বানান। উঠতে বসতে জিকির, ইস্তেগফার ও দোয়া-দরুদ পড়ুন। এতে আজেবাজে কথা ও কাজের সুযোগ কমে যাবে। অযথা কথা ও কাজ নিয়ে কোরআন-হাদিসে অনেক সতর্কবাণী রয়েছে। জাহান্নামিদের যখন জিজ্ঞেস করা হবে, কোন বিষয়টি তোমাদের জাহান্নামে নিয়ে এলো? উত্তরে তারা বলবে- ‘আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না, আর আমরা অভাবগ্রস্থকে খাদ্য দান করতাম না এবং আমরা অনর্থক আলাপকারীদের সাথে বেহুদা আলাপে মগ্ন থাকতাম।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ৪৩-৪৫)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানের রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। খারাপ সঙ্গ থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সজিব

×